X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল হতে সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২২ জুলাই ২০১৮, ১৮:০৫আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৮, ২১:১৪



যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল হতে সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রেখে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

রবিবার (২২ জুলাই) সকালে ঢাকা সেনানিবাসে ‘সেনা সদর নির্বাচনি পর্ষদ ২০১৮’-এ দেওয়া ভাষণে তিনি এ গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুসংহতকরণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী, এমন যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।’
আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত মৌলিক ও মুখ্য বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে, যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।’
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমানসহ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য ‘টার্বুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারেটিভ ইভালুয়েশন (টিআরএসিই)’-এর মতো একটি আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে, যা পেশাগত দক্ষতার বিভিন্ন দিকের তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রকাশ করে।’
উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমেই যেকোনও বিজয় বা সাফল্য অর্জন সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব অফিসার সামরিক জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে সফল হয়েছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের বিবেচনায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের শিক্ষা, মনোভাব, সামাজিকতা, চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য নিরীক্ষা করেই পদোন্নতি দিতে হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে উন্নত পেশাগত মান ও যোগ্যতাসম্পন্ন অফিসারদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’
পদোন্নতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার সামর্থ্য আমাদের থাকতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার জন্য সমগ্র জাতিকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৪ সালে তিনি একটি প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। এছাড়াও তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা প্রণীত নীতিমালার আলোকেই তার সরকার ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা প্রদত্ত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে।’
সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত একাধিক পদাতিক ডিভিশন, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন, প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড, এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি ও বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নকে প্যারা ব্যাটালিয়ন ও মেকানাইজড ব্যাটালিয়নে রূপান্তরিত করেছি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র—ট্যাংক, এয়ার ক্রাফট, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করে সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সিস্টেমকে ডিজিটাইজড করা হচ্ছে। আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট অর্গানাইজেশন (এআইটিএসও), আর্মি ডেটা সেন্টার ও কম্পিউটারাইজড ওয়্যার গেইম সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ অনেক আধুনিক যোগাযোগ সামগ্রী ক্রয় কেনা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সেনা সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধিতে তার সরকার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও কল্যাণমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।’ এর অংশ হিসেবে ট্রাস্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা, সেনা আবাসন প্রকল্প, সেনা সদস্যদের উন্নতমানের ও বর্ধিত স্কেলে রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করা, দুস্থ ভাতা বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কমান্ডো সদস্য, এভিয়েশন ইউনিটের বৈমানিকদের উড্ডয়ন ঝুঁকি বীমার আওতায় আনা হয়েছে।’
বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিএমএইচগুলোতে উন্নততর সেবা দেওয়ার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, নতুন ডিপার্টমেন্ট, মিলিটারি ডেন্টাল সেন্টার সংযোজন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। ঢাকা সিএমএইচে সংযোজিত হয়েছে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার সেন্টার ও ফার্টিলিটি সেন্টার। এই ক্যানসার সেন্টার ও ফার্টিলিটি সেন্টারে বেসামরিক রোগীদেরও স্বল্পমূল্যে আন্তর্জাতিক মানের ক্যানসার চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীকে অর্পণ করা হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে বর্তমান সরকার আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের মতো বিভিন্ন সেনানিবাসে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকারই প্রথম সেনাবাহিনীতে নারী অফিসার এবং আর্মি মেডিক্যাল কোরে প্রথমবারের মতো নারী সৈনিক অন্তর্ভুক্ত করে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সেনাবাহিনীর নারী অফিসাররা স্টাফ কলেজ শেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন এবং এরইমধ্যে দুজন নারী অফিসার পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষিত হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দুর্ঘটনায় দুর্গতদের সাহায্য ও সহযোগিতা এবং দেশের অবকাঠামো নির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনা সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সমগ্র বিশ্বে যা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।’
‘এছাড়াও সেনাবাহিনী সারাদেশে এমনকি দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ, মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ এবং ভোটার তালিকা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে’, বলেন তিনি।
দেশের অর্থনীতিকে তার সরকার শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি।’
তার সরকারের সময়ে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে এখন এক হাজার ৭৫২ ডলার হয়েছে। বর্তমানে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছরের উপরে।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয় করা, সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগসহ শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে সেনা কর্মকর্তারা এই নির্বাচনি পর্ষদ ২০১৮-এর মাধ্যমে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বতোভাবে সফল হবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূত্র: বাসস

/এইচআই/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী