আগুনে মিরপুর ১২ নম্বরের বস্তির ৫ হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস আলী মোল্লা একথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, বস্তির প্রায় সব ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। এসব ঘরে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মানুষ থাকতো। আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি। বস্তিবাসীর দাবি, নাশকতা করে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তবে ইলিয়াস মোল্লার দাবি, এটা নাশকতা নয়, দুর্ঘটনা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুর ১২ নম্বরের প্রায় ৭ বিঘা জমির ওপর চারটি বস্তিটি ছিল। এগুলো হলো, হারুনাবাদ, কবির মোল্লা, সাত্তার মোল্লা ও নাগর আলী মাতব্বর বস্তি। মূলত এমপি ইলিয়াস মোল্লার বাবা-চাচাদের জমিতে ৭৬ সাল থেকে এই বস্তি গড়ে ওঠে। ৩৫ বছরের পুরনো এ চার বস্তিতে ৫০০০ হাজার ঘর ছিল। এখানে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস করতো।
ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘আমার একটি নির্মাণাধীন মার্কেটের সাতটি ফ্লোরে যাদের ঘর পুড়েছে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ততক্ষণ তারা এখানে থাকবে। আমি তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করবো।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানান গেছে, যারা এই বস্তিতে আগে এসেছেন, তারা অনেকেই একাধিক ঘর আছে। প্রত্যেকের গড়ে ৮/১০ টি ঘর আছে। বাঁশ, টিন, কাঠ ও কংক্রিটের খুঁটি দিয়ে ঘরগুলো তৈরি। নিজেরা থাকার পাশাপাশি বাকি ঘর তারা ভাড়া দেয়। বস্তির জমির মালিকরা সেই ভাড়ার টাকার একটা অংশ পায় বলে দাবি করেছেন বস্তিবাসীরা। তবে জমির মালিকদের মধ্যে একজন এমপি ইলয়াস মোল্লা তা অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা টাকা পয়সা নেই না। এরা এমনিতেই থাকে। তারা কেবল পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল দেয়। তাও যারা সংযোগ এনে দিয়েছে তাদের কাছে দেয়।’
এদিকে, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) শাহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরিতে আমাদের কর্মীরা কাজ করছেন। তালিকার পর প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।’
এদিকে ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে ঘরহারা মানুষগুলোকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ঘরের ছাই সরিয়ে মূল্যমান জিনিসপত্র আছে কিনা তা দেখছেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রবিবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ৪টার দিকে আগুন লাগে ইলিয়াস আলী বস্তিতে। আগুন লাগার পর মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বস্তিতে। বস্তির বেশিরভাগ লোক গার্মেন্টে কাজ করে। তাই প্রায় সবার ঘরেই ঝুট এবং প্রচুর পরিমাণে দাহ্য বস্তু ছিল। ফলে আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট কাজ করে সোমবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।