৬০ বছরের পুরনো ভবন সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রূপে আসছে রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’। ভবনের মূল কাঠামো ঠিক রেখে যুক্ত করা হচ্ছে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্যশৈলী। সঙ্গে আধুনিক সময়ের চাহিদা মেটাতে আনা হচ্ছে অবকাঠামোগত পরিবর্তন। হোটেলের মূল নকশাতেও এজন্য আনা হয়েছে কিছু পরিবর্তন। বিপুল এ কর্মযজ্ঞ প্রায় শেষের পথে। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, অবশিষ্ট কাজ শেষে এ বছরের জুনের শেষদিকেই উদ্বোধন করা যেতে পারে হোটেলটি।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বাকি পাঁচতারকা মানের হোটেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেই হোটেলটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছরই এই সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নিখুঁতভাবে কাজ করতে গিয়ে সময় বেশি লেগেছে। এখন চলছে শেষ সময়ের রঙের কাজ। কর্তৃপক্ষের আশাবাদ, সংস্কার শেষে এ বছরের জুনের দিকে আবার চালু করা যাবে। আর চালু হওয়ার পর দেশি-বিদেশি অতিথিদের কাছে ফের জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা।
দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে কখনও ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’, কখনও ‘হোটেল শেরাটন’, কখনও ‘রূপসী বাংলা’ নামে রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে পাঁচতারকা মানের এই হোটেল। প্রায় তিন দশক পর আবার এই হোটেলের ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হচ্ছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল।
রূপসী বাংলার বিপণন ও যোগাযোগ পরিচালক সাহিদুস সাদিকের কাছে জানা যায়, ১৯৬৬ সালে শাহবাগে প্রায় সাড়ে চার একর জমির ওপর যাত্রা শুরু করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা। ১৯৮৪ সালে হোটেলটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় শেরাটন। ২০১১ সালের এপ্রিলে শেরাটন চলে গেলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) তত্ত্বাবধানে ‘রূপসী বাংলা’ নামে চলতে থাকে হোটেলটি। পরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের ৩০ বছরের চুক্তি হলে হোটেলটির সংস্কারে হাত দেয় তারা। ১৯৮৩ সালের পর ফের ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’ নামে চালু হবে শাহবাগের পাঁচতারকা এই হোটেলটি।
মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) সরেজমিন দেখা গেছে, চারদিকে দেয়ালে ঘেরা হোটেলে শ্রমিকরা সংস্কার কাজে ব্যস্ত। প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। ভেতরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে জেনারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। দেয়ালের গাঁথুনির কাজ শেষে চলছে রঙের কাজ।
হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে এই হোটেলে অতিথিদের জন্য ২৭০টি রুম ছিল। প্রতিটি রুমের আয়তন ছিল ২৬ বর্গমিটার, যা পাঁচতারকা হোটেলের সঙ্গে মানানসই নয়। এ জন্য ২৭০টি রুমকে ভেঙে এখন করা হয়েছে ২২৬টি। এতে প্রতিটি রুমের আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ বর্গমিটারে। এছাড়া, মোট মিটিং রুমের আয়তন করা হয়েছে ২১ হাজার বর্গফুট। সুইমিংপুলসহ বাকি সব অবকাঠামোতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
নতুন কাঠামোতে সুইমিংপুল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হোটেলের ছাদে। আর এর ঠিক নিচে আগের সুইমিংপুলের জায়গায় তৈরি হচ্ছে বলরুম। আগের বলরুমের জায়গায় স্থান পাচ্ছে রান্নাঘর। নতুন মিটিং রুমে রয়েছে সাতটি সভাকক্ষসহ ছোট-বড় ৯টি মিটিং রুম ও ৫টি রেস্তোরা। কর্তৃপক্ষ বলছেন, উচ্চগতির ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সব প্রযুক্তি ও সেবার ছোঁয়া থাকবে এই হোটেলে।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপের বিপণন ও যোগাযোগ পরিচালক সাহিদুস সাদিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’র অতিথিদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকছে। এর মধ্যে রয়েছে—মিনি বার, ইন-রুম চা-কফির সেবা, জামাকাপড় ইস্ত্রির সুবিধা, জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক নিরাপত্তা, উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ, এক্সপ্রেস চেক ইন, বিজনেস সেন্টার, ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট, এক্সিকিউটিভ ক্লাব লাউঞ্জ, ব্যবসা কেন্দ্র, মিটিং কক্ষ, উপহারের দোকান, গাড়ি ভাড়া, লিমুজিন ও এয়ারপোর্ট শাটল সার্ভিস, ফিটনেস সেন্টার, সুইমিংপুল এবং বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের দিকনির্দেশনা সংবলিত গাইড বই।
সাহিদুস সাদিক বলেন, সংস্কার কাজের ক্ষেত্রে প্রতিটি রুমের আকারেই শুধু নয়, বিন্যাসেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আধুনিক এই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাঁচতারকা হোটেলে যেসব সুবিধা রয়েছে, তার সবই থাকবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায়।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ মে পাঁচতারকা এই হোটেলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারি সংস্থা বিএসএলকে বুঝিয়ে দেয় তৎকালীন শেরাটন কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ‘শেরাটন’ নাম বদলে রাখা হয় ‘রূপসী বাংলা’। পরে ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ইন্টারকন্টিনেন্টের সঙ্গে চুক্তি করে বিএসএল। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কারের জন্য বিরতিতে যায় হোটেলটি।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল জানান, হোটেলের সংস্কারের কাজ ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করে ওই বছরের অক্টোবরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপের (আইএইচএস) কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। তবে প্রশাসনিক সমস্যা ও দক্ষ জনবল নিয়োগে ব্যর্থ হওয়ায় সেই কাজ শেষ হয়নি।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, জুন মাসের শেষ নাগাদ চালু করা যাবে হোটেলটি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম