X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাসন খাতে আইনি কাঠামোর মধ্যে আসছে দালালরা

সাদ্দিফ অভি
১৯ জুলাই ২০১৮, ২১:৩৫আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৮, ১২:৫৮

অভিবাসন খাতে আইনি কাঠামোর মধ্যে আসছে দালালরা অভিবাসন খাতে আইনি কাঠামোর মধ্যে দালালদের নিয়ে আসা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আগামী অধিবেশনে তা সংসদে তোলা হবে বলেও জানা গেছে।    

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. ইসরাফিল আলম এ সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দালালদের আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে। তাদের কোড অব কন্ডাক্ট থাকবে, দায়-দায়িত্ব থাকবে। তাদের আমরা এখানে মিডলম্যান বলছি। তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। এটা হয়ে যাবে। তাদের আইডি কার্ড থাকবে, দায়-দায়িত্ব থাকবে। যেকোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। হাতে কোনও আর্থিক লেনদেন হবে না। যেকোনো নগদ লেনদেনকে অবৈধ বলে গণ্য করা হবে। আমরা এমন ব্যবস্থা করবো যেন আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড থাকে। এই দু’টি বিষয়কে আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। এই বিষয়টি আগামী সংসদ অধিবেশনে উঠবে।’

দালালদের আইনি কাঠামোর মধ্যে থাকা উচিত উল্লেখ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা কখনও গ্রামপর্যায়ে ছেলে-মেয়েদের খুঁজতে যায় না, কথা বলতে যায় না। ওরা এখানে বসে থাকে। সব কাজ সম্পন্ন হয় দালালদের মাধ্যমে। তাদের কার্যক্রম তো দৃশ্যমান। তাই তাদের আইনি কাঠামো এবং জবাবদিহিতার মধ্যে থাকা উচিত।’

এর আগে বিভিন্ন সময় অভিবাসন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দালালদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য বারবার দাবি জানিয়ে আসছিল। ২০১৭ সালে প্রাকাশ প্রকল্পের সহযোগিতায় রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘দালালরাই অভিবাসনের আসল সওদাগর। মাঠপর্যায়ে তারাই হচ্ছে একমাত্র শক্তি যার মাধ্যমে অভিবাসী হতে ইচ্ছুক লোকজন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। অভিবাসনের সুযোগ সংক্রান্ত তথ্য, চাকরির চুক্তিপত্র, অর্থের লেনদেন, বিমানের টিকেট ইত্যাদি সবই অভিবাসীদের হাতে পৌঁছায় দালালদের মাধ্যমে। অভিবাসনের জটিল সব প্রক্রিয়া বিদেশগামীরা সম্পাদন করেন দালালদের হাত ধরেই। বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন, স্মার্টকার্ড গ্রহণ, রিক্রুটিং এজেন্সি’র সঙ্গে যোগাযোগ, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য, এমনকি বিমানবন্দরে গমনসহ সবক্ষেত্রেই দালালরা পাশে থাকে। দালালদের ওপর মহিলা অভিবাসীদের নির্ভরতা আরও বেশি। দালালরা স্থানীয় লোক এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই ব্যবসায় নিয়োজিত। ফলে অভিবাসী পরিবারের সদস্যরা এই দালালদের ওপরই নির্ভর করে। এই কারণে অভিবাসীরা বিদেশে বিপদে পড়লে সবার আগে দালালদের সঙ্গেই যোগাযোগ করে।’

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দালালদের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে না এনে সরকার দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আসছে। সম্প্রতি নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসনের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সরকারিভাবে বিদেশ গমনের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ‘দালালদের নিবৃত করা না গেলে প্রবাসে নির্যাতনের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাবে। দালালের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন উপায়ে অনেকেই যায়। এর মধ্যে অনেকেই ফেরত এসেছেন। তারা কিন্তু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাননি। তারা গেছেন দালালের মাধ্যমে। দালালরা কমিশন পেয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ফলে সেখানে গিয়ে তারা চাকরি পাননি। যার ফলে তাকে (অভিবাসীকে) সেফহোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাদের ‘রিপ্যাট্রিয়েট’ করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।’     

রামরু’র গবেষক ও অভিবাসন বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রামের একজন অশিক্ষিত কিংবা অল্প শিক্ষিত লোক শহরে এসে কিভাবে খুঁজবে ট্রাভেল এজেন্ট কোথায়? পাসপোর্ট কোথায়, কিভাবে করে? কাজেই দালালকে একটা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড ভাবা দরকার। এরা একটা সার্ভিস প্রোভাইডার। একটা লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে তাদের নিয়ে আসা জরুরি।’

সরকারের এই পদক্ষেপের বিষয়ে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘আমাদের এখন যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান এটা পুরোটা কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী নির্ভর। যেহেতু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর গ্রামে-গঞ্জে কোনও অফিস নাই তাই এদের ওপর নির্ভর করেই অভিবাসন প্রক্রিয়া চলছে। গ্রামে প্রচুর মানুষকে বলতে শুনবেন যে, আমার টাকা মেরে দিয়েছে। এমনও আছে যে, টাকা নিয়েছে কিন্তু পাঠায় নাই। এই মধ্যস্বত্বভোগীদের যদি একটি পরিচয়ের মধ্যে আনা যায়- এতে তারা যেমন একটি জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে এবং প্রতারণাটাও কমে যাবে। আরেকটা জিনিস সেটা হলো লেনদেন। সেটা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে হতে হবে। সরকার চাইলে প্রতিটি রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে বা অন্য কোথাও করে দিতে পারে। এই টাকার বাইরে কোনও লেনদেন করা যাবে না।’       

তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি’র (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘দালালদের অভিবাসন থেকে বাদ দিতে হবে। তাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসলে মাইগ্রেশন খরচ বেড়ে যাবে। অভিবাসীর সঙ্গে দালালের সম্পর্ক কাছের হলেও আমাদের প্রচারণামূলক ক্যাম্পেইনে যেতে হবে। অভিবাসী প্রত্যাশীকে সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে নিয়ে আসতে হবে, যেটাকে আমরা বলছি ই-রিক্রুটমেন্ট সিস্টেম। যিনিই বিদেশে যেতে চান তাকে সেন্টারে আসতে হবে। যেমন এখন প্রতিটি জেলায় আমাদের ডেমো অফিস আছে। সেগুলোকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। প্রচারণা চালাতে হবে যিনিই বিদেশে যেতে যান তাদের সেখানে আসতে হবে।’ 

 

 

/এসও/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কবিগুরুর  ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী: গঠিত হলো সোসাইটি, দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন
কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী: গঠিত হলো সোসাইটি, দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি