X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ বছরেও যেসব এলাকা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে না, বিকল্প সোলার প্যানেল

শফিকুল ইসলাম
১৩ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪৩আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৮, ২০:৪৪

সোলার প্যানেল (ছবি-সংগৃহীত) আগামী ৩০ বছরেও দেশের জাতীয় গ্রিড থেকে পার্বত্য তিন জেলার ২৬টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আপাতত সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এসব এলাকা আলোকিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই ২৬টি উপজেলা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এ পর্যন্ত দেশের ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা গেলেও ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’সরকারের এই শ্লোগান আগামী ৩০ বছর এসব এলাকায় কার্যকর করা সম্ভব হবে না। পরিকল্পনা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ’ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যা একনেকে অনুমোদিতও হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এই ২৬টি উপজেলাকে আলোকিত করতে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি আগামী ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের পটভূমি সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয় সেসব এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ’শীর্ষক প্রকল্পটি গত ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৪০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং -এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী সোলার প্যানেলের মাধ্যমে মোবাইল চার্জ এবং টেলিভিশন ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ডিপিপি সংশোধন করার নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এবং প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়। ওই সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বা পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত ৫ হাজারটি সোলার সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে ডিও পত্র পাঠানো হয়। ওই ডিও’র পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন থেকে আরও অতিরিক্ত ৫ হাজারটি সোলার সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করে পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। পিইসি সভার সুপারিশ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিও পত্রের প্রস্তাব মতে পাওয়া পুনর্গঠিত ডিপিপিতে খাতভিত্তিক পরিমাণ ও কতিপয় ক্ষেত্রে স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন এবং মোট ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল ২য় দফা পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কতিপয় শর্ত পূরণ সাপেক্ষে মোট ৭৬ কোটি ৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ৩০ জুন মেয়াদে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলে একনেক তা অনুমোদন করে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, ‘এ প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৮৯০ সেট সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৬৫ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ৫ হাজার ৮৯০ সেট। ১০০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ৫ হাজার সেট। ২ হাজার ৮১৪ সেট সোলার কমিউনিটি সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১২০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ৪৭৫ সেট, ২৫০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ২৪ সেট, ৩২০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ২ হাজার ৩১৫ সেট, ২০ ওয়াট পিক মোবাইল চার্জার সংযুক্তকরণ ৫ হাজার ৮৯০ সেট। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩ হাজার ৭০৯ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘সারাদেশ যেখানে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে সেখানে দুর্গম বলে এসব উপজেলায় বিদ্যুতের আলো পৌঁছাবে না, তা হয় না। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আপাতত সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এসব এলাকায় বিদ্যুতায়নের উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে।’

সূত্র জানায়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৮ হাজার ৭৫৩ মেগাওয়াট। চলতি ২০১৮ সালের ১১ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা এই মুহূর্তে ২ কোটি ৯৯ লাখ। এ পর্যন্ত মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ১১ হাজার ১২২ সার্কিট কিলোমিটার। এ পর্যন্ত বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৪ লাখ ৫৫ হাজার কিলোমিটার। ২০১৭ সালের জুন মাসের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের সিস্টেম লস ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। বিদ্যুতের মাথাপিছু উৎপাদন ৪৬৪ কিলোআওয়ার। এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ৯০ শতাংশ।

 

/এসআই/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি