X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালপাড়েই হচ্ছে ড্রেন, চলছে বৃক্ষনিধন

শাহেদ শফিক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:২২আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৫৭

 

রামপুরা ব্রিজ টু মেরাদিয়া সড়কের (বনশ্রী প্রধান সড়ক) পাশের গাছ কেটে রাখা হয়েছে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ টু মেরাদিয়া সড়কের (বনশ্রী প্রধান সড়ক) পাশে থাকা শত শত গাছ কেটে উজাড় করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, উন্নয়নের অজুহাতে খালপাড়ে অপ্রয়োজনীয় ড্রেন নির্মাণের অজুহাতে খালপাড়ের গাছ কাটার পাশাপাশি মাটি  ফেলে খালটিও খরাট করা হচ্ছে। তারা বলছেন, এমনিতেই দিনে দিনে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণে রেখে ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করে রাখার জন্য বেশি করে গাছ লাগানো প্রয়োজন। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সিটি করপোরেশন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় গাছ না লাগালেও উন্নয়নের অজুহাতে বৃক্ষনিধনে নেমেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকা একদিন মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে বলেও তারা অভিযোগ তুলেছেন।  তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ গাছ কাটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রামপুরা ব্রিজ টু মেরাদিয়া সড়কের (বনশ্রী প্রধান সড়ক) পাশের গাছ কেটে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে

স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছুদিন আগেও রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী হয়ে মেরাদিয়া যাওয়ার সড়কটির পাশের  খালপাড়ে সারি সারি গাছ ছিল। পুরো সড়কেই ছিল কড়ই, মেহগনি, নারিকেলসহ বিভিন্ন রকম গাছের ছায়া। এছাড়া খালটিতে প্রায় ১২ মাসই পানি থাকে। আছে প্রবাহও। তবে এখন রাস্তা সম্প্রসারণের নামে এসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আর ভরাট করা হচ্ছে এই খালটির অংশও।

রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ টু মেরাদিয়া সড়কের (বনশ্রী প্রধান সড়ক) পাশের গাছ কেটে ড্রেন নির্মান চলছে

শুক্রবার সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বনশ্রী প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খালপাড় হয়েই ড্রেন তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা। খালের পাশ দিয়েই ড্রেন তৈরির নামে শত শত গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে।  

বনশ্রীর স্থানীয় বাড়ি মালিক সিরাজ হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা রাস্তাটি নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। রাস্তার দুর্ভোগের জন্য ভাড়াটিয়ারা বাসা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন। এ বছর অনেক বাসা খালি পড়ে আছে। তবে সিটি করপোরেশন রাস্তার উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে, তাতে আমরা অনেক খুশি। কিন্তু রাস্তার পাশের গাছ কেটে উন্নয়ন করতে হবে, এমনটা আমরা চাইনি। যেভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে পুরো এলাকা যেন মরুভূমি হয়ে পড়েছে।’

রামপুরা ব্রিজ টু মেরাদিয়া সড়কের (বনশ্রী প্রধান সড়ক) পাশের গাছ কেটে খালের পাশেই ড্রেন তৈরি হচ্ছে

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রাস্তার পাশে খাল, সেই খালের পাড়ে সবুজ গাছপালা আর দেখা যাবে না। শুধু গাছের ছায়ার জন্যই অনেক সময় রামপুরা ব্রিজ থেকে সি-ব্লকের বাসা পর্যন্ত হেটে আসতাম। কিন্তু এখন আর সেই গাছ ও তার ছায়া পাওয়া যাবে না। এখন গাছ কাটার পাশাপাশি খালও ভরাট করা হচ্ছে। এমন দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের নির্দেশদাতাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।’

জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাছ কেটে উন্নয়ন কোনও দেশেই হয় না। শুধু আমাদের সিটি করপোরেশনেই দেখি ব্যতিক্রম। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বৃক্ষনিধনের মাধ্যমে উন্নয়ন কখনোই সুফল বয়ে আনে না।’ তিনি বলেন, ‘এই সড়কটি বৃক্ষশোভিত রাস্তা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু রাজধানীর এমন সুন্দর জায়গাটিকেও উন্নয়নের নামে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। গাছ কাটার পাশাপাশি খালটিও ভরাট করা হচ্ছে। অথচ এই খালটি দিয়েই একসময় পুরো রাজধানীর পানি নিষ্কাশন হতো। এখনও হয়। কিন্তু দিনদিন খালের প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে। দুই দিক থেকে দুই আবাসিক এলাকা দখল করে নিচ্ছে। এখন ড্রেনে নির্মাণের নামেও দখল করা হচ্ছে খাল, কাটা হচ্ছে গাছ। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

রামপুরা ব্রিজ টু মেরাদিয়া সড়কের (বনশ্রী প্রধান সড়ক) পাশের গাছ কেটে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে

জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খাল পাড়ে ড্রেন নির্মাণের কোনও প্রয়োজন নেই। বরং সেখানে প্রয়োজন ওয়াকওয়ের। আর সড়কের পাশের এসব গাছ কেটে কোনোভাবেই এই ড্রেন নির্মাণ হতে পারে না। এছাড়া এই ড্রেনটিরই দরকার নেই। এখন উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংসের উৎসব চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেখানেই উন্নয়ন, সেখানেই উন্নয়নের অজুহাতে সিটি করপোরেশন গাছে হাত দিচ্ছে। উত্তরা, বনানী, গুলশান, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। গাছ রেখেও দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন করা যায়। সবুজায়ন সৃজন করে তা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। খাল জনগণের সম্পদ, সরকারের নয়। সিটি করপোরেশন খাল দখল করতে পারে না। এছাড়া নগর উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান আছে। সেটা অনুসরণ করা হোক। এতে কোনও দখলদার যদি রাস্তা দখল করে, তা ভেঙে দেওয়া হোক। দখলদারকে বাঁচানোর জন্য কেন রাস্তা খালের মধ্যে যাবে?’

খাল দখল ও রাস্তার পাশের গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেখানে কোনও গাছ কাটা হচ্ছে না। সড়কের পাশেই ড্রেন নির্মাণ করা হবে। যদি গাছ কাটা হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন