X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ জনজীবন, আইনের কাজ কী?

সাদ্দিফ অভি
২২ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:২৭আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৩:০০

হর্ন বাজানো নিষেধ শব্দ শ্রুতিমধুর তখনই হয়, যখন সীমার ভেতরে থেকে কানে অনুভূতি জাগায়। কিন্তু এই  শব্দই অস্বাভাবিকতায় পৌঁছালে কানের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে, মানসিক এবং শারীরিক ব্যত্যয় ঘটায়। প্রাপ্ত বয়স্কদের কানে পর্যাপ্ত আবরণ থাকায় শব্দ দূষণের আঘাত একটু সময় নিয়ে করলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এই আঘাত খুবই তীব্র। তবে দুটি ক্ষেত্রেই শব্দদূষণের প্রভাব ভয়াবহ। শব্দদুষণের মাত্রা গ্রামাঞ্চল থেকে শহরেই বেশি। যানবাহনের আধিপত্য, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিক  মাইকের ব্যবহার, সামাজিক অনুষ্ঠানে সাউন্ড সিস্টেমে উচ্চস্বরে গান বাজানো শব্দদূষণের অন্যতম কারণ।

ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে পরিমাণ গাড়ির চাপ থাকে, তা থেকে প্রচুর শব্দক্ষরণ হয়ে থাকে। দিনের কয়েকটি ভাগে এই ক্ষরণের শিকার হয় নগরবাসী। সকালে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার পথে, দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এবং বিকালে অফিস ছুটির পর শহরের মানুষগুলোর কানের পাশে তীব্র চাপের অনুভব হয়। আবার এর বাইরেও চাপ অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যদি রাস্তায় কোথাও সমাবেশ, কিংবা বাসার ছাদে  গানবাজনা করা হয়। সভা-সমাবেশেও ইদানিং লক্ষ্য করা যায়, অনুমোদিত মাইকের চেয়ে বেশি সংখ্যক মাইক ব্যবহার করতে।

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকা দিয়ে প্রতিদিন যারা যাতায়াত করেন,  শব্দদূষণের সঙ্গে তাদের  পরিচয় আছে। কারণ, এই জায়গায় প্রায় প্রতিদিনই কোনও  না কোনও সভা, সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে ব্যবহৃত হয় একাধিক মাইক। আবার প্রেসক্লাবের ভেতরেও বিভিন্ন সভা, সেমিনার, এমনকি রাজনৈতিক সভায় আলাদা সাউন্ড বক্সের ব্যবহার,  তাতে উচ্চস্বরে কথা বলা এবং এর সঙ্গে চার দেয়ালের ভেতরে উচ্চস্বরে রাজনৈতিক স্লোগানেও অতিরিক্ত মাত্রায় প্রভাব ফেলে কানের ওপর। রাস্তায় সভা সমাবেশে মাইক ব্যবহারের নির্দেশনা এবং অনুমতি দিয়ে থাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজেদের স্বার্থে অতিরিক্ত মাইক ব্যবহার করছেন সমাবেশের আয়োজকরা।

অন্যদিকে, রাজধানীর স্কুল, কলেজ কিংবা হাসপাতালের আশেপাশে হর্ন বাজানো নিষেধ থাকলেও তা মানে না অনেকেই। শব্দদূষণকে স্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদফতরের প্রচার-প্রচারণা থাকলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না কেউই। বরং স্কুল ছুটির সময় কিংবা হাসপাতাল এলাকায় যদি যানজট লেগে যায়, তাহলে মাত্রাতিরিক্ত হর্নের আওয়াজে পরিবেশ হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বসতি এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডিবি ও রাতে ৪৫ ডিবি হওয়া উচিত। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডিবি, রাতে ৫৫ ডিবি, শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডিবি, রাতে ৬৫ ডিবির মধ্যে শব্দমাত্রা থাকা উচিত। হাসপাতালের আশেপাশে, সাইলেন্ট জোন বা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ রাতে ৪০ ডিবি শব্দমাত্রা থাকা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া, যা থেকে মাত্রাতিরিক্ত শব্দ নির্গত হয় তা হলো - পটকা, বাজি (৯০-১২০ ডেসিবল), ডিজেল চালিত জেনারেটর (৮০ ডেসিবল), মিছিল, মিটিং এ স্লোগান, লাউড স্পিকার ও মাইকের মাধ্যমে (১১০ ডেসিবল), ঢোল (১০০ ডেসিবল)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ২৫, ২৭, ২৮ ধারা মতে— শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড উভয়েরই বিধান রয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০ নং ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ২০০৬ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইনের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী নীরব এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিনে ৫০ এবং রাতে ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫  এবং রাতে ৪৫ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫  ও রাতে ৭০ ডেসিবলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকা বাঞ্ছনীয়। এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়।  শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে আবাসিক এলাকায় শব্দের মান মাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রের ব্যবহার করা গেলেও রাজধানীজুড়ে নিত্যদিন অবাধে চলছে শব্দদূষণকারী যন্ত্রের ব্যবহার।    

পরিবেশবাদীদের শত চেষ্টায়ও এবং প্রচারণায় কোনও কাজে আসবে না, যদি না সরকারের স্বদিচ্ছা থাকে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ( বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন।  তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দেশে আইন আছে, তবে এর ব্যবহার নেই। তাহলে আইন তৈরি করা কিসের জন্য? সরকার যদি চায় অবশ্যই জনগণকে মোটিভেট করতে পারে। আমরা আন্দোলন করি, শুধু সরকারের কানে পৌঁছানোর জন্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সম্ভব হলে এদেশে কেন হবে না?  শুধুমাত্র উদ্যোগটা দরকার। আর এটা সরকার ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব না। ’ 

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. রইছউল আলম মণ্ডলের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

 

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্স, বের হচ্ছে না পুলিশের ভয়ে
পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্স, বের হচ্ছে না পুলিশের ভয়ে
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি