X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আরও বেশি অবদান রাখুন: রাষ্ট্রপতি

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:৪৬আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:৫১

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও  বেশি অবদান রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।


রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি মহান বিজয় দিবসের শুরুতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবো- আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেই সমৃদ্ধ আগামীর পথে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবময় দিন ।’ বিজয় দিবসের এই শুভক্ষণে তিনি দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা।  তবে তা একদিনে অর্জিত হয়নি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁরই আহ্বানে ও নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আজ বিনম্র চিত্তে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর অপরিসীম ত্যাগ ও আপসহীন নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বিজয়ের এই মহান দিনে আমি শ্রদ্ধা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁরা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন।’ তিনি বলেন, ‘জাতি তাঁদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।’
আবদুল হামিদ বাণীতে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে করণীয় বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ গত ৩০ অক্টোবর- ২০১৭ ইউনেস্কো ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে ‘বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ জন্য আমরা গর্বিত।
বিজয় যেমন আমাদের স্বকীয়তা দিয়েছে, তেমনি বিশ্বমানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে স্বাধীন জাতি হিসেবে, এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে সামরিক স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের উত্থান ঘটে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন শুরু করেন। দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্জিত হচ্ছে নানা সাফল্য।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। অচিরেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপিত হবে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এটি হবে এক নতুন দিগন্ত। আর্থ-সামাজিক বিভিন্নখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি আজ বিশ্ব দরবারে ‘রোল-মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই যে অর্জন, এর পেছনে রয়েছে এদেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের অসাধারণ মেধা-মনন, অক্লান্ত পরিশ্রম আর অদম্য মনোবল।’’ তিনি বলেন,‘আমাদের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তারাও আমাদের উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার।  সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সাফল্যের সঙ্গে অর্জন করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।’
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, জাতির পিতা ঘোষিত এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘চলতি বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতিত ও বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নিতান্ত মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আশ্রয়হীন এত মানুষের ভার বহন করা বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন। বাংলাদেশ এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী।’
তিনি এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মিয়ানমারসহ জাতিসংঘ এবং আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আরও অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।’ তিনি বলেন, ‘‘সরকার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। আমাদের বিপুল মানবসম্পদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সফল ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এ ‘ভিশন’ বাস্তবায়নে সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হোক, মহান বিজয় দিবসে- এ আমার প্রত্যাশা।’’

সূত্র: বাসস

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
সর্বাধিক পঠিত
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি