গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ পরামর্শক আদাম দিয়েং বলেছেন, মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার। সেখানে গত আগস্টে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যে পোড়া মাটি নীতি ক্যাম্পেইন চালিয়েছিল সেটা আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সঠিক উদ্যোগ নিলে তা ঠেকানো সম্ভব ছিল।
মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এটি পরিষ্কার যে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে, জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়েছে এবং সবই করা হয়েছে তাদের পরিচয়ের জন্য।’
আদাম দিয়েং গত ৭ মার্চ ঢাকায় আসেন এবং রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য কক্সবাজার পরিদর্শন করেন।
গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক এই বিশেষ পরামর্শক বলেন,‘আমি অসংখ্যবার এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সাবধান করেছি কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের মুখ বালিতে গুঁজে রেখেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি যে তথ্য পেয়েছি সেগুলো ইঙ্গিত করে অপরাধকারীদের উদ্দেশ্য ছিল রাখাইন থেকে তাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা এবং এটি যদি প্রমাণ করা যায় তবে সেখানে গণহত্যা হয়েছে এটি প্রমাণিত হবে।’
তবে গণহত্যা হয়েছে কিনা এটি প্রমাণের জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে দরকার এর প্রাথমিক কারণ খুঁজে বের করা এবং কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন কমিশনের রিপোর্ট সেটির দিক নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে। সঠিকভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকার দিতে পারলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি বলেন, যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মিয়ানমারকে তার দায়ভার নিতে হবে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরে মিয়ানমার সরকার নিজেদের নির্দোষ দাবি করায় আমি বিস্মিত হয়েছি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বকে বলতে হবে তারা এ ধরনের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড সহ্য করতে প্রস্তুত নয়।
আঞ্চলিক শক্তি চীন ও ভারতের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সঠিক ভূমিকা পালন করা উচিত। এটি রোহিঙ্গা ইস্যু নয়, মানবাধিকার ইস্যু।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এই অপরাধের বিচার হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয় এবং সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ওই আদালতে মামলা করা যায় না। তবে বিচার করা যাবে না সেটাও সঠিক নয়। সুদান ও লিবিয়াও ওই আদালতের সদস্য ছিল না। কিন্তু দেশটির স্বৈরশাসকদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যদি চায় তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমার নাগরিকদের বিচার করা সম্ভব।