X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরলেন রফিক জামান, কাঁদলেন প্রতিবেশীরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ মার্চ ২০১৮, ২২:৫২আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৮, ২৩:১৮






রফিক জামান রিমু, সানজিদা হক বিপাশা ও তাদের সন্তান অনিরুদ্ধ জামান বাবা ইঞ্জিনিয়ার হাজী জহিরুল ইসলামের চাকরির সুবাদে রাজধানীর শুক্রাবাদে বেড়ে উঠেছিলেন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার রফিক জামান। ছেলেবেলায় যে মাঠে তিনি খেলাধুলা করে বড় হয়েছিলেন, সেই মাঠেই তার জানাজা হয়েছে। তার মরদেহ এক নজর দেখার জন্য শুক্রাবাদের অফিসার্স কলোনি মাঠে অনেকে ভিড় করেছেন, জানাজায় অংশ নিয়েছেন অনেকে। আত্মীয়-স্বজনের বাইরে প্রতিবেশী ও যাদের নিয়ে তিনি কাজ করেছেন, তারা সবাই শোকে বাকরুদ্ধ। কেঁদেছেনও অনেকে।
গত ১২ মার্চ নেপালের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা ও পুত্র অনিরুদ্ধ জামান নিহত হয়েছেন। সোমবার (১৯ মার্চ) দুপুরে তাদের লাশ দেশে আনা হয়। বিকেলে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে মাগরিব নামাজের পর নিয়ে আসা হয় শুক্রাবাদের বাসায়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় শুক্রাবাদ আফিসার্স ক্লাব কলোনি মাঠে। রাত ৯টায় জানাজা শেষে তাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে। আগামীকাল মঙ্গলবার (২০ মার্চ) সকালে তাদের দাফন সম্পন্ন হবে।
শুক্রাবাদ অফিসার্স মাঠে জানাজা সন্ধ্যার পর থেকে আফিসার্স ক্লাব কলোনি মাঠে রফিক জামানের হাতে গড়া সংগঠন প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি) ও সোসাইটি অব দ্য ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাংগুয়েজ ইউজার্সের (এসডিএসএল) সদস্যরা জড়ো হতে থাকে। সাড়ে ৭টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স মাঠে ঢুকতেই কেঁদে ওঠেন অনেকে। রাত ৯টায় জানাজার নামাজ শেষে প্রিয় মানুষগুলোকে বিদায় জানান তারা। এসময় শেষ শ্রদ্ধা হিসেবে নিহতদের কফিনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষ থেকে, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জানাজার আগে স্থানীয় জামে মসজিদের ইমামসহ প্রতিবেশীরা জানান, রফিক জামান ছিলেন একজন সৎ ও সংগ্রামী মানুষ। তিনি ছোটবেলা থেকে শান্ত মানুষ ছিলেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সমাজের বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। বিশেষ করে তার হাতে গড়া প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সংগঠনই তার জীবন সংগ্রামের ছবি ফুটিয়ে তোলে। এর আগে গত ১৫ মার্চ মানিক মিয়া এভিনিউতে মোমবাতি প্রজ্বালন করে তাদের স্মরণ করেন প্রতিবন্ধীরা।
জানাজায় অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন রফিক জামানের স্ত্রী সানজিদা হক।
বদিউল আলম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এক নক্ষত্রকে হারিয়েছি। সব সময়ই সামাজে আলো জ্বালানোর জন্য কাজ করে গেছেন এই দম্পতি। এমন সোনার মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারা যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।’
রফিক জামানের কর্মময় জীবন থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামে কাজ শুরু করেন তিনি। ফোরামে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৮ সালে তাদের সংগঠিত করেন। গড়ে তোলেন সোসাইটি অব দ্য ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজার্স (এসডিএসএল)। প্রতিষ্ঠাতাকালীন কোষাধ্যক্ষও ছিলেন তিনি।

শেষ শ্রদ্ধা রফিক জামান মনে করতেন, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীরা কেবল ভাষাগত যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতার কারণে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই তিনি প্রথম বাংলা ইশারা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলেন, ইশারা ভাষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করেন দোভাষী।
২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রফিক জামানের প্রচেষ্টায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো বাংলা ইশারা দোভাষী ব্যবহার করা হয়। ২০১০ সাল থেকে বাংলা ইশারা ভাষা দিবসও পালন করছে এসডিএসএল। এই দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিও ছিল তাদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তৃতীয় গ্রেডের সরকারি দিবস হিসেবে ৭ ফেব্রুয়ারিকে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রফিক জামান মনে করতেন, নির্যাতিত ও ধর্ষণের শিকার শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুরা যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য থানাসহ জেলা আদালতে জবানবন্দি নেওয়ার জন্য বাংলা ইশারা ভাষায় প্রশিক্ষিত দোভাষীদের সহায়তা রাখার উদ্যোগ নেন তিনি। একপর্যায়ে বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও ইশারা ভাষা আইন প্রণয়ন নিয়েও তিনি কাজ করেছেন।
গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই উড়োজাহাজে থাকা ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ আরোহীর ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। ৩২ যাত্রীসহ ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। পারিবারিক ভ্রমণে নেপালে যাওয়া রফিক জামান রিমু, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা ও সন্তান অনিরুদ্ধ জামান ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

 

/এসএস/এইচআই/
সম্পর্কিত
ইউএস বাংলার সার্ভিসের মান মনিটরিং করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি
‘তারা কীভাবে জানলো পাইলট ধূমপান করছিলেন’
নেপালে বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনের দেরিতে সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ
সর্বশেষ খবর
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট