X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

চেষ্টা করেও ফুল ফোটাতে পারছে না সিটি করপোরেশন

শাহেদ শফিক
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১০:০২আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৩৭

সড়ক বিভাজকের এসব গাছে ফুল ফুটছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার সড়ক বিভাজকের (ডিভাইডার) সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় প্রায় দুই বছর আগে। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ লাগানো হবে। উদ্দেশ্য ছিল, মেয়াদ শেষে সড়কগুলোতে ফুলের সৌন্দর্য শোভা পাবে, ছড়াবে সৌরভ। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ভিন্ন। ফুল ফোটা তো দূরের কথা, অধিকাংশ স্থানে গাছই বেঁচে থাকছে না। আবার কিছু গাছ বেঁচে থাকলেও বহু চেষ্টার পরেও তাতে ফুল ফোটানো যাচ্ছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সড়ক বিভাজকে ফুলগাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির এ মেগা প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের জুনে। কিন্তু এখনও চলছে ফুলগাছ লাগানোর কাজ। আর এরই মধ্যে যেগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলোতে ফুল ফুটছে না। এ অবস্থায় সড়ক বিভাজকে লাগানো গাছে কেন ফুল ফুটছে না, তা জানাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়েই সড়ক বিভাজকে ফুল গাছ লাগিয়েছে। কিন্তু এখন  ফুল ফুটছে না। তারা গাছে ফুল ফোটানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিয়মিত পরিচর্যা করছে, পানি দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ফুলসহ বিভাজকে এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যানবাহনের অতিরিক্ত ধোঁয়া, ধুলাবালিসহ বৈরী পরিবেশের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিষয়গুলো ভালো করে বিবেচনায় নেয়নি। ফলে গাছে সময় মতো ফুল আসছে না। আর তাই ফুলগাছ পরিচর্যার জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েও লাভ হচ্ছে না।

২০১৬ সালের জুনে ডিএসসিসির সড়কগুলো সবুজায়নের পাশাপাশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। যতটুকু হয়েছে, সেটুকুর অবস্থাও করুণ। অনেক স্থানে গাছ মরে গেছে। আবার কোথাও কোথাও এখনও গাছ লাগানো হয়নি।

চেষ্টা করেও ফুল ফোটাতে পারছে না সিটি করপোরেশন ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বিভাজকে বাগানবিলাস ফুলগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগে এসব সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন করা হতো বেসরকারিভাবে। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব দু-চারটি বিজ্ঞাপন প্রচার করতো। এতে সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি এ খাতে রাজস্ব ব্যয় থেকে মুক্তি পেতো সিটি করপোরেশন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগর ভবনে আসার এক বছরের মাথায় এ সংক্রান্ত সব চুক্তি বাতিল করে এ প্রকল্প হাতে নেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প শুরুর আগে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। এরপর প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের বিভাজকে বাগানবিলাস ফুলগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাপশাহ মাজার থেকে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়, বঙ্গবাজার থেকে শেরাটন হোটেল, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড়, রমনা থানার সামনে থেকে সবজিবাগান এলাকা এবং মতিঝিলের বলাকা চত্বর এলাকা।

প্রকল্পের আওতায় সড়ক বিভাজকে ফুলগাছ লাগানোর পাশাপাশি তা সুরক্ষায় লোহার গ্রিল দেওয়ারও কথা ছিল। তবে সরেজমিন দেখা গেছে, বেশিরভাগ রাস্তায় ফুলগাছ লাগানোই হয়নি। কিছু কিছু এলাকায় লাগানো হলেও ফুল ফোটেনি। আবার বেশ কিছু স্থানে ফুল না ফোটায় পরর্ব্তীতে ফুলসহ গাছ লাগানো হয়েছে।

সম্প্রতি ফুলসহ বিভাজকে এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে বঙ্গবাজার থেকে শিক্ষাভবন পর্যন্ত রাস্তায় দেখা গেছে কয়েকজন শ্রমিক গাছে পানি দিচ্ছেন। গাছের পাতায়ও স্প্রে করে ধুলাবালি ও ময়লা অপসারণ করছেন। কিন্তু সড়ক বিভাজকের অনেক স্থানে ফুলগাছ মরে গেছে। কোথাও কোথাও গাছগুলো উপড়ে পড়ে আছে। অনেক স্থানে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ। একই চিত্র দেখা গেছে কাকরাইল মসজিদের সামনের রাস্তায়। আর গোলাপশাহ মাজার থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত গাছই চোখে পড়েনি।

সংশ্লিষ্ট দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আসলে প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে গাছগুলো লাগানো হয়নি। কোনোরকমে গাছগুলো লাগানোর পর দায় সারতে চেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সে সময় নগরভবন থেকেও মনিটরিং করা হয়নি। মাটির সঙ্গে সারের ব্যবহার করা হয়নি। লাগানোর পর গাছে পানিও দেওয়া হয়নি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, নিম্নমানের গাছ লাগানোর পাশাপাশি যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

চেষ্টা করেও ফুল ফোটাতে পারছে না সিটি করপোরেশন

নগর ভবন সূত্র জানায়, এ প্রকল্প সফল করতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, এসব গাছ লাগালে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে ঢাকার রাজপথ। কিন্তু দেড় বছর পার হয়ে গেলেও তা হয়নি।

ফুল না ফোটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভূঁইয়া অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী নুরু ভূঁইয়া। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাছে ফুল ফোটার বিষয়টি প্রাকৃতিক। আমরা চাইলেই গাছে ফুল ফোটাতে পারবো না। এরপরও আমরা অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর পেছনে ৩-৪ জন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে রেখেছি। প্রতিদিন গাছে স্প্রে করছি। আশা করি আগামী একমাসের মধ্যে গাছে ফুল ফুটবে।’

তিনি বলেন, ‘ফুল না ফোটায় আমাদের বিল আটকে রেখেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু আমাদের দোষ কোথায়? এখন দেখা যাচ্ছে ফুলগাছের উপরে অনেক বড় বড় গাছ। গাছের নিচে বাগানবিলাস হয় না। তাছাড়া গাছে কিছু ফুল আসলেও তা আবার যানবাহনের ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে নষ্ট হয়ে যায়। এরই মধ্যে নিয়োগকৃত কৃষিবিদরা একটা গাছকে ৩-৪ বার কেটে খাটো করেছেন। শুধু ফুলের জন্য বরাদ্দ ৩০০ টাকার পরিবর্তে একটা গাছ এক হাজার ২০০ টাকায় কিনে রোপণ করছি।’

চেষ্টা করেও ফুল ফোটাতে পারছে না সিটি করপোরেশন

এই ঠিকাদার বলেন, ‘প্রকল্প হাতে নেওয়ার শুরুতে নিয়োগ করা পরামর্শকরা বলেছেন, সবই ঠিক আছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। পরামর্শকরা তাদের ফি নিয়ে গেছেন। কিন্তু আমাদের দোষ কী?’

জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রেকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যানবাহনের ধোঁয়া ও ধুলাবালি ঢাকার বাতাস দূষিত করে দিচ্ছে। দিন দিন বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইড বাড়ছে। যে কারণে বিভাজকের গাছে ফুল ফুটছে না। যেখানে গাছগুলো বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করছে, সেখানে ফুল দেবে কীভাবে? যানবাহনের ধোঁয়া আর ধুলাবালি গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে গাছ মরে যায়। আমাদের উচিত এখনই সজাগ হওয়া।’

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের উচিত হবে বিভাজকে ফুলগাছ না লাগিয়ে বরং ঢাকার বাতাসের পরিবেশ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে কাজ করা।’

প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গাছে ফুল না ফোটায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়েছি। আশা করছি ফুল ফুটবে। তারা এখন অনেক সজাগ হয়েছে। তাছাড়া বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। গাছে ফুল আসলে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে।’

চেষ্টা করেও ফুল ফোটাতে পারছে না সিটি করপোরেশন

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসেছি। নোটিশও করেছি।’ বিভাজকের কিছু কিছু গাছে ফুল এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বেসরকারিভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের সুযোগ বন্ধ করে নতুন এ প্রকল্প হাতে নেওয়ায় সিটি করপোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সংস্থার সচিব মো.  শাহাবুদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে এতে সিটি করপোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে কিছু সমস্যা যে হচ্ছে, তা ঠিক। আমরা আশা করছি এর সুফল পাওয়া যাবে।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন:
ভাষা নিয়ে সরকারি নির্দেশনা মানার চেষ্টা করছে এফএম রেডিওগুলো


 

 

/এইচআই/এসএনএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ড. ইউনূস মহাসমুদ্র, তিনি কেন পুকুর চুরি করবেন: দাবি আইনজীবীর
ড. ইউনূস মহাসমুদ্র, তিনি কেন পুকুর চুরি করবেন: দাবি আইনজীবীর
ভারতীয় শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী
ভারতীয় শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী
স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর চায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর চায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
খিলগাঁওয়ে রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি