X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে বেড়েছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ব্যয়

শফিকুল ইসলাম
২৪ মে ২০১৮, ১২:৪১আপডেট : ২৪ মে ২০১৮, ১৯:৪৩

পদ্মা সেতু (ছবি: ফোকাস বাংলা) পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। জমির মূল দামের তুলনায় তিনগুণ বেশি দামে এই জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে সরকারকে। তবে চীন এতে রাজি হয়নি। দেশীয় অর্থেই এই ব্যয় মেটানো হচ্ছে। তাই বেড়েছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ব্যয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় দুই বছর বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথটি যশোর গিয়ে মিলিত হবে। এর নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মঙ্গলবার (২২ মে) অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে এটি অনুমোদন করা হয়েছে। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ব্যয়বৃদ্ধির এই টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। অন্যদিকে চীনের ঋণ সহায়তা কমেছে। ফলে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা।
প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসবে ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা আগে ছিল ১০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে সরকারের তরফ থেকে বরাদ্দ বাড়ল ৭ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। অন্যদিকে মোট ব্যয়ের মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা চীন সরকারের জি টু জি পদ্ধতিতে আসবে। মূল প্রকল্প বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা।


উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩ মে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নতুন রেলওয়ে স্থাপনের লক্ষ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল একনেক সভায়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের জন্য ৮৬ একর অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৬৬ লাখ ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া বেতন ও ভাতা খাতে ১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের অন্যান্য ইনপুটের ব্যয় ১৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং একই সঙ্গে রেলপথ নির্মাণ খাতে ৯৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে। এই কাজগুলো বাড়তি বাস্তবায়ন করতে হবে বলেই ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত লাগবে। ঢাকা বিভাগের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা এবং খুলনা বিভাগের নড়াইল ও যশোর জেলাব্যাপী এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। 
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পের পটভূমি সম্পর্কে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৮-এর ডিসেম্বরে সমাপ্ত হওয়ার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। সেতুটির প্রধান উদ্দেশ্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী শহর ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা। ডাবল ডেকবিশিষ্ট এই সেতুর ওপরের ডেকে চার লেন সড়কপথ এবং নিচের ডেকে ব্রডগেজ সিঙ্গেল রেলওয়ে ট্র্যাকের সংস্থান রাখা হয়েছে, যাতে ঢাকা থেকে যশোর, খুলনা, বেনাপোল ও মোংলা পর্যন্ত সরাসরি রেলওয়ে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। পদ্মা সেতু (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)
সুতরাং বিদ্যমান ঢাকা-যশোর রুটের দৈর্ঘ্য কমিয়ে যাত্রাসময় হ্রাসকল্পে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন রেলওয়ে করিডোর নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পটি বিদ্যমান ঢাকা স্টেশন থেকে শুরু হয়ে গেন্ডারিয়া-মাওয়া-পদ্মা সেতু (নির্মাণাধীন)-ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত সংযুক্ত করবে এবং ভাঙ্গা জংশন থেকে বিদ্যমান কাশিয়ানী জংশন স্টেশন হয়ে পদ্মবিলা জংশন হয়ে বিদ্যমান রূপদিয়া এবং সিঙ্গিয়া স্টেশনকে সংযুক্ত করবে। ঢাকা-গেন্ডারিয়া সেকশনে ৩ কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার নতুন মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-যশোরের মধ্যে একটি সরাসরি রেলসংযোগ লাইন বিদ্যমান থাকলেও তা বাঁকা পথে হওয়ায় দৈর্ঘ্য বেশি। এছাড়া এক্সেল লোড বহন ক্ষমতা, গতি ও সেকশনাল ক্যাপাসিটি বিবেচনায় পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর ব্রডগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ বাংলাদেশে পরিবহন অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে। এর ফলে ঢাকা-যশোর, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-দর্শনার মধ্যকার দূরত্ব কমবে যথাক্রমে ১৮৪ দশমিক ৭২ কিলোমিটার, ২১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও ৪৪ দশমিক ২৪ কিলোমিটার হবে। এতে ভ্রমণে সময়ও কমবে।

প্রস্তাবিত ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা সেতু-জাজিরা-ভাঙ্গা-যশোর রেললাইনটি অনুমোদিত রেলওয়ে মাস্টার প্ল্যানের করিডোর-৭-এর অংশ। এই নতুন রেলপথটি ভবিষ্যতে ভারতের কলকাতা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং চীন-মিয়ানমার রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার রেলওয়ে করিডোর গঠন করবে, যার ফলে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে নতুন এলাকা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে। এই রুটে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ এবং বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরকে এই রুটের সঙ্গে সংযুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করলে আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আনুমানিক এক শতাংশ বৃদ্ধিতে এই প্রকল্প অবদান রাখবে।
এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পের প্রয়োজনেই এই ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এতে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটার কোনও সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন- এক নজরে পদ্মা সেতু



/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন