X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনার্জি ড্রিংক নিয়ে ‘পাবলিক মতামত’, সমালোচনার মুখে বিএসটিআই

উদিসা ইসলাম
২৬ এপ্রিল ২০১৮, ২১:০১আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ০৮:৩৬

এনার্জি ড্রিংকস এনার্জি ড্রিংকের জাতীয় মান প্রণয়ন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে উৎপাদনকারী ভিন্ন দেশের ভোক্তা, সচেতন স্টেকহোল্ডারদের মতামত চেয়েছে জাতীয় মান সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন-বিএসটিআই। আগামী ১০ মে তারিখের মধ্যে তাদের জানাতে হবে, এনার্জি ড্রিংকস পণ্যের জাতীয় মান প্রণয়ন করা উচিত কিনা। যদিও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— বিএসটিআইয়ের কথা ছিল তারা মান নিয়ে ইতোমধ্যে যে খসড়া নীতিটা প্রণয়ন করেছে, সেটা পাবলিক করে বিশেষজ্ঞ মতামত নেবে। অথচ এখন পাবলিকের হ্যা/না মতামত জানতে চাইছে তারা। এদিকে, বিএসটিআই বলছে, পাবলিকের এই মতামত বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করেন যারা, তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন— উৎপাদনকারীরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় পাবলিকের মতামত ম্যানুপুলেট করে যদি বেশিসংখ্যক ‘হ্যা’ জমা দেয়,  সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটির বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।

জাতীয় মান সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বিভিন্ন পণ্যের জাতীয় মান প্রণয়ন, সে অনুযায়ী পণ্য পরীক্ষা ও গুনগত মান সনদ প্রদান করে থাকে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ দেশের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিএসটিআই গঠিত কারিগরি কমিটির মাধ্যমে জাতীয় মান প্রণয়ন কার্যক্রম হয়ে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনিক্যাল কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএসটিআই এনার্জি ড্রিংকের লাইসেন্স দিতে চায়। আমরা কয়েকজন বিরোধিতা করেছি। তাদের ওয়েবসাইটে যে নোটিশটি দেখা যাচ্ছে, সেটি  আংশিক। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তারা মান নিয়ে যে খসড়াটা করেছে, সেটা পাবলিক করবে— যেখানে কিনা কী কী উপাদান থাকবে, তার উল্লেখ আছে।

এই সদস্য আরও বলেন, এনার্জি ড্রিংকে ক্যাফেইনের মতো উপাদান বাইরের দেশের পরিমাণ আর আমাদের দেশের পরিমাণ এক হওয়া ঠিক হবে না। এই বিষয়গুলোতে পাবলিক কী বুঝবে।

বিএসটিআইয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া মতামত পত্র বিএসটিআইয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া মতামত আহ্বান পত্রে বলা হয়েছে— ‘এনার্জি ড্রিংক পণ্যের মান প্রণয়নের জন্য বিগত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের দেশের উৎপাদনকারীরা বিএসটিআই বরাবর আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সংবেদনশীল এ পণ্যটির ওপর আদৌ কোনও জাতীয় মান প্রণয়ন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটির একাধিক সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে নীতিগত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছিল না।’

বিএসটিআইয়ের উল্লিখিত বক্তব্য মোটেও যৌক্তিক না উল্লেখ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি অবশ্যই পাবলিক মতামতের বিষয় না। জাতীয় মান প্রণয়ন অবশ্যই জরুরি। এটা কে না জানে? কিন্তু কিসের ভিত্তিতে আপনি এই মতামত চান, সে তথ্যতো জনগণের সামনে থাকতে হবে। কেবল মান প্রণয়ন করা উচিত কিনা, এপ্রশ্ন কেন করা হলো, সেটি আমার বোধগম্য না।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষে হুমায়ুন কবীর  বিএসটিআইয়ের কর্মকাণ্ড বিষয়ে দেখাশোন করেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এখানে তারা এনার্জি ড্রিংক বলতে কী বোঝাচ্ছেন, সেটিই-তো স্পষ্ট করা হয়নি। এই পদ্ধতি ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে করা হয়েছে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। মান নির্ধারণের পর এদেশে সেটা মানারও প্রবণতা নেই। সেখানে জাতীয় মান প্রণয়ন দরকার নেই, এটি কেউ বলবে না। এনার্জি ড্রিংকের এই বিষয়টি যেহেতু ভীষণ সংবেদনশীল, এটি অবশ্যই টেকনিক্যাল কমিটিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই হ্যাঁ অথবা না এর মাধ্যমে পাবলিকের কাছ থেকে কিছু জানার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।’

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিটিংয়ের সদস্য হিসেবে ছিলাম। তারা খসড়া করেছে যেটি পাবলিক করার কথা ছিল, কিন্তু সেটিতো দেয়নি। কত এমজি ক্যাফেইন থাকবে, কতটুকু কী উপাদান থাকবে, এটিসহ বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হবে। পাশাপাশি পাবলিক করে দেবেন। কিন্তু পাবলিকের মতামত নেওয়ার কথা ছিল না। মানের যে খসড়া সেটি পাবলিক করে দিয়ে, তবে মতামত নিতে হবে যে, এভাবে আমরা মান করবো কিনা, বা লাইসেন্স দেবো কিনা।’

বিএসটিআই তিনি আরও বলেন, ‘বিএসটিআই তাদের ওয়েবপেজে দিয়েছে, এতে সঠিক মতামত বা সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমার মনে হয় না।’

শিশু অধিকার কর্মী গওহার নঈম ওয়ারা মনে করেন, এত বড় সিদ্ধান্ত হ্যাঁ বা না ভোটের মধ্য দিয়ে হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘পদ্ধতি হিসেবে এটি একেবারেই ঠিক নেই। পাবলিকের কাছে এনার্জি ড্রিংক সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। অথচ তাদের কাছ থেকে মন্তব্য নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, আসলে তারা যে জাতীয় মান প্রণয়ন করার কথা বলছেন, সেটিতে কী আছে। সেটি পাবলিক করে বিশেষজ্ঞ মতামত চাওয়া যেতে পারে।’

সাধারণ মানুষ কীভাবে এধরনের বিষয়ে তথ্য না জেনে মন্তব্য করবেন, প্রশ্ন তুলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অ্যানালিস্ট আরিফিন রব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাবলিক তো ফুড অ্যানালিস্ট না, তাদের কাছে যথেষ্ট তথ্যও নেই। সেক্ষেত্রে হ্যাঁ-না দিয়ে তারা কী করে তাদের মতামত দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক যদি সেটুকু সচেতন হতো, জানতো যে এরমধ্যে কী আছে না আছে, তাহলে এভাবে গোগ্রাসে খেতো না।’

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (মান) নিলুফার হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও স্টেকহোল্ডার মতামত দিতে পারবেন। উৎপাদনকারীরা পাবলিকের মতামতকে ম্যানুপুলেট করতে চাইলে কী হবে, মতামত নেওয়ার পরে সেটিতো আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে দেওয়া হবে। সবার মতামত সেখানে (বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ) সাবমিট করলে, তারা এটির ভিত্তিতে মতামত দেবেন, বিএসটিআই এর কোনও মতামত নেই।’

 

/ইউআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!