X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

যা থাকছে ডিএসসিসির হকার পুনর্বাসন প্রকল্পে

শাহেদ শফিক
১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৭:৫৯আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:১৩

হকার পুনর্বাসন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্পের আওতায় হকারদের বিদেশ পাঠানো, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া, ব্যবসার জন্য মোবাইল ভ্যান সরবরাহ, হলিডে মার্কেট স্থাপন ও সহজ সুবিধায় ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি। হকার্স ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, প্রকল্পে দুর্নীতি না হলে হকারদের সমস্যার সমাধান হবে।

যা থাকছে ডিএসসিসির হকার পুনর্বাসন প্রকল্পে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হকারদের পুনর্বাসনের জন্য গত ২৭ নভেম্বর স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠান ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল। প্রকল্পে ডিএসসিসির বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের জন্য ৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার কর্মসূচি অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে তা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে হকারদের ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া; হকারদের বিদেশ পাঠানো; জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া; ভ্যানগাড়ি সরবরাহ; হলিডে মার্কেট চালু ও হকার রেজিস্ট্রেশন এবং তাদের আইডি কার্ড দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয় প্রকল্পে।

যা থাকছে ডিএসসিসির হকার পুনর্বাসন প্রকল্পে ডিএসসিসি বলছে, হকাররা নির্ধারিত স্থানেই থাকবেন। তাদের ব্যবসা করতে দেওয়া ভ্যানগাড়ি রাখার জন্য আলাদা স্থানও দেওয়া হবে। ব্যবসা শেষে নির্দিষ্ট সময় পর তারা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে আবার ফিরে যাবেন। এক্ষেত্রে হকারদের কাছ থেকে কোনও ট্যাক্স নেওয়া হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রকল্প পাস হওয়ার পর। তবে অফিস চলাকালে হকাররা রাস্তায় থাকবে না।

এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে কম সুদে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি হকার ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রকল্পের টাকায় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণেরও প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। প্রকল্পের পুরো টাকা বিভিন্ন খাত থেকে জোগান দেবে মন্ত্রণালয়।

যা থাকছে ডিএসসিসির হকার পুনর্বাসন প্রকল্পে

হকারদের পুনর্বাসনের এই প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হকারদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প পাঠিয়েছি। সেখান থেকে প্রকল্পটি যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপর যাবে একনেকে। প্রকল্প পাস হলে এর মাধ্যমে হকারদের পুনর্বাসন করা হবে।’

ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হকারদের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হলেও নির্ধারিত নিয়মের মধ্যেই তাদের ব্যবসা করতে হবে। অফিস চলাকালে তারা রাস্তায় বসতে পারবেন না। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তারা রাস্তায় বসতে পারবেন। এছাড়া, আগ্রহীদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তাদের দক্ষতা তৈরি করে দিতে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মোবাইল ভ্যানসহ আরও কিছু উপকরণও দেওয়া হবে।’

যা থাকছে ডিএসসিসির হকার পুনর্বাসন প্রকল্পে প্রকল্প বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে প্রকল্পে যেন কোনও দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি না হলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে হকারদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’

যা থাকছে ডিএসসিসির হকার পুনর্বাসন প্রকল্পে তবে প্রকৃত হকাররা এসব প্রকল্পের উপকার ভোগ করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন অনেক হকারই। জানতে চাইলে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা সিটি করপোরেশনের অনেক কথাই শুনে আসছি। আমাদের তালিকা করা হয়েছে বলেও শুনেছি। কিন্তু আমি এর সম্পর্কে জানি না।’

গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, ‘গত ছয় বছর ধরে গুলিস্তানে হকারি করে আসছি। কিন্তু শেষ এক বছর ধরে ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয় না। ছুটির দিন আর রাতের বেলায় যা একটু বসতে পারি। প্রকল্প হলেও আমাদের লাভ নেই। আমরা হকাররা হকারই থেকে যাব। লাভ হবে নেতা আর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের।’

যা থাকছে ডিএসসিসির হকার পুনর্বাসন প্রকল্পে সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০০১ সালে ফুটপাত পরিচ্ছন্ন এবং উন্মুক্ত রাখতে বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্দেশ দেন। ২০১০ ও ২০১২ সালে সদরঘাট ও মৎস্য ভবন থেকে সেগুনবাগিচা এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতেও আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এছাড়া ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল ১৯৮২ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এও ফুটপাত দখলমুক্ত ও পথচারীদের হাঁটার উপযোগী রাখার কথা বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

হকার উচ্ছেদে ডিএসসিসি অভিযান চালানোর পাশাপাশি ফুটপাতকে হকারমুক্ত রাখতে নিয়োগ দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবক। এই উচ্ছেদের তীব্র বিরোধিতার পর হকাররা নিজেদের পুনর্বাসনের দাবিতে দফায় দফায় সভা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন হকাররা। পরে হকারদের বিদেশ পাঠানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা ডিএসসিসি বললেও প্রায় এক বছরে কোনও উদ্যোগই দৃশ্যমান হয়নি।

আরও পড়ুন:
ঋণের টাকা যাচ্ছে ব্যাংক পরিচালকদের পকেটে

/টিআর/আপ-এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন