X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার পথে পথে মৌসুমী ভিক্ষুক

সাদ্দিফ অভি
১৫ জুন ২০১৮, ১৭:২৮আপডেট : ১৫ জুন ২০১৮, ২২:১৬

ঢাকার পথে পথে মৌসুমী ভিক্ষুক

উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য যেন কমছেই না। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পবিত্র শবে বরাতের একদিন আগেই ঢাকায় আসা শুরু হয় মৌসুমী ভিক্ষুকদের। আর্থিক সচ্ছলতার উদ্দেশ্যে শহরকেন্দ্রিক ভিক্ষা করা অনেকেরই রীতিমত পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পেশায় পুঁজি নেই এবং হাত পাতলেই মানুষের কাছে পাওয়া যায় বলে অনেকেই এই ধরনের আয়ের দিকে ঝুঁকে থাকেন। ঈদের মতো বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন ট্র্যাফিক সিগন্যালে এই মৌসুমী ভিক্ষুকদের আনাগোনা অতিরিক্ত মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়।  

কিশোরগঞ্জ থেকে রাবেয়া গত সোমবার ঢাকায় এসেছেন। শহরে ভিক্ষা করে অনেক কামাই করা যায়–একথা শুনে তিনিও ঢাকায় চলে এসেছেন। ঈদের এই কয়দিন ভিক্ষা করে আবার ঈদের দু’দিন পর দেশে ফিরে যাবেন পরিবারের কাছে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাবেয়া একা আসেনি বাড়ি থেকে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন মহিলা ভিক্ষুক এসেছেন এই একই উদ্দেশ্যে। তারা ঈদের পর একসঙ্গে বাড়ি ফিরবেন।

বায়তুল মোকাররমের সামনে ভিক্ষার আশায় দল বেঁধে বসে আছে মৌসুমী ভিক্ষুকরা

রাজধানীর ব্যাংক পাড়া নামে খ্যাত মতিঝিল এলাকায় তাদের এক সঙ্গে দেখা যায়। এরা সকালে আসেন এই এলাকায় আবার দুপুরে চলে যান অস্থায়ী ডেরায়। এরপর আবার বিকেলে অফিস ছুটির সময় আসেন। রাবেয়ার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, তারা একসঙ্গেই যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকেন। দিনে কতো আয় হয় জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একেক দিন একেক রকম আয়। কোনোদিন ৩০০ আবার কোনদিন ৬০০-৭০০ টাকাও আয় হয়। রাবেয়া আরও জানান, দেশে কাজ নেই বলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে এই ঈদের মৌসুমে আসা।

রাবেয়ার মতো প্রতিদিন কয়েকশ’ মানুষ ঢাকায় আসেন এই ভিক্ষা পেশায় নিয়োজিত হতে। এদের সবাই মৌসুমী ভিক্ষুক। কাওরানবাজার এলাকার ভিক্ষুক হাসেমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার মতো অনেকেই আসেন সিজন বুঝে। হাসেম ঢাকায় এসেছেন শবে বরাতের রাতে এবং তার বাড়ি ময়মনসিংহ ফিরে যাবেন ঈদের পরদিন। শবে বরাতের রাতে হাসেম বসেছিলেন আজিমপুর কবরস্থানের সামনে। সেখানে একইদিনে কয়েকশ’ ভিক্ষুক সেখানে বসেছিলেন বলে জানান তিনি। এদের শতকরা ৯০ ভাগই তার মতো শবে বরাত ও ঈদ উপলক্ষে এসেছেন বলে জানান হাসেম।

সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ কর্মসূচির আওতায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ভিক্ষুক জরিপ। রাজধানীর ৪০০ পয়েন্টে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। এই জরিপের মূল লক্ষ্য ছিল ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ১০ হাজার ভিক্ষুকের মধ্যে দুই হাজার ভিক্ষুককে প্রাথমিকভাবে পুনর্বাসন করার কথা ছিল তখন। কিন্তু, সে কাজ আর এগোয়নি।  তবে ঢাকায় প্রকৃত ভিক্ষুকের সংখ্যা কতো তা এখন পর্যন্ত কোনও সংস্থা জানাতে পারেনি। অবশ্য, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বর্তমানে দেশে ৬ লাখের মতো ভিক্ষুক রয়েছে। ভিক্ষুক যারা আছে তাদের বেশিরভাগই পেশাদার এবং এদের ব্যাপারে কিছু করা যায় না। তাদেরকে কোনোমতেই এই পেশার বাইরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা তাদের জন্য যতই করি তারা আবারও ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে যায়।    

ভিক্ষুক দমনে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন সমাজ সেবা অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম) আবু মোহাম্মদ ইউসুফ। ঢাকাসহ অন্য জেলাগুলোতে ঠিক কী পরিমাণ ভিক্ষুক আছে তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে জানা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

হাত পেতে আছে মৌসুমী ভিক্ষুকের দল

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন প্রকল্প এখন চলছে জেলা প্রশাসকদের সহায়তায়। প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা এ ব্যাপারে নিজ নিজ এলাকায় প্রোগ্রাম করবে এবং ব্যবস্থা নেবে। ভিক্ষুকদের তালিকা প্রণয়ন থেকে শুরু করে তাদেরকে সাপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে যা যা করা লাগে জেলা প্রশাসকরা করবেন। আমাদের কাছে ফান্ড চাইলে আমরা দিয়ে দেবো, তারা বাস্তবায়ন করবেন।

ঢাকায় ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় আমরা ভিআইপি এলাকায় মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ভিক্ষুকমুক্ত রাখার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে যারা প্রফেশনাল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা ভাবছি। ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করা কোনও বৈধ পন্থা নয়। আমরা আপাতত সংখ্যাটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আর মৌসুমী যারা তাদেরকে আটকানোর জন্য জেলা পর্যায়ে ডিসিদেরকে দায়িত্ব দেওয়া আছে।     

সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে আরও জানা যায় , ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভিক্ষুক পুনর্বাসন খাতে ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১ম কিস্তির টাকা দিয়ে খুলনা জেলায় ১২০ জন ভিক্ষুককে বিভিন্ন স্কীমের বিপরীতে পুনর্বাসন খাতে ৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ২য় কিস্তির টাকা হতে বরিশাল জেলায় ১৪০ জনকে ভিক্ষুক পুনর্বাসন খাতে ৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বেশ কয়েকটি জেলার চাহিদা অনুযায়ী ৩য় ও ৪র্থ কিস্তি বাবদ ৭ জেলায় ২ লাখ টাকা করে ১৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। জেলা গুলো হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ,চুয়াডাঙ্গা,সাতক্ষীরা,কুমিল্লা,দিনাজপুর,সুনামগঞ্জ এবং রাজবাড়ী।

/এসও/ টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