X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষার বিকৃতি রোধের এখনই সময় (ভিডিও)

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২০:১৮আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১০:৫১

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে আলোচকরা

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলা ভাষার বিভিন্ন রূপ বিদ্যমান। যেটাকে বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা। অঞ্চলভিত্তিক উচ্চারণের ভিন্নতা, কোথাও বানানেরও ভিন্নতা রয়েছে। অর্থাৎ, অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগের জন্য বাংলা ভাষার আলাদা বৈশিষ্ট্য ও নিজস্বতা রয়েছে। তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও মানুষ যে যার মতো করে বাংলা ভাষাকে একটু অলংকৃত করে উপস্থাপন করছে; সেটা করতেই পারে দোষের কিছু নয়। কিন্তু পুরো দেশের মানুষের একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি স্বতন্ত্র বা কমন ভাষা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে এর বিকৃতি সমীচীন নয়। ভাষার বিকৃতি রোধেরও এখনই সময়।

গত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর শুক্রাবাদে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিওতে আয়োজিত ‘বাংলা ভাষার বিকৃতি’ শীর্ষক বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে এসব কথা বলেন বিশ্লেষকেরা। বৈঠকিটি এটিএন নিউজ শনিবার  (২৪ ফেব্রুয়ারি) সম্প্রচার করে। এছাড়া, বাংলা ট্রিবিউনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুকে পেজেও এটি দেখা যাবে।

বৈঠকিতে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) শিক্ষক সলিমুল্লাহ খান, শিক্ষক-সাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক-সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, রেডিও স্বাধীনের আরজে ও সহযোগী নির্বাহী পরিচালক রাব্বি এবং বাংলা ট্রিবিউনের চিফ রিপোর্টার উদিসা ইসলাম।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান ইউল্যাবের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ভাষা বদলায়–এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। মানুষ যার যার মতো করে ভাষা ব্যবহার করে। প্রতিটি কমিউনিটির মানুষ নিজেদের মধ্যে কথা বলতে একটি নিজস্ব স্টাইল ফলো করে। তবে ভাষা প্রবাহমান, আবার স্থিতিশীলতাও আছে। যেমন, নদীর পানি কমে-বাড়ে, বয়ে যায়। কিন্তু যেটি মূল জিনিস–এই পানি, সেটা তো কোথাও না কোথাও থাকেই। একজন মানুষ কখনও ভাষার সৃষ্টি করতে পারে না, অন্তত দুজন লাগে। অর্থাৎ, ওই দুজন যে ভাষায় কথা বললে বুঝবে, সেটাই একটি ভাষা। ফলে আমি মনে করি, যারা ফেসবুকে বাংলা ভাষাকেই লিখছেন একটু অলংকৃত করে, তাদের নিজেদের মতো করে, এখানে তাদের স্বাধীনতা হরণ করা ঠিক নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক পত্রিকায় একটা নিজস্ব ভাষারীতি অনুসরণ করা হয়। সেগুলো কি পাল্টাতে পারে না? কোনও কোনও পত্রিকা একসময় সাধু ভাষায় সম্পাদকীয় লিখতো, এখন আর সেভাবে লেখে না। এভাবেই বিভিন্ন সময় ভাষাবিদরা বর্ণ, শব্দ, বানানের সংস্কার করেছেন। ভাষা বিবর্তন ঘটে–এটা চলমান, চলতেই থাকবে। তাছাড়া, বাংলা ভাষা তৈরি হয়েছে সংকর হিসেবেই। ফলে আমি মনে করি, ভাষা সংস্কারে বিরোধিতা করা যাবে না। ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিকতা থাকবে ঠিকই কিন্তু একটি ঐক্য এবং একটি কমন ভাষা অবশ্যই থাকবে, যেটি দিয়ে সবাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবে।’  

আহমাদ মোস্তফা কামাল শিক্ষক-সাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ভাষার বিকৃতি তখনই বলি, যখন একটি মানদণ্ডের বাইরে গিয়েও কোনও ভাষাকে সঠিক বলে মেনে নিচ্ছি। এটি নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। আজ যে বিকৃতিটা ফেসবুকে হচ্ছে, সেটা আগে অনেক মাধ্যমে হয়েছে। নাটকে হয়েছে, চলচ্চিত্রে হয়েছে। তবে ভাষার বিকৃতি রোধের এখনই সময়। এই ঢাকায় দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মানুষ আসছে, তারা নিজেদের মধ্যে যে যার আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করছে। আবার শ্রেণিভিত্তিকভাবেও ভাষার কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত। বাংলা ভাষার একটি বিশেষত্ব রয়েছে। ১০-১২ কিলোমিটার পর পর ভাষার ভঙ্গি আলাদা হয়। আমি মনে করি, এটা আমাদের এক প্রকার সম্পদ। অনেক রকমের বৈচিত্র্য আছে। এগুলো অনেক সময় গল্প উপন্যাসে আমরা লিখি, সেখানে কোনও সমস্যা তো দেখি না। কিন্তু মূল সমস্যা যেখানে সেটা হলো, এত রকমের ভাষার মধ্যেও একটি কমন ভাষা লাগে, তা না হলে এই দেশের ১৬ কোটি মানুষ কোন ভাষায় সবার সঙ্গে সবাই কথা বলবে? একটি ভাষা তো লাগবে, যা দিয়ে সবাই সবার সঙ্গে কথা বলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি প্রজন্ম আমরা এখন পেয়েছি যারা বাংলার সঙ্গে মিলিয়ে অন্যান্য ভাষা, যেমন ইংরেজি বা হিন্দি ব্যবহার করছেন। যেমন, রেডিও বা টেলিভিশনে বলছেন, “ডিয়ার ভিউয়ার’স”, তারা মনে করেন, “প্রিয় দর্শক” বললে তো আনস্মার্ট মনে করবে বা মানুষ হয়ত বুঝবে না। এসবের কারণে এরাই বাংলা ভাষার মধ্যে একটি সংকরায়ন তৈরি করছে।’ তিনি বলেন, ‘ভাষা ব্যবহারের যোগ্যতা শেখা শুরু হয় স্কুলে। এক সময় স্কুলে আবৃত্তি হতো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো, পাড়ায় মহল্লায় এসব হতো। কিন্তু এখন তা হয় না। এ কারণেই এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমাদের এসবের দিকে নজর দিতে হবে।’

