X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৬১ বিষয়ে সুপারিশ প্রত্যাখান অগ্রহণযোগ্য: এইচআরএফবি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ মে ২০১৮, ২০:৫৪আপডেট : ২০ মে ২০১৮, ২১:০৭

সংবাদ সম্মেলন জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ৩০তম অধিবেশনে পদ্ধতি বা ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ে (ইউপিআর) ১০৫টি দেশ বাংলাদেশকে ২৫১টি সুপারিশ করেছে। এরমধ্যে ৬১টি বিষয়ে সুপারিশ প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশ। এটিকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) বলেছে, এ অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিসরে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে দুর্বল করে তুলছে।

রবিবার (২০ মে) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে ‘জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা: হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের (এইচআরএফবি) অবস্থান ও দাবি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে এইচআরএফবি। 

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ইউপিআরে ১০৫টি দেশ বাংলাদেশকে ২৫১টি সুপারিশ করেছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৭টি সুপারিশ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক বিবেচনায় স্পর্শকাতর বা যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় ২৩টি সুপারিশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সরকার হিউম্যন রাইটস কাউন্সিলের ৩৭তম অধিবেশন পর্যন্ত সময় নিয়েছে; যা অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের শেষদিকে। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ৬১টি বিষয়ে সুপারিশ প্রত্যাখান করেছে, যা একেবারে অগ্রহণযোগ্য এবং এটি আন্তর্জাতিক পরিসরে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে দুর্বল করে তুলছে।’ 

দ্বিতীয় ইউপিআর পর্যালোচনায় বাংলাদেশ মাত্র ৫টি বিষয়ে সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছিল। এছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যমান মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পর তাদের গৃহীত উদ্যোগগুলোর ওপর যে উপস্থাপনা তুলে ধরেছে, তার অনেক কিছুর সঙ্গে ফোরামের দ্বিমত আছে বলে উল্লেখ করেছে। বিশেষত, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন, নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের উদ্যোগ ও বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে সরকারের বক্তব্য বাস্তবতার প্রতিফলন নয় বলে ফোরাম মনে করে।

সম্মেলনে ফোরামের অবস্থান সম্পর্কিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সমন্বয়ক ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কর্মী তামান্না হক রীতি।  

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ফোরামের সদস্য সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সুপারিশ গত তিন অধিবেশনেই এসেছে। সরকার প্রতিবারই বলেছে, তারা এ চুক্তি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। কিন্তু যেভাবে এগোচ্ছে তাতে প্রতীয়মান হয় আগামী ইউপিআরের (আরও সাড়ে চার বছর পর) আগেও এ চুক্তি বাস্তবায়নে খুব একটা অগ্রগতি দেখানো যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার ভুলে যায় মানবাধিকার বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাময়িকভাবে সম্ভব মনে হলেও তা স্থায়িত্ব পাবে না।’

কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা বলেন, ‘সরকার মানবাধিকার পরিস্থিতির যে চিত্র তুলে ধরেছে, তা দেখে মনে হচ্ছে মানবাধিকার সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেশে নেই। সরকারের এতই যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে কেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধিদের উন্মুক্ত আমন্ত্রণ জানানোর সুপারিশ সরকার গ্রহণ করছে না!’ 

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকার গত দেড় বছরে তিনটি মানবাধিকার সংক্রান্ত পর্যালোচনায় অংশগ্রহণ করেছে, ২০১৭ সালের মার্চে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদের এবং ২০১৮ সালের মার্চে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদের বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং মে ২০১৮ সালে ইউপিআরের আওতায় সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা। গুরুত্বপূর্ণ যে সরকার এসব ব্যবস্থায় অংশ নিচ্ছে কিন্তু এ অংশগ্রহণ অর্থবহ করে তুলতে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে।’

এছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ফোরামের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, যেসব সুপারিশ গ্রহণ করতে রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার কথা বলে সরকার সময় নিয়েছে, সেগুলো দ্রুত গ্রহণ করে নেওয়া; যেসব সুপারিশ সরকার সমর্থন করেনি সেগুলো অবশ্যই পুর্নবিবেচনা করা। দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আন্তজার্তিক মানবাধিকার বাধ্যবাধকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সম্মান উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে এসব সুপারিশ গ্রহণ করে নেওয়া; তারপরও যদি কোনও সুপারিশ সরকার গ্রহণ করতে না চায়, সেটার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে ব্যাখ্যা দেওয়া; কেবল সুপারিশ গ্রহণ করে নেওয়া নয়, চূড়ান্ত অবস্থানে সব সুপারিশ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করা; চূড়ান্ত অবস্থান জানানোর আগে নাগরিক সমাজ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা; সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সম্পৃক্ত করে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সুপারিশগুলো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়ন ও নিয়মিত পরিবীক্ষণের ওপর জোর দেওয়া; প্রতিবছর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা এবং তা জনগণ, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা।

/এসজেএ/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া