X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

একাদশ-দ্বাদশের পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস

রশিদ আল রুহানী
২১ মে ২০১৮, ১২:২৭আপডেট : ২২ মে ২০১৮, ০৯:০৬

একাদশ-দ্বাদশের পাঠ্যবই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। এই পরিবর্তনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাঠ্যবই দুটি সম্পর্কে সুপারিশ ও পরামর্শ সংগ্রহের জন্য কর্মশালা শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ইতোমধ্যে ওইসব কর্মশালা থেকে বেশ কিছু সুপারিশও এসে পৌঁছেছে এনসিটিবিতে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে পাঠ্যবই দুটিতে ব্যাপক রদবদল হতে পারে বলেও মনে করেন এনসিটিবি’র একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, প্রতি তিন-চার বছর পর পর পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের জন্য মাঠপর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার বিষয়ে প্রাথমিক পর্যালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায় থেকে বই দুটির কিছু কনটেন্ট পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এনসিটিবি ওই সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করতে একটি কমিটিকে দিয়েছে। ওই কমিটির দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতেই পাঠ্যবই দুটি পরিবর্তনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেগুলোর ‘ট্রাইআউট’ করা হচ্ছে। এখন সেসব তথ্য একটি কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য দেওয়া হয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে যদি পরিবর্তন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে সেভাবেই সুপারিশ দেবেন। তার আগে তারা একাধিক কর্মশালাও করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যদি এসব কর্মযজ্ঞ শেষ করা সম্ভব হয়, তাহলে এ বছর পরিবর্তন হবে, আর যদি জুন পেরিয়ে যায়, তাহলে আগামী বছর পরিবর্তন আনা হবে।’

এদিকে এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, বই দুটিতে মাঠপর্যায় থেকে রদবদলের যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তার প্রায় সবই যৌক্তিক। ফলে কমিটি বেশিরভাগ অংশেই পরিবর্তনের সুপারিশ করতে পারেন।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দুটি বইয়ে পরিবর্তনের বিষয়ে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকদের নিয়ে কর্মশালা শেষ করা হয়েছে। বাংলা বইয়ে রদবদলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে আসা চারপৃষ্ঠার সুপারিশে বলা হয়েছে—একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি জসীমউদদীন, সৈয়দ মুজতবা আলী, এই তিনজনের কোনও রচনা না থাকা দুর্ভাগ্যজনক মনে করেছেন অনেকে। আরও বলা হয়েছে, জসীমউদদীন, সৈয়দ মুজতবা আলী সর্বস্তরের মানুষের আবেগের অনুষঙ্গ। পল্লীকবির ক্ষেত্রে এই আবেগের বিষয়টা বেশি প্রাসঙ্গিক। তাদের বাদ দিয়ে সিলেবাস তৈরি করা সমীচীন নয় বলেও মনে করেন অনেকে। এছাড়া, মীর মোশাররফ হোসেন, ফররুখ আহমদ ও প্রমথ চৌধুরীর লেখা গদ্য-পদ্য না থাকায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়েছে—সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও পাঠ্যবইয়ে কতিপয় লেখকের রচনা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তাদের মধ্যে অন্নদা শঙ্কর রায়, হুমায়ূন আহমেদ, বিহারীলাল চক্রবর্তী, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

সিলেবাস বৈচিত্র্যহীন দাবি করে বলা হয়েছে—এতে গদ্যে মননশীল ও সুচিন্তিত প্রবন্ধের অভাব আছে। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ হলেও এই মানের আরও প্রবন্ধ থাকা উচিত। বিশেষ করে প্রমথ চৌধুরী কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা দেখতে চান শিক্ষকরা। নৈতিকতা, দেশাত্মবোধ, মুক্ত ও উদার মনন গঠনের উপযোগী রচনার সন্নিবেশ থাকার পক্ষে শিক্ষকরা জোরালো মত দিয়েছেন। কবিতার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যহীনতার বিষয়টি অনেক বেশি। সেই ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতা শিক্ষকদের তেমন টানে না বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, রক্ত আমার অনাদি অস্থি ও নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়, কবিতাগুলো একই ভাববস্তুকেন্দ্রিক বলে মনে করেন অনেকে।

পাঠ্যবইয়ে নারী লেখকদের মাত্র দুটি রচনা রয়েছে, এটি লিঙ্গবৈষম্য করা হয়েছে। তাই নারী লেখকের লেখা আরও যুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে সুপারিশে।

শিক্ষকদের সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেগম রোকেয়ার ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের উপযোগিতা প্রশ্নসাপেক্ষ। একালের ছেলেমেয়েদের কাছে এটা উদ্ভট মনে হতে পারে। এছাড়া, চাষা শব্দটি গালিবিশেষ। বেগম রোকেয়াকে বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে মনে করা হয়। তাই তার অন্য রচনা অন্তর্ভুক্তির দাবি রাখে।

যৌতুক প্রথাবিরোধী ‘অপরিচিতা’ পরিবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ বেশি মর্মভেদী বলে মনে করেন শিক্ষকরা। এছাড়া, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাসি-পিসি গল্পে সমর্থন নেই অনেকের। অন্যদিকে, বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় কিছু ভাষাগত পরিবর্তন আনার পক্ষে মত দেন অনেকেই। ‘জাদুঘরে কেন যাবো’ রচনাটি স্কুলপর্যায়েই বেশি মানানসই মনে করে এটা সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে সুপারিশে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা ‘রেইনকোট’-এর পরিবর্তে আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘কলিমদ্দি দফাদার’ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’, ‘নেকলেস’, ‘লোক-লোকান্তর’ গল্পগুলো সিলেবাসের অনুপযোগী বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, একাদশ শ্রেণির বাংলা বইয়ের নাম ‘সাহিত্য পাঠ’-এর বদলে (দুই শব্দের মাঝখানে স্পেস না রেখে) ‘সাহিত্যপাঠ’ লেখার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সমাসবদ্ধ তৎসম শব্দ হিসেবে আলাদা শব্দ হওয়ার সুযোগ নেই। হাইফেন দিয়ে যুক্ত করলে এর অর্থগত বিপত্তি সৃষ্টি হতে পারে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ইংরেজি পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনের বিষয়ে মাঠপর্যায় থেকে আসা সুপারিশে ইংরেজি পাঠ্যবইয়ের রচনাগুলো আরও সহজ ভাষায় লেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কিছু পদ্য ও গদ্যের রদবদলের কথাও বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সময়োপযোগী ও মানসম্মত সুপারিশগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবর্তনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

/এপিএইচ/ আপ-এসটি/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দোয়া চেয়ে আইপিএল খেলতে গেলেন মোস্তাফিজ
দোয়া চেয়ে আইপিএল খেলতে গেলেন মোস্তাফিজ
‘চোখের পানি ফেলে বাজার থেকে ফিরতে হয়’
‘চোখের পানি ফেলে বাজার থেকে ফিরতে হয়’
ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে মিলিয়নিয়ার হলেন কুমিল্লার হুমায়ুন
ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে মিলিয়নিয়ার হলেন কুমিল্লার হুমায়ুন
কলেজ চত্বর থেকে অসুস্থ ভুবন চিল উদ্ধার
কলেজ চত্বর থেকে অসুস্থ ভুবন চিল উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই