X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

র‌্যাপিড পাস কার্ডে আগ্রহ নেই পরিবহন মালিকদের

শাহেদ শফিক
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:১৪আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:২৩

র‌্যাপিড পাস কার্ড ব্যবহারের সুবিধাসম্পন্ন ঢাকার চাকা পরিবহনের একটি রাজধানীর গণপরিবহন মালিকদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়সহ নৈরাজ্য ঠেকাতে মাস দেড়েক আগে ‘র‌্যাপিড পাস কার্ড’ চালু করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। প্রথম অবস্থায় বিআরটিসির এসি বাস ও ঢাকার চাকা পরিবহনে এই কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। শুরুতে আগ্রহ দেখালেও এখন আর সেভাবে বাস মালিক ও যাত্রীদের কাছ থেকে এই কার্ড ব্যবহারে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ে বাধ্যবাধকতা থাকার কারণেই পরিবহন মালিকরা র‌্যাপিড পাস কার্ড ব্যবহারে সাড়া দিচ্ছেন না।

ডিটিসিএ’র অতিরিক্ত সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘র‌্যাপিড পাস মূলত ক্রেডিট কিংবা ডেবিট কার্ডের মতো। যাত্রী বাসে ওঠার সময় কার্ডটি বাসে রাখা মেশিনের সঙ্গে স্পর্শ করলে সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে। আবার যাত্রী কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নামার সময় আবার কার্ডটি মেশিনের সঙ্গে স্পর্শ করলে নির্ধারিত গন্তব্য অনুযায়ী কার্ড থেকে ভাড়া কেটে নেওয়া হবে। এই কার্ড রিচার্জের সুবিধা আছে।’ এই কার্ডের মাধ্যমে নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী পরিবহন বিল পরিশোধ করা যাবে বলেও তিনি জানান।

ডিটিসিএ’র এই কর্মকর্তা আরও বলেন,‘বর্তমানে বিআরটিসির ২৫টি এসি বাস ও ঢাকার চাকা পরিবহনে স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ আছে। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি গণপরিবহনে ব্যবহার বিষয়েও কার্যক্রম চলমান।’ বাসের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি কিংবা নগদ টাকা সঙ্গে না থাকলেও বাসে চড়ার মতো সুবিধা এই র‌্যাপিড পাস কার্ডে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

র‌্যাপিড পাস কার্ডের একটি বিক্রয়কেন্দ্র পাবলিক পরিবহনে র‌্যাপিড পাস কার্ড ব্যবহারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে আমরাও চাই গণপরিবহনে এমন কার্ডের ব্যবহার হোক। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। কার্ডগুলোর দাম আরও কমানো গেলে যাত্রীদের সাড়া পাওয়া যেত।’

যাত্রীদের অভিযোগ, র‌্যাপিড পাস কার্ডের দাম বেশি। তাছাড়া সব পরিবহনে র‌্যাপিড ডিভাইস এখনও সংযুক্ত হয়নি। ডিভাইস যুক্ত করলে মালিকদের সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হওয়ার ভয়ে তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

ঢাকার চাকার নিয়মিত যাত্রী সুজন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘একটি কার্ডের দাম ৪০০ টাকা। এই কার্ড দিয়ে গুটিকয়েক পরিবহন ছাড়া বেশিরভাগ পরিবহনেই চলাচল করা যাবে না। তাহলে এটা নিয়ে লাভ কী? যদি সব পরিবহনে এই কার্ড চালু করা হতো, তাহলে কার্ডের পূর্ণ সুবিধা যাত্রীরা পেতো। তাছাড়া কার্ডে রিচার্জসহ সংগ্রহের স্থানও অনেক কম।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ডাচ বাংলা ব্যাংকের ছয়টি শাখা থেকে র‌্যাপিড পাস কার্ড কেনা ও রিচার্জের সুযোগ রয়েছে। শাখাগুলো হলো— মতিঝিল লোকাল অফিস শাখা, মতিঝিল বৈদেশিক বিনিময় শাখা, এলিফ্যান্ট রোড শাখা, বনানী শাখা, উত্তরা শাখা ও সোনারগাঁও-জনপথ শাখা। এছাড়া নতুন বাজার, গুলশান-২, শুটিং ক্লাব ও বনানী টিকিট কাউন্টার থেকে কার্ড কেনা ও রিচার্জ করা যায়।

রাজধানীর নতুন বাজারে র‌্যাপিড পাস কার্ড বিক্রি ও রিচার্জের একটি কাউন্টার এর বাইরে বিআরটিসির এসি বাসের জন্য র‌্যাপিড পাস কার্ড পাওয়া যাবে হাউজ বিল্ডিং, বনানী, শাহবাগ ও মতিঝিলে। যাত্রীরা বলছেন, র‌্যাপিড পাস কার্ড সংগ্রহ ও রিচার্জের এই স্থান প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

এ বিষয়ে বাড্ডার বাসিন্দা ফিরোজ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘কার্ড কেনার জন্য বনানীতে কয়েকদিন এসেছিলাম। কিন্তু কার্ড সংগ্রহ করতে অনেক সময় লাগে। এত সময় নেই। আবার সব বাসে কার্ড পাঞ্চ করার ডিভাইসও নেই। মাত্র কয়েকটি বাসের জন্য টাকা খরচ করে এই কার্ড কিনে কী লাভ হবে? এ কারণেই পরে আর এই কার্ড নেইনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্টার মাস্টার বলেন,‘প্রথম কয়েকদিন মানুষের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। কিন্তু পরে সেই আগ্রহ আর দেখা যায়নি। কারণ, সব বাসে আমরা সেই সুবিধা নিশ্চিত করতে পারিনি। যাত্রীরা মাত্র কয়েকটি বাসের জন্য কার্ডটি সংগ্রহ করতে চান না। তাছাড়া বাস মালিক ও হেলপারদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কার্ডের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে হবে। সে কারণে তাদেরও আগ্রহ নেই।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি আসলেই সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তাতে তো বাস মালিকদের সহযোগিতা নেই। কারণ এর মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে হবে তাদের। সে কারণে মালিকরা চান না, তাদের বাসে র‌্যাপিড পাস কার্ড ডিভাইস যুক্ত হোক।’

র‌্যাপিড পাস কার্ডে শুরুতে বেশ আগ্রহ দেখা যায় যাত্রীদের মধ্যে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি পরিবহন কোম্পানির মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কে দৈনিক একটি গাড়ি পরিচালনা করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করে সেই খরচ পোষানো সম্ভব না। তাছাড়া আমাদের মালিকদেরকে বিভিন্ন খাতে টাকা দিতে হয়। এ ব্যবস্থায় সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করতে হবে। এ কাজ করলে আমাদেরকে পথে বসতে হবে। সে কারণেই আমরা সাড়া দিচ্ছি না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ‘সব পরিবহনে র‌্যাপিড পাস কার্ড চালু করা গেলে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা কমে যাবে। সবাই সুবিধা পাবে। সিটিং সার্ভিসসহ অন্যান্য পরিবহনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে স্বেচ্ছায় কেউ সার্ভিসটি চালুর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কয়েকটি পরিবহনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া আসেনি। কোনও মালিক অজুহাতও দেখাচ্ছেন। কাউকে তো আর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।’

 

/টিআর/এসটি/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’