X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী

পাভেল হায়দার চৌধুরী, পাবনা থেকে
১৪ জুলাই ২০১৮, ১৪:১৪আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৬:২৭

রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি: ফোকাস বাংলা) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যেন জনগণের জন্য কোনও ঝুঁকি সৃষ্টি না করতে পারে, সেদিকে সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে কিছু মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ এখানে নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন ও আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে।’ শনিবার (১৪ জুলাই) পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনী কাজ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার কথায়, ‘আমরা পরিকল্পিতভাবে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। রাশিয়ার সবশেষ জেনারেশন থ্রি প্লাস প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি হচ্ছে এটি। পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে রিঅ্যাক্টরে। এখানে রুশ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় রাশিয়া আমাদের পাশে থাকবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি পাশের থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। পরমাণু শক্তি শান্তির কাজে ব্যবহার করবো আমরা। পরমাণু শক্তির ৩৩তম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হলো।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ও সুরক্ষিত প্রয়োগ নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নামে একটি স্বাধীন পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে সরকার। এই সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। তার বক্তব্য, ‘যেকোনও দুর্যোগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি ভেবেই এর ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধির মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে। আশা করি, ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে আমাদের জাতীয় গ্রিডে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসবে আমাদের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ।’

দেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী শেখ হাসিনা। তার ভাষ্য, ‘এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করেছি আমরা। তাদেরকে নিয়ে ভারত ও রুশ ফেডারেশনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুধু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য আমরা নিজস্ব জনবল তৈরি করছি। আমাদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের অভাব নেই। যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে আমাদের ছেলেমেয়েরাই এসব উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।’

যেখানে এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন পৌঁছেনি, সেখানে সোলারহোম সিস্টেম চালু করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশে বর্তমানে ৪৫ লাখ সোলারহোম সিস্টেম রয়েছে। শেখ হাসিনা বললেন, ‘টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা জ্বালানি নীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছি। অর্থাৎ তেল, গ্যাস বা কয়লার পাশাপাশি পারমাণবিক, সৌর ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ। সাধারণ মানুষও সবকিছুর আগে বিদ্যুৎ চান। আমরা দেশের সব মানুষের কাছে ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ২০০৯ সালে দায়িত্বগ্রহণের পরপরই বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। তাই এখন কোনও লোডশেডিং নেই।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি আমরা। আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। বিশ্বে আমরা মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে চলবো। আমাদেরকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব- এই নীতিতে চলতে হবে আমাদের। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যাবো। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে বাংলাদেশ।’
যোগ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প ছিল জাতির পিতার স্বপ্নের প্রকল্প।  ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিই। এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া। তাই রাশিয়া সরকার ও দেশটির বন্ধুপ্রতিম জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এটাই। আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের যেমন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে, তেমনই ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’
এদিকে শনিবার বিকাল ৩টায় পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে জেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে জনসভায় যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ডিজিটাল বোতাম চেপে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, রাশিয়া কনফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বোরিসভ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপুমণি প্রমুখ।

/আইএ/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
অশ্রু ঝরিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা
অশ্রু ঝরিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না