জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে অনশনরত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মুখে অবশেষে হাসি ফুটতে যাচ্ছে। এই শিক্ষকদের এমপিও দেওয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নতুন এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরে সংশোধিত এমপিও নীতিমালার খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে খসড়াটি চূড়ান্ত হয়ে আসার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন চাওয়া হবে। এরপর যাছাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করা হবে।
২০১৩ সাল থেকে এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) দাবি জানিয়ে আসছেন নন-এমপিও সরকারি শিক্ষকরা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে সর্বশেষ গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অমরণ অনশনের নামেন শিক্ষকরা। গত ২ জানুয়ারি তাদের আবারও আশ্বাস দেওয়ার জন্য উপস্থিত হন শিক্ষামন্ত্রী নিজে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা আস্থা না রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপরই এমপিও প্রত্যাশীদের বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘নতুন এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মাউশি থেকে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ পেলে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে তা যাচাই-বাছাই হবে। দেখা যাক কী হয়।’
এদিকে মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্র বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোর শিক্ষার্থীদের ফলাফল, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি বিষয় মূল্যায়ন করে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচন করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৯ সালের ১৬ জুন সর্বশেষ নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর আর কোনও উদ্যোগ ছিল না। বর্তমানে সারাদেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামছুল হুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই সরকার কাউকে নিরাশ করেন না। শিক্ষামন্ত্রী গত ২ জানুয়ারি অনশন ভাঙাতে গেলেন, সেখানে তিনি সরাসরি কথা দিলেন, তবুও শিক্ষকরা মানলেন না। ওইদিনই মন্ত্রী নির্দেশনা দিলেন তাদের বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করতে। সেভাবেই কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হুট করে তো কিছু করা যায় না। দেশের এতগুলো প্রতিষ্ঠান, সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের দরকার রয়েছে। নীতিমালা সংশোধন করার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এই বছরেই থোক বাজেট দেবে নাকি আগামী বাজেটে দেবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে এ কাজগুলোতো তো মুখের কথায় হয় না। নিজেদের ব্যয়ে এসব প্রতিষ্ঠান চালানোর কথা ছিল। তবুও তারা আজ জোর জবরদস্তি করছে। ফলে কিছু তো করার নেই। তাদের কষ্টও সরকারকে দেখতে হবে। কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীতে টানা আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত চারদিন ধরে তারা আমরণ অনশন পালন করছেন। আর টানা ৯ দিন ধরে চলছে তাদের অবস্থান। এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া এই অনশন তারা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- আমরণ অনশনে অসুস্থ ৯০, হাসপাতালে ভর্তি ৪