X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: সকালে ‘টার্গেট ফায়ার’ বিকালে বেধড়ক পিটুনি

উদিসা ইসলাম
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০২:০০আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৪৪

 

আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: সকালে ‘টার্গেট ফায়ার’ বিকালে বেধড়ক পিটুনি ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ‘মজিদ খানের শিক্ষানীতি’ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। ছাত্রসমাজ শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ডাক দেয় ছাত্র জমায়েতের। মিছিলের অগ্রভাগে মেয়েরা, ভয় শঙ্কাহীন। সেদিন মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা হাইকোর্ট এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। একসময় আকস্মিকভাবে রায়ট কার ঢুকিয়ে গরম পানি ছিটানো শুরু করে পুলিশ। এরপর লাঠিচার্জ ও নির্বিচারে গুলি। মিছিলে প্রথম গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল। এরপর একে একে জাফর, কাঞ্চন, দীপালী সাহাসহ নাম না জানা আরও অনেকে।

সেই মিছিলের সংগঠক কর্মীরা বলছেন, সকালে মিছিলে গুলি করা হয়েছিল টার্গেট করে, আর বিকালে কলাভবনে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়েছিল বেধড়ক। সহপাঠীদের লাশ যেমন পাননি তারা, কতজন শহীদ হয়েছিল সেদিন; সে হিসাবও নেই তাদের কাছে। আছে কেবল দিনটিকে এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে না পারার খেদ। তারা এও বলছেন, ভালোবাসা দিবস তখন ছিল না, এখন আছে, থাকুক। তাই বলে গণতন্ত্রের জন্য যারা এদিন শহীদ হয়েছিলেন তাদের কথা স্মরণই করব না, তা হয় কী করে।

স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস কেন গুরুত্বপূর্ণ? এমন প্রশ্নে সে সময় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, একটা গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে এ জায়গায় আসতে পেরেছি তাদের স্মরণ করা উচিত।

আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: সকালে ‘টার্গেট ফায়ার’ বিকালে বেধড়ক পিটুনি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সময়ের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী লায়লা আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্ররা মিলে মিছিল নিয়ে গিয়ে মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে শ্বেতপত্র দিবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নানা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যোগ দেয়। মিছিলের সামনেই ছিলেন মেয়েরা। সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি কার্জন হলের সামনে পৌঁছালে পুলিশ-বিডিআর মিলে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশ কোনও উস্কানি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপর টার্গেট ফায়ার করলো। প্রথমে টিয়ার গ্যাস আর জলকামান ছোড়ে। এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি কতজন সেদিন মারা গেছে। রাইফেলের আওয়াজে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল চারপাশ। আমরা কার্জন হলের ভেতরে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচাই। ফলে জানিও না কারা কোথায়।

কারা কোথায় তার হিসাব নেই জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসেন বলেন, জয়নাল ছাড়া পরে মোজাম্মেল আইয়ুব নামের আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। জাফর, কাঞ্চন, দিপালী সাহা নামের একটি ছোট বাচ্চাসহ অনেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।

আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: সকালে ‘টার্গেট ফায়ার’ বিকালে বেধড়ক পিটুনি

কেবল সকালের টার্গেট ফায়ারই নয় সারাদিন এবং শেষত বিকেলের বেধড়ক পিটুনির কথা উল্লেখ করে লায়লা আফরোজ বলেন, অনেকক্ষণ লুকিয়ে থেকে আমরা ১টার দিকে কলাভবনের দিকে যেতে চেয়েছি। কামরুন্নাহার ডানা, শাহীন আখতার সবাই তখন ক্যাম্পাসেই। আমরা বিকেলের দিকে ভিসির বাড়ির সামনে যখন দাঁড়ানো। তখন রাইফেল তাক করে খোলা জিপে সামরিক বাহিনী ঢুকলো কলাভবনের দিকে। যেখানে আন্দোলনকারীরা ছিল। পরদিন জানতে পারি সেখানে যারা ছিল তাদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে শরীরে ক্ষত। এরপর একনাগাড়ে পাঁচ মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে।

তিনি বলেন, চীনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হলো। গোটা পৃথিবী সেটাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার পরে আর স্মরণ করাই হলো না। ওটা ছিল ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ড। অথচ এরশাদ সরকার এই ভয়ঙ্কর দিনটিকে ভুলিয়ে দিতে পরের বছর থেকেই ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে হাজির হলেন। পরের প্রজন্মকে জানতেই দিতে চাইলেন না সেদিন কী নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নিরীহ শিক্ষার্থীরা।

আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: সকালে ‘টার্গেট ফায়ার’ বিকালে বেধড়ক পিটুনি

আসলে ইচ্ছে করেই ভালোবাসা দিবস আনা হলো কিনা? এমন প্রশ্নে মোশতাক হোসেন বলেন, আমরা যখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি তখন ভালোবাসা দিবস ছিল না। পরে সেটিকে আমাদের সামনে হাজির করা হলো। ভালোবাসা দিবসের গুরুত্ব অস্বীকার করছি না। কিন্তু শহীদদের একেবারেই স্মরণ করবো না, সেটা তো হতে পারে না।

আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: সকালে ‘টার্গেট ফায়ার’ বিকালে বেধড়ক পিটুনি

এত বড় প্রতিরোধের কথা কেন পরবর্তীতে জিইয়ে রাখতে পারলো না ছাত্র সংগঠনগুলো? এমন প্রশ্নে জাসদ ছাত্রলীগ কর্মী আকরামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য স্বৈরাচারের সঙ্গে আঁতাত করতে গিয়ে সেই আমলের নিপীড়ন ধামাচাপা পড়ে গেছে।’ 

আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: সকালে ‘টার্গেট ফায়ার’ বিকালে বেধড়ক পিটুনি

আমাদের করণীয় কী? এই প্রশ্নের উত্তরে সে সময়ের অন্যতম সংগঠক মোশতাক হোসেন বলেন, বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রতিরোধ দিবসের কথা তুলে ধরতে হবে, প্রচারে নিয়ে আসতে হবে। কেবল ছাত্র নয়, যারা গণতন্ত্রকে ভালোবাসেন তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। যদি আমাদের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সামনে না আনি, শহীদদের স্মরণ না করি, আমরা সামনে এগুবো কী নিয়ে।

ছবি: প্রপদের সৌজন্যে।

/ইউআই/এমপি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!