X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস নৈরাজ্যে জড়িত’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:৩২আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:৪৬







বাংলাদেশ যাত্রীকল্যা্ণ সমিতির গোলটেবিল আলোচনা

রাজধানীতে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার সঙ্গে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস জড়িত বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শনিবার (২১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সড়কে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ দাবি করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে বাসে-বাসে রেষারেষি করে বেপরোয়া চলাচল ও পাল্লাপাল্লির কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রীরা। যত্রতত্র বাস থামানো, মাঝ রাস্তায় গতি কমিয়ে চলন্ত বাসে যাত্রী ওঠানামা করানো, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, রাস্তার মোড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, যাত্রী ধরার জন্য বাসে বাসে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা, অব্যবস্থাপনা এবং বিশৃঙ্খলা ঢাকার গণপরিবহনের নিত্যদিনের চিত্র।
বক্তারা আরও বলেন, প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কে ঝরছে কমপক্ষে ৬৪টি প্রাণ। প্রতিদিন আহত ও পঙ্গুত্বের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ১৫০ জনের বেশি মানুষ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা এক সমীক্ষায় বলা হয়, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ। একইসঙ্গে অনিবন্ধিত, ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ৫০ লাখ। এগুলোর মধ্যে ৭২ শতাংশ ফিটনেস অযোগ্য। সারাদেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএ লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়, রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া চলাচল করে। ফলে এসব বাসে দুর্ঘটনায় কারো হাত, কারো পা, কারো মাথা বা কারো জীবন চলে যাচ্ছে।
সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্যমতে, সারাদেশে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত এক হাজার ৭৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৮৪১ জনের প্রাণহানি এবং পাঁচ হাজার ৪৭৭ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে পঙ্গু হয়েছে ২৮৮ জন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এসব দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলতে চাই। কেননা, আমাদের সড়কে সমস্ত অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রেখে নৈরাজ্যকর পরিবেশে আমাদের যাতায়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। নগরীর প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ব্যবসা মূলত চালকরা নিয়ন্ত্রণ করছে। দৈনিক চুক্তিভিক্তিক ইজারায় প্রতিটি মালিক তার বাসটি চালকের হাতে তুলে দিয়েছে। এতেই চালকরা যাত্রী ধরার জন্য বাসে বাসে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এ পরিস্থিতিতে বাস চালাতে গিয়ে বাসের নিচে কে পড়লো বা কার হাত বা পা গেল তা দেখার সময় নেই চালকদের।’
সড়কে মানবাধিকার নৈরাজ্যের চাকায় পিষ্ট বলে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের অন্যতম শর্ত মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, আমাদের সড়কে এই অধিকার অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে আইনের প্রয়োগ থাকলেও আমাদের এখানে প্রকৃতপক্ষে আইনের কোনও প্রয়োগ নেই। সড়ক পরিবহন সেক্টরে নতুন যে আইন করা হচ্ছে তাতে সবার মতামতের প্রতিফলন হয়নি। ফলে এই সেক্টরের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা কঠিন।’
তিনি প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন বিল আকারে পাস করার আগে সবার মতামত নিয়ে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আইনের সন্নিবেশনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একইসঙ্গে এই সেক্টরের সমস্যা সমাধানে যাত্রী সাধারণের মতামত ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে এই সেক্টরে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও দাবি জানান।
ডিটিসিএ’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে মেয়র আনিসুল হকের নেতৃত্বে কাজ করে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সরকারের কাছে দায়ের করেছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ঢাকা শহরের গণপরিবহনের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দূর হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি কায়েমি স্বার্থ রক্ষার জন্য এই সমস্যাগুলো জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহন সেক্টরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উপায়ও বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে সরকারের কাছে দিয়েছে।’
বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘মাদকের হাত থেকে পরিবহন সেক্টরকে রক্ষা করা না গেলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে থাকবে।’ তিনি অনতিবিলম্বে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া আইন না মানার প্রবণতাকে সড়কে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘যারা নিহত হন, তাদের পুরো পরিবারও মারা যায়। কেননা, ওই পরিবারের পরিচালক যখন মারা যায়, তখন পরিবারটির আর অস্তিত্ব থাকে না।’




 আরও পড়ুন:

রাজপথে বাসের নৈরাজ্য ঠেকাতে ১০ সুপারিশ

 

/আরজে/এইচআই/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন