X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে এখনও কমেনি ইয়াবার সরবরাহ

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
২৩ মে ২০১৮, ১০:০৫আপডেট : ২৪ মে ২০১৮, ১০:১৪

ইয়াবা

সাঁড়াশি অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও রাজধানীর মাদক স্পটগুলো এখনও সচল। রাজধানীসহ এর পাশের এলাকাগুলোতে গোপনে মিলছে ইয়াবা। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সরবরাহ কমে যাবে; মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাদকের চালান পৌঁছাতে ব্যবসায়ীরা অনেক পথ অবলম্বন করে থাকে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম থেকে একটি ইয়াবার চালান ঢাকায় নিতে মাদক ব্যবসায়ীরা কয়েকটি রুট ব্যবহার করে। এরমধ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম, পাথরঘাটা, আবার কোনও কোনও চালান বরিশাল হয়েও ঢাকায় ঢুকছে। তবে ইয়াবার সরবরাহ এখন পর্যন্ত থাকলেও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন সূত্রটি।

এদিকে সোমবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর মুগদা থেকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আক্তারুজ্জামান নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। গাজীপুর জেলার টঙ্গী বাজার এলাকা থেকে ৪০ হাজার ১৩৫ পিস ইয়াবাসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‌্যাব বি-১। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার স্টেশন রোড এলাকা থেকে ছয় হাজার পিস ইয়াবাসহ মো. শফিকুল ইসলাম (২৮) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‌্যাব।
সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর কাওরানবাজার, তেজগাঁও, মহাখালীর সাততলা বস্তি, শাহবাগ, নিউমার্কেট, মতিঝিল, শাহ আলী, শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, গেন্ডারিয়াসহ গাজিপুরের টঙ্গী স্টেশন রোড, নিমতলী, এরশাদনগরসহ বিভিন্ন মাদক স্পটে গোপনে মিলছে ইয়াবা। তবে এসব স্পটের মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি আমরাও সমানতালে অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা সফলতাও পাচ্ছি।’
মাদকের সরবরাহ কমেছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ মাদকের বিভিন্ন চালান উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে মাদক ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন চালান সরবরাহের চেষ্টায় রয়েছে। তবে সারাদেশে আমাদের এই অভিযানের কারণে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। সে কারণে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে রাজধানীতে মাদকের সরবরাহ কতখানি কমেছে সেটির নির্দিষ্ট কোনও তথ্য এখনও নেই। সরবরাহ কমেছে কিনা, সেটি আরও কিছু দিন পর বোঝা যাবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযানের ফলে ঢাকার বাইরে থেকে ইয়াবার চালান আসা কমেছে কিনা, সেটি বলা একটু ডিফিকাল্ট (কঠিন)। তবে মাদক নির্মূলের বিষয়ে আমরা কমিটেড (বদ্ধপরিকর)। আমরা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রস্তুতের কাজ করছি।’

মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। চলমান অভিযানে ৪-২২ মে পর্যন্ত দেশের ১৯ জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৩৮ জন চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। যেসব জেলায় বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো হলো- নীলফামারী, দিনাজপুর, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, ফেনী, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চুয়াডাঙ্গা, সৈয়দপুর ও গাজীপুর।

৩৮ জনের মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় দেশের ১১ জেলায় মোট ১৭ জন মাদক ব্যবসায়ী। নিহতরা সবাই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি র‌্যাবের। চট্টগ্রামে ৩ জন, যশোরে ৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ২ জন, রাজশাহীতে ২ জন; টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, ফেনী, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন করে। এদিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোনা, যশোর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, নীলফামারী, দিনাজপুর ও গাজীপুরে ১৪ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। গত ২০ মে যশোর সদরের খোলাডাঙ্গা ও মণ্ডলগাতির মাঝামাঝি এলাকা এবং তরফনওয়াপাড়ায় ‘নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি’তে ৩ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ৪ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের ৪-২২ মে পর্যন্ত র‌্যাব ফোর্সের দেশব্যাপী ৬০৫টি মাদকবিরোধী আভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরমধ্যে মাদক সংক্রান্ত ৬৯৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও অভিযানে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩০১ পিস ইয়াবা, ৩.৩৫৯ কেজি হেরোইন, ৬ হাজার ৩১৩ বোতল ফেনসিডিল, ১৭১.৭৩১ কেজি গাঁজা, ২ হাজার ৩১ বোতল বিদেশি মদ, ১ লাখ ৮ হাজার ৩ লিটার দেশি মদ জব্দ করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দেশ থেকে মাদককে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। এরজন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। যদি দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা যায়—তবে হত্যা, ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।’

/এনআই/আপ-এসটি/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা