X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর তুলিতে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু

হারুন উর রশীদ
১৫ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৪৮আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১০:২৩

শিশু একাডেমিতে অটিস্টিক শিশু আজিমুদ্দিন সুজনের আঁকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। (ছবি: হারুন উর রশীদ)

শিশুরা মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করতে পারে না। পারে না ৭ মার্চকে। তাদের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। তারা মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে গিয়ে তাই সব মিলিয়ে এমন এক বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেছে—যাকে বলা যায় ইতিহাসের ফিরে আসা, বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা।

শিশু একাডেমিতে ১৫ আগস্ট দুপুরের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকীতে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু।

শিশু একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণির এক শিশুর রংতুলিতে বঙ্গবন্ধু। (ছবি: হারুন উর রশীদ)

এ প্রতিযোগিতায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা বিনতে মনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি আঁকে। বঙ্গবন্ধুর সেই চিরপরিচিত তর্জনী হেলনের অবয়ব। ডায়াসে চশমা। আর পেছনে জাতীয় পতাকা। ছবির ব্যাখ্যা দিলো তার চিন্তা থেকে। বললো, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা লাল সবুজের পতাকা অর্জন করেছি। স্বাধীন হয়েছি। পেছনে তাই পতাকা রেখেছি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। আর বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার নায়ক।’

শিশুদের চিন্তায়, শিশুদের ভাবনায় বঙ্গবন্ধু তাদের মহানায়ক। তাই তারা বঙ্গবন্ধুকে আঁকে তাদের মনোজগতের কল্পনা থেকে। তারা যা জানে, তারা যা বোঝে, সেটাই তারা তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলে। তাই একই ছবিতে দেখা যায়, পাক হানাদারদের ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ। জাতীয় পতাকা আর পাশে দাঁড়িয়ে বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধু।

নিবিষ্টমনে বঙ্গবন্ধুকে রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলছে এক শিশু। (ছবি: হারুন উর রশীদ)

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মোস্তফা জামান নওশীন মনে করে, মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করা যায় না। তার কথা,‘ আমি যখন মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশের ছবি আঁকি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আলাদা করতে পারি না। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে মুক্তিযুদ্ধ।’

যারা ছবি এঁকেছে তাদের কারও বয়সই ১৪ বছরের বেশি নয়। বঙ্গবন্ধুর পোট্রেট আঁকতে গিয়ে অনেকেই ব্যাকগ্রাউন্ডে জাতীয় পতাকা অথবা জাতীয় পতাকার রং লাল সবুজ ব্যবহার করেছে। তাদের সবারই একটি কথা,‘ বঙ্গবন্ধুকে তো বাংলাদেশ থেকে আলাদা করা যায় না। তিনিই তো বাংলাদেশ।’

শিশুদের মুখে ইতিহাসের এই সত্য উচ্চারণ ইতিহাসের ফিরে আসারই ইঙ্গিত দেয়। একজন অভিভাবক রতন চক্রবর্তী তার সন্তানকে নিয়ে আসেন এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায়। তিনি জানান,‘ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ইতিহাসের উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলারও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের ইতিহাস বদলানো যায় না। যারা এই অপচেষ্টা করে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে যায়। এখন আবার শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানছে। জানছে বঙ্গবন্ধুকে।’

শিশুর কল্পনায় বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু। (ছবি: হারুন উর রশীদ)

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আঁকতে গিয়ে শিশুরা নানা রং আর তাদের মনের মতো ফিগার তৈরি করে। কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের জবাবে শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন বলেন,‘ এই শিশুরা বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি। দেখেনি মুক্তিযুদ্ধ । কিন্তু তারা জেনেছে। তাদের কল্পনায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, মুক্তিযুদ্ধ একেকভাবে ধরা দেয়। আর সেটাই তারা চিত্রে ফুটিয়ে তোলে। বঙ্গবন্ধু দেখতে কেমন ছিলেন বিষয়টি সেরকম নয়। ওই শিশু তার মনোজগতে বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে দেখে, তা-ই তার চিত্রে প্রকাশ পায়।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তো আর ফিরবেন না। কিন্তু এই জাতির তো মুজিবকে লাগবে। এই শিশুরা মুজিবকে ফিরিয়ে আনছে। ওদের মাঝেই মুজিব বসবাস করেন। তারই প্রকাশ ঘটছে ওদের তুলিতে চিত্রে ।’

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় কল্পনার বঙ্গবন্ধুকে আঁকছে এক শিশু। (ছবি: হারুন উর রশীদ)

অটিস্টিক শিশুদের কল্পনা শক্তি প্রবল হয়। আর তাদের প্রেমও হয় নিখাদ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে বিস্মিতই হতে হবে। সেরকমই একটি শিশু আজিমুদ্দিন সুজন। সে রীতিমত হাত ধরে টেনে নিয়ে এই প্রতিবেদককে তার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখালো। ছবিতে তার গভীর মনোযোগ এবং ভালোবাসার ছাপ। পরম মমতায় তুলির ব্যবহার করেছে। কালো চশমা চোখে, গালে হাত দিয়ে চিন্তায় নিমগ্ন বঙ্গবন্ধুকে এঁকেছে সে। সুজন কথা বলতে পারে না। তবুও যেন ইশারায় অনেক কিছু বলতে চেয়েছে। তার সেই ইশারার ভাষা দেখে মনে হয়েছে, ‘এই শিশুরা মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও অনেক কিছু বলতে চায়। আঁকতে চায়।’

 

 

 

/টিএন/চেক/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা