X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমৃদ্ধির পথযাত্রায় উন্নত দেশগুলোকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:৩৯আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:০১

বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে) সমৃদ্ধির পথযাত্রায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এজন্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আসন্ন সমস্যার প্রতি আরও মনোযোগ দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগী দেশ ও সংস্থাসহ ব্যক্তি খাতের অংশীদারিত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওএফআইডি) মহাপরিচালক ও সিইও সুলেমান জাসির আল হার্বিশ, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই জ্যাং, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মহাপরিচালক মিনরু মসুজিমা ও রেনজি তেরিংকসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বৈদেশিক সম্পদ বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম। এসময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিএফ) একটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্ট যেখানে সরকার ও তার উন্নয়ন অংশীদারদের নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে আরও অংশীদারিত্বের সন্ধানে কাজ করে। এখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডাগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অংশীদারিত্ব বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন গবেষক, সুশীল সমাজের প্রাতনিধি, সরকারি নীতিনির্ধারক এবং সহযোগী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর নেতারা সমবেত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ইউএনসিডিপি’র ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা লাভ করবে। উত্তরণের পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমকক্ষ হবে। তবে এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে বেশকিছু সুবিধা ভোগ করে, যেগুলো গ্র্যাজুয়েশনের পর বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়ানো ও কর্মক্ষেত্রে প্রস্তুতির মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।’ বাংলাদেশ এর প্রভাব মোকাবিলায় কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বুকে একটি গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার প্রত্যয় ও উপকরণ আমাদের রয়েছে। আমি আশা করি, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের এই বৈঠক দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশকে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উৎপাদনশীলতাকে জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতাগুলো আংশিকভাবে পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষা ও দক্ষতার সঠিক ব্যবহারের ফলে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নসহ রেমিটেন্স বাড়বে এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।’ জেন্ডার বাজেট প্রণয়নে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে নেতৃস্থানীয় বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভাষণে দেশে দ্রুত নগরায়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে নেওয়া পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমও সরকার বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারি কমিশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করা হয়েছে।’
সরকারের বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত এক দশকে আমাদের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই হার ৭.২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে আমাদের রফতানি আয় ও বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় নয় গুণ বেড়ে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।’ তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ বছর হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দারিদ্র্র্যের হার ১৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেই আমাদের সরকার কাজ করছে।’ আন্তর্জাতিক আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ জিডিপি ও ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বের যথাক্রমে ২৮ ও ২৩তম অর্থনীতির দেশে হিসেবে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন রূপকল্প ও পরিকল্পনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সপ্তম, অষ্টম ও নবম— এই তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ বাস্তবায়ন করতে চাই। জাতিসংঘের ২০৩০ এজেন্ডা নির্ধারণের প্রাথমিক পর্যায়েই আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। এর ফলে বিশ্ব উন্নয়ন এজেন্ডা প্রণয়নে আমরা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছি। একইসঙ্গে আমাদের জাতীয় পরিকল্পনায় তার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকার নির্বাচনে ২০৩০ এজেন্ডা একটি নির্দেশনা হিসেবে কাজ করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই ফোরামে এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের লক্ষ্য ও কৌশল আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। এ বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত জানতে চাই। এ উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও বেসরকারি খাতসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’ সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া