বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এই দিনটিতে এ দেশের মাটিতে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্মমতার শিকার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাবে ২০১৭ সালে সহিংসতা ও অন্যান্য কারণে ৬৮ মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই সংখ্যাটি অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি।
কঙ্গোতে সমস্যা, দক্ষিণ সুদানে যুদ্ধ ও মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসাটা এই সময়ের বড় ঘটনা।
গত প্রায় চার দশক ধরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা বিতাড়নের জন্য চেষ্টা করে আসছে বলে অভিযোগ আছে। ২০১৭ সালে তারা এক ধাক্কায় প্রায় সব রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বের করে দিতে সক্ষম হয়।
সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের কোনও সদিচ্ছা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পেরেছি আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছি এবং সার্বিক সহায়তা পেয়েছি।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করে। এতে এই সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিক শক্তির আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু সমাধানের প্রশ্নে মতভেদ আছে।’
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই প্রতিনিধি দলের কাছে বাংলাদেশ কী চায় তার একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আমরা তাদের বলেছি এই ঘটনা মানবতার ওপর একটি কালো দাগ।’
আরও পড়ুন: বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ওই তালিকায় বাংলাদেশ বলেছে, তারা যেন মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ করে এবং কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছে তাদের যেন দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হয়।
প্রত্যাবাসন বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশই জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য পরিবেশ সীমান্তের ওপারে তৈরি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এখনও সেখানে মুসলিমবিরোধী ও রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চলমান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো নতুন করে তৈরি করা হয়েছে বা হচ্ছে, সেরকম কোনও নজির নেই।’
রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ নাগরিকত্ব এবং সেটির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফেরত পাঠানো মুশকিল বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।