মাহবুব মোর্শেদ লেখক-সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ২ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন। ফেসবুক একটি নতুন মাত্রা এবং নতুন অডিয়েন্স তৈরি করেছে। এই ফেসবুকে সংবাদ শেয়ারিং হয়। কিন্তু এই ২০ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর বেশিরভাগই এই সংবাদকে শুধুমাত্র তথ্য হিসেবে জানেন। সংবাদ কী জিনিস, তা বোঝেন না। আমরা এখন নতুন এই জেনারেশনের সামনে পড়েছি, যাদের যেমন সংবাদ সচেতনতা নেই, তেমনি ভাষা সচেতনতাও নেই। আর এ কারণেই হয়ত ব্যক্তি নিজের ভাষাকে একটু আলংকারিক, কিছুটা বিকৃতি করে প্রকাশ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিজস্ব একটা ভাষা নেই, আমি এই কথাটি মানতে নারাজ। কারণ, এই ঢাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে জুড়েছে এবং সব ভাষা মিলে একটি মিথষ্ক্রিয়া ভাষা তৈরি করেছে। একটি যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি করেছে। একজন শিক্ষকের ছাত্রদের শেখাতে হয়, ফলে ওই শিক্ষককে একটি আদর্শ শব্দ ব্যবহার করতে হয়। কারণ, শব্দের বিশুদ্ধতার দেমাগ সবসময় থেকেই যাচ্ছে।’

রাব্বি রেডিও স্বাধীনের আরজে ও সহযোগী নির্বাহী পরিচালক রাব্বি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভাষাটা দেখছি, সেটি একটি বাস্তবতা। একসময় স্কুলে যারা ভালো বাংলা বলতে পারতো, তাদের ডাকা হতো কথা বলার জন্য, যারা ভালো আবৃত্তি করতে পারতো তাদের খোঁজা হতো আবৃত্তি করার জন্য। এখন সেগুলোর চর্চা কতখানি হয়? এখন মফস্বলের পাবলিক লাইব্রেরিসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনে চর্চা কতখানি হয় এগুলোর খোঁজখবর কী কেউ রাখছেন? আমরা একসময় টিভির সামনে বসে থাকতাম ভাষার বা শব্দের উচ্চারণ বা অর্থ জানার জন্য। এখন কি সেটা করি?’

তিনি আরও বলেন, ‘নাটক, বিজ্ঞাপনে যে ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে তা ব্যবহারের চেয়ে সেই ভাষা কতখানি প্রভাব তৈরি করছে সেটা খেয়াল করার দরকার রয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাংলা ভাষার যে বিকৃতি হচ্ছে, সঠিকভাবে বাংলা বলতে না পারা অথবা পারলেও সেটা একটু বিকৃতি করে উপস্থাপন করা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সঠিকভাবে বাংলা বলতে পারা ব্যক্তিকেও তো খুঁজে পেতে হবে। আমরা সঠিকভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহারের এই বলয়টি তৈরি করতে হয়ত ব্যর্থ হয়েছি।’

উদিসা ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনের চিফ রিপোর্টার উদিসা ইসলাম বলেন, ‘একটি স্ট্যাটাস লেখার পর শেষে ফ্রান্স কেন লেখা থাকে? এই কথাটি আমার এক সহকর্মী জানতে চেয়েছিলেন। এটা নিয়ে মানুষের কৌতূহল আছে, কারণ অনেকেই এসব লেখার অর্থ জানেন না। মূলত, এই ফ্রান্স বলা মানে বন্ধুদের অ্যাড্রেস করা, বন্ধুদের কাছে কিছু বিষয় নিয়ে জানতে চাইছেন। শুধু ফ্রান্স নয়, যদি এখানে অন্য কোনও দেশের নাম যেমন, কানাডা বা লিবিয়াও বলা হয়, তাহলেও বন্ধুদের অ্যাড্রেস করে। ফলে এই ভাষাকে যারা একটা বিশেষ অর্থ দিয়েছেন তারাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করছেন। তবে বাংলা ভাষার বিকৃতি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা আজকের না। একদল বলছেন, এটা হওয়ার কথা নয়, অন্যদল বলছেন এটাই হওয়ার কথা। ব্লগের জগতে আমরা যেদিন ঢুকেছি, তখন থেকেই দেখছি। যদি প্রতিদিন ভাষা বদলায়, তাহলে যোগাযোগে আসলেই অসুবিধা হবে–এটা বলতে দ্বিধা নেই।’

মুন্নী সাহা বৈঠকি সঞ্চালনায় ছিলেন মুন্নী সাহা। 

 

<>

/আরএআর/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা