রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় যে অব্যবস্থাপনা হয়েছে তাতে কেউ দ্বিমত পোষণ করছে না। কিন্তু এই অব্যবস্থাপনার কারণ খুঁজে তা নির্মূল করা এখন প্রধান কাজ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যে হেনস্থা এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য ‘টর্ট আইনে’ ক্ষতিপূরণ দাবি করার সুযোগ রয়েছে বলেও মনে করেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত ‘ব্যাংক কর্মকর্তা নিয়োগে জটিলতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকিতে এসব অভিমত ব্যক্ত করেছেন আলোচকরা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ‘সক্ষমতার পরিধি নিয়ে আরও বিস্তর আলোচনা হতে পারে। তিনবছর ধরে নিয়োগ হচ্ছে না, এটা পড়ালেখা করা ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে একপ্রকার প্রহসন। এই যে পরীক্ষা বাতিল হলো কারও যদি বয়স চলে যায় তাহলে তার কী হবে? এগুলা নিয়ে ভাবা উচিত বলে মনে করি। আগেরবার যারা আবেদন করেছে পরেরবার তারা আবেদন করতে পারবে কিনা এটাও নিশ্চিত করা দরকার। কারণ তাদের তো কোনও দোষ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব নিতে পারে এক্ষেত্রে।’
বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ব্যাংকে নিয়োগের এতো বড় একটা পরীক্ষা তার সঙ্গে নাকি আবার একটা ম্যানেজমেন্ট বিভাগ জড়িত। তার সঙ্গে আবার বিখ্যাত শিক্ষক মহিউদ্দিন স্যার যুক্ত। উনি যতই মেধাবী হোন, তাকে দিয়ে জাতি কোনও উপকার পাচ্ছে না। ব্যবসাটা কিন্তু হচ্ছে। এগুলো ব্যাপার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেখা উচিত। নিয়োগ পরীক্ষা তো আজকে হচ্ছে না, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে। একটা সমন্বিত পদ্ধতি তখন থেকেই চালু আছে। এটা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়ার মতো দায়িত্ব না।’
আমাদের সমস্যা হলো আমরা আইনের সহায়তা নেই না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘টর্ট আইন নামে একটা আইন আছে। আপনি আইনের সহায়তা নেন, প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে। আমরা এটা বুঝি না কিংবা এ ব্যাপারে জানি না। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, আমি এই চেয়ারে বসে আছি। এই চেয়ারটা যদি ভেঙে পরে তাহলে কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। এটা হলো আইন। এই ছাত্রদের আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো এটা কোনও কিছু না। তাদের যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হলো, তারা যে অর্থ খরচ করে আসছে এই ক্ষতিপূরণ অবশ্যই দিতে হবে। এটা এক ধরনের হয়রানি, এক ধরনের মানসিক চাপ। আমি এই পরীক্ষার্থীদের আহ্বান জানাবো আপনারা ভালো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন, আপনারা টর্ট আইনে যান। দেখেন ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কোথায় যায়। প্রত্যেককেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
অ্যাক্টিভিস্ট এবং এনজিও কর্মকর্তা শরীফুল হাসান বলেন, ‘ব্যক্তি কখনও দায় নেয় না, বিভাগ নেয়। এই যে ২ লাখ ছেলেমেয়ে সারা দেশ থেকে এলো, কষ্ট করলো পরীক্ষা দিলো। এই যে তাদের যে কষ্ট এই দায়িত্ব নেয়ার কি কিছু নাই? এই দায় কি কেউ নেবে না? তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা দেখবে সমস্যাটা কোথায় ছিল, তারা সেই অনুযায়ী সুপারিশ করবে এবং কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে যাতে ভবিষ্যতে এরকম আর না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয় বলি, এবার তো প্রথম হয়নি এমন। এরকম অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। সমাধানের বিষয় হলো আপনি পিএসসি পদ্ধতিতে যান। জেলাভিত্তিক পরীক্ষা নিন। বিএসসি কিন্তু থাকতে হবে, না হলে এই ব্যবস্থা চলে যাবে সিবিএ নেতাদের হাতে। বিএসসি রেখে চালানোর মতো যোগ্য লোক কি নেই? যেই লোকটা বারবার ভুল করছে তাকে বদলানো উচিত।’
বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক গোলাম মওলা বলেন, ‘এই কমিটি গঠন হওয়ার পরে একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোনও টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। ৩ লাখ ২৬ হাজার আবেদন করেছে। কিন্তু এক লাখের ওপরে শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র নিলেন না। টাইম ছিল কিন্তু ২৫দিন। যারা পরীক্ষা নেন তারাও চিন্তা করেন ৮০ শতাংশ কিংবা ৫০ শতাংশ পরীক্ষা দিবে। এই একটা কেন্দ্রে ঝামেলা হওয়ায় এই আলোচনায় বসছি আমরা। এর আগেও কমিটি নিয়ে কথা উঠেছে। এটা কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ করছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুয়া ওয়েবসাইট পর্যন্ত বানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ না কেউ বিএসসির এই উদ্যোগকে ভণ্ডুল করতে চায়। কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী প্রবেশপত্র না নিয়েই হয়তো প্ল্যানই করে আছে আন্দোলন করবো। তবে প্রথম দায় ওই কলেজের অধ্যক্ষকে, তার পরের দায় মহিউদ্দিন সাহেবদের অবশ্যই নিতে হবে। আর সিলেকশন কমিটির লোকদের তদারকির যথেষ্ট ঘাটতি ছিল।’
আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের মুখপাত্র অনন্য মাহবুব বলেন, ‘এটা বিএসসির কাজ। বিএসসি’কে ভাবতে হবে মেধার ভিত্তিতে কিভাবে নিয়োগ দেওয়া যায়। আমরাও সবার সঙ্গে একমত যে বিএসসি’র থাকতে হবে।’
মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এটিএন নিউজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এই গোলটেবিল বৈঠকি। এছাড়া বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও দেখা যায় অনুষ্ঠানটি।
- পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে: হারুন উর রশীদ
- ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির বিচার করা যায় কিনা দেখা উচিত’
- সমস্যা হচ্ছে পরীক্ষা কারা নিচ্ছে সেটা নিয়ে: মোহাম্মদ নুরুল আমিন
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কখনোই ভালো ব্যবস্থায় ছিল না: গোলাম মওলা
- ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির নেওয়া প্রতিটি পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা ছিল’