১২ মার্চ দুপুর ২টা ২০ মিনিট। নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর। ৭১টি প্রাণ নিয়ে ধূলিসাৎ হয় ইউএস-বাংলার একটি বিমান। এই খবর জানার পর থেকে সেই যে রুদ্ধশ্বাস উদ্বেগ আর সীমানাহীন উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষার শুরু, তার কিছুটা হয়তো শেষ হচ্ছে আজ। যে ২৩টি মরদেহ আজ দেশে ফিরছে তাদের কাছের মানুষরা হয়তো এটুকু ভেবে স্বস্তি পাবেন, এখন অন্তত আর লাশের অপেক্ষায় থাকতে হবে না। তবে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া এই মানুষগুলোর স্বজনদের হঠাৎ চলে যাওয়ার আক্ষেপ হয়তো কখনই শেষ হবে না। প্রিয়জনের হাজারো-লাখো স্মৃতি চোখ না ভাসিয়ে ফিরে যাবে না আর কখনোই।
দেশে পাঠানোর আগে সোমবার (১৯ মার্চ) সকালে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের আঙিনায় নিহতদের লাশবাহী কফিনগুলো সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন এবং দূতাবাসের কর্মীরা মিলে নিহতদের জানাজা পড়েন। এ সময় কফিনে আপনজনের নাম লেখা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা।
অনেকে কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন নির্বাক। লাশ নিতে এসেছেন সবাই, তাও একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভাষা হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় এই আপনজনেরা।
গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ-মুহূর্তে বিধ্বস্ত হওয়ায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হন। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ ৭১ আরোহীর মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৬ জন।
আহতদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি, ১১ জন নেপালের ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক। আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ছয়জন এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন। দুজনকে নেওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে, আর দুইজন এখনও চিকিৎসাধীন আছেন নেপালে।
নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস জানিয়েছেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত তিনজনের মরদেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
এ তিনজনের ক্ষেত্রে যদি ডিএনএ টেস্ট করাতে হয় তাহলে সময় লাগবে ১০ থেকে ২১ দিন। আলিফউজ্জামান, পিয়াস রায় ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের লাশ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
নিহত বাংলাদেশিরা হলেন, ফয়সাল আহমেদ, আলিফউজ্জামান, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, মো. রকিবুল হাসান, সানজিদা হক, মো. হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, এফ এইচ প্রিয়ক, তামাররা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, পিয়াস রায়, উম্মে সালামা, অনিরুদ্ধ জামান, মো. নুরুজ্জামান ও মো. রফিকুজ্জামান, ফ্লাইটের পাইলট আবিদ সুলতান, পৃথুলা রশীদ, শারমীন আক্তার নাবিলা ও খাজা হুসাইন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর একটি বিমানে মরদেহগুলো দেশে আনা হবে। বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টারমাক-১ এ অবতরণ করবে। সেখান থেকে মরদেহগুলো সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। এর আগে মরদেহবাহী বিমানটি কুর্মিটোলায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে অবতরণ করবে বলে জানানো হয়েছিল।
একই সময়ে নেপালে যাওয়া নিহতদের স্বজনদের দেশে নিয়ে আসবে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট। এটি শাহজালালে অবতরণ করবে।
ছবি: রাজীব ধর ও রামিম হাসান।