X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যবোধ-নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি: মাসুদ রানা

রশিদ আল রুহানী
০২ মার্চ ২০১৮, ১৭:৫৬আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৮, ১৭:৫৯

সেরা শিক্ষক মাসুদ রানা সবসময় চেষ্টা করি স্কুল ও স্কুলের শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে। চেষ্টা করি গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে শিশুদের নতুন নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার। পাঠ্যক্রমের বাইরেও মূল্যবোধ-নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি। এগুলোই আজ আমাকে দেশের সেরা শিক্ষক হিসেবে জায়গা করে নিতে সহযোগিতা করেছে।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপচারিতায় কথাগুলো বলছিলেন পাবনার ইয়াকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা। দেশের সেরা স্কুল শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, ‘যে কাজই করা হোক না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আন্তরিকতার সঙ্গে সেটি করা এবং এর সঙ্গে নতুন আঙ্গিক যুক্ত করা। কেউ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারলে সেই কাজ তাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেবে। আর আমি স্কুলের জন্য, স্কুলের শিশুদের জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে সেই কাজটিই করে যাচ্ছি।’

দেশের সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হওয়া মাসুদ রানা জানান, স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের এনে সরাসরি তাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানোর ব্যবস্থা তিনি করেছেন শিশুদের জন্য। শিশুরা এতে দেশের ইতিহাস জেনেছে, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন হওয়ার লড়াই সম্পর্কে জেনেছে। শিশুরা খুব মনোযোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনেছে। তারা খুব আনন্দও পেয়েছে।

সাধারণ পাঠ্যসূচির বাইরে স্কুলের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা জানান মাসুদ রানা। তিনি বলেন, “আজকের এই দিনে’ নামে একটি কর্মসূচি রয়েছে আমাদের। কোনও একটি দিন বিখ্যাত দিন কিনা, কিংবা দিনটির বিশেষত্ব কী, তা শ্রেণিকক্ষের সামনে লেখা থাকে। শিশুরা তা পড়ে দিনটি সম্পর্কে জানতে পারে। প্রতিদিন সম্পর্কে এছাড়া ‘স্মাইল কার্ড’ নামে একটি কর্মসূচিও চালু করেছি। এই কার্ডটি যে শিশু পায়, তাকে ছয় মাস স্কুল থেকে খাতা-কলম-পেন্সিলসহ লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়। আর এই স্মাইল কার্ডও কিন্তু যাকে-তাকে দেওয়া হয় না। শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি, ক্লাসে মনোযোগিতার মতো কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই কার্ড দেওয়া হয়।”

মাসুদ রানা জানান, স্কুলে ‘বিজয় মুকুট’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছেন তারা। একমাসে যে শিশু তার পড়ালেখা-খেলাধুলাসহ অন্য সবকিছুতে উল্লেখযোগ্য ভালো ফল করে, তাকে ‘বিজয় মুকুট’ পরিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সামনে। অন্য শিশুদেরও অনুপ্রাণিত করতে এই পুরস্কার চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইয়াকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কিছু সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা। এসব উদ্যোগের কথা জানাতে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে দেয়াল পত্রিকা তৈরি করা হয়। শিশুরা হাতে লিখে এই দেয়াল পত্রিকা তৈরি করে এবং সেটা স্কুলে ডিসপ্লে করে। সেটা বাকি সবাই পড়ে। শিশুদের জন্য একটি লাইব্রেরিও করেছি। সেখান থেকে শিশুরা বই নিয়ে পড়তে পারে।’

মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘স্কুলে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা হয়, অ্যাসেম্বলি করানো হয়। জাতীয় সংগীত পাঠ করিয়ে শপথ করানো হয়। ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়। নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে কয়েকটি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলের কাজ আলাদা। একটি দলের নাম পরিষ্কার-পরিছন্ন দল। এই দলের সদস্যরা স্কুল পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে কাজ করে। অন্য একটি দলের নাম প্রার্থনা দল। এই দলের কাজ হলো— নামাজের সময় সবাইকে নামাজ পড়তে ডাকা। স্কুলের শিশুদের নিয়ে প্রায় ৩০০ তাল গাছ লাগানো হয়েছে। এলাকায় অনেক বজ্রপাত হয় বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

কেবল শিশু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, তাদের অভিভাবকদের উৎসাহিত করার উদ্যোগও নিয়েছেন মাসুদ রানা। স্কুলটিতে তারা নিয়মিত ‘মা সমাবেশ’ আয়োজন করে থাকেন বলে জানান। এই শিক্ষক বলেন, ‘আমরা মায়েদের নিয়ে নিয়মিত সমাবেশ আয়োজন করি। মায়েরা সন্তানের পড়ালেখার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কিনা, সন্তানকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাচ্ছেন কিনা— এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ছয় মাস পরপর একজন মাকে শ্রেষ্ঠ মা নির্বাচিত করি। মায়েরাও উৎসাহ পান।’

শিক্ষার্থীদের যেমন সহশিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহ দেন, তেমনি নিজেও শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনের বাইরেও আরও বেশকিছু বিষয়েও চর্চা নিজেও করে থাকেন দেশের সেরা শিক্ষকের স্বীকৃতি পাওয়া মাসুদ রানা। বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন তিনি। তার বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘প্রাথমিক শিক্ষার ইতিবৃত্ত’, ‘কচি পাতায় আগামী সূর্য’, ‘স্বপ্ন বিলাস’। জাতীয় সংবাদপত্রে কলামও লিখে থাকেন। উপস্থাপনার কাজটিও করেন নিয়মিতই।

মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার বেশ কয়েকটি বই আছে। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকাতেও লিখেছি। জেলা প্রশাসন থেকে শ্রেষ্ঠ উপস্থাপকের পুরস্কার পেয়েছি। গত বছর পাবনা সফরে এসে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও আমার উপস্থাপনার প্রসংশা করেছিলেন।’ এসব বিষয়ও তার সেরা শিক্ষকের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, সারাদেশের প্রাথমিক স্তরের পড়ালেখার মান বাড়ানোসহ অন্যান্য ইতিবাচক বিষয়গুলোতে নজর দিতে প্রতিবছর স্কুল, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা অফিসারসহ ১৯টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্ব নির্বাচন করা হয়। প্রতিবছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের পুরস্কৃত করা হয়। এ বছর আগামী ৬ মার্চ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৮-এর আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। ওই অনুষ্ঠানেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবারের বিজয়ীদের পুরস্কৃত করবেন।

 

/টিআর/আপ-এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী