X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্যোগ সত্ত্বেও গতিহীন নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ

এমরান হোসাইন শেখ
২১ এপ্রিল ২০১৮, ১০:২৬আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:০৯


নির্বাচন কমিশন

রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতিহীন রোডম্যাপে গতি ফেরাতে কমিশন মাঝে কিছুটা তৎপরতা দেখালেও তা হালে পানি পায়নি। ফলে রোডম্যাপের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কমিশন বলছে, রোডম্যাপে ছন্দপতন হলেও জাতীয় নির্বাচনে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এগিয়ে চলছে বলে ইসি দাবি করেছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ কার্যক্রমের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা ও ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গত বছরের ১৬ জুলাই নির্বাচনি কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করে। দেড় বছর মেয়াদি এই রোডম্যাপে কমিশন সাতটি সুনির্দিষ্ট করণীয় নির্ধারণ করে। এগুলো হলো- আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার; নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ; সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং সরবরাহ; বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।

রোডম্যাপের করণীয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংলাপ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ ছাড়া কোনও কাজই সময়মতো শেষ হয়নি। এরমধ্যে ভোটার তালিকার বিষয়টি রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি আইনি কারণেই নির্ধারিত সময়ে (প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি) শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এদিকে সংলাপ প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারলেও সময়মতো তার সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পারেনি ইসি। গত ডিসেম্বরের মধ্যে সংলাপের সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর কথা থাকলেও তা শেষ করতে এপ্রিলে এসে ঠেকেছে।

রোডম্যাপ বাস্তবায়ন সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আইন ও বিধি সংস্কারের দিক থেকে। গত ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচটি আইন ও নয়টি বিধিমালার সংস্কার চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও এগুলোর কোনোটিই এখনও সম্পন্ন করতে পারেনি কমিশন। আইন সংস্কার কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ায় রোডম্যাপে গতি আনতে কমিশন ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কিছুটা সক্রিয় হয়। দ্য রিপ্রেজেনটেশন অব দ্য পিপল অর্ডিন্যান্স, ১৯৭২ (গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-আরপিও) ও সীমানার নির্ধারণ আইনটি নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়। পর পর কয়েকটি বৈঠক করে আইন দুটির খসড়া চূড়ান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ সময়ে তা না পেরে আবারও এটিকে পর্যালোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আইন সংস্কার নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

অবশ্য কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আইন সংশোধন না হলেও কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতায় আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন করতেই হবে। ফলে জুনের বাজেট অধিবেশনে আরপিও’র সংশোধনী পাস করানোর চেষ্টা করছে তারা। সেটা না হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটা করা হতে পারে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে সীমানা পুনর্বিন্যাস আইনটি সংশোধনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারা। তাদের মতে, বিদ্যমান আইনেই সীমানা পুনর্বিন্যাসের কার্যক্রম প্রায় এগিয়ে এনেছে কমিশন। এ কারণে নির্বাচনের আগে আইনটি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী গত বছর অক্টোবরে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে দাবি-আপত্তি-সুপারিশ নিষ্পত্তি করে ডিসেম্বরে সীমানা চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের কথা ছিল। কিন্তু এখানেও নির্বাচন কমিশন চার মাস পিছিয়ে গেছে। গত ১৪ মার্চ কমিশন সীমানার খসড়া প্রকাশ করে দাবি-আপত্তির সময় দিয়েছে। শনিবার থেকে (২১ এপ্রিল) এই খসড়ার ওপর শুনানি শুরু হবে। কমিশন বলেছে, আগামী ৩০ এপ্রিল তারা সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস চূড়ান্ত করবে।

রোডম্যাপে কমিশন বিদম্যান দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে জানুয়ারির মধ্যে তাদের নিবন্ধন বহাল রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল। একইসঙ্গে আগ্রহী দলগুলোর কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহ করে ফেব্রুয়ারি মাসে এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়ার কথা ছিল। পরে মার্চ মাসে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময় অতিক্রম করলেও কাজ দুটি এখনও শেষ হয়নি। বর্তমানে দুটি কাজ চলমান রয়েছে। আগামী মে মাসে এটা চূড়ান্ত হতে পারে বলে কমিশনের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে নতুন এই সীমানার ওপর ভিত্তি করে আগামী জুন থেকে সব নির্বাচনি এলাকার জন্য ছবিসহ ভোটার তালিকা মুদ্রণ ও ভোটার তালিকার সিডি প্রণয়ন ও বিতরণ করার কথা রয়েছে। জুলাই থেকে নির্বাচনি এলাকাভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় দফতরে পাঠাবে ইসি। নির্বাচন কমিশনের নিয়মতান্ত্রিক এই কাজগুলো শেষ করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে জানিয়েছেন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোডম্যাপের শিডিউল অনুসারে শেষ না হলেও এতে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে করণীয় কাজ তা করা হচ্ছে এবং যেটা বাকি রয়েছে সেটা সময়মতো করা হবে এবং এই সময় কমিশনের হাতে রয়েছেও।’

এ বিষয়ে ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘যেকোনও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে। কমিশন রোডম্যাপ অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে না মানে এই নয় যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থেকে পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি সঠিকভাবেই চলছে।’ রোডম্যাপের বিচ্যুতিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কোনও ধরনের প্রভাব পড়বে না বলেও দাবি করেন তিনি।

 



/এইচআই/আপ-এসটি/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক 
তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক 
গাজায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
গাজায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
জেল থেকে বেরিয়ে ফের শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রে জড়ান শিশুসাহিত্যিক টিপু!
জেল থেকে বেরিয়ে ফের শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রে জড়ান শিশুসাহিত্যিক টিপু!
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…