X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্টেট-অব-দি-আর্ট’ ডাটা সেন্টারে উন্নীত হচ্ছে পুলিশের তথ্যকেন্দ্র

শফিকুল ইসলাম
১৭ আগস্ট ২০১৮, ২১:১০আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৩২

বাংলাদেশ পুলিশ

ই-পুলিশিং সিস্টেম নিশ্চিত করতে বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার। একই সঙ্গে পুলিশের বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশনগুলো আপগ্রেড করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পরিকল্পিত সব অ্যাপ্লিকেশনকে হোস্ট করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ তাদের তথ্য কেন্দ্রটিকে একটি ‘স্টেট-অব-দি-আর্ট’ ডাটা সেন্টারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ জোগান দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।

সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হোস্টিং করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে ডাটা স্টোরেজের জন্যও তা ব্যবহার করা যাবে। এতে ডাটা স্টোরেজে অধিকতর দক্ষতা অর্জন এবং তা নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশের সঙ্গে তাল মেলাতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্ত ও অনুসন্ধানের দক্ষতাকে অধিকতর কার্যকর করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠছে। এ বিবেচনায় বাংলাদেশ পুলিশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ করে ক্রাইম ডাটা ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম (সিডিএমএস), ইমার্জেন্সি ন্যাশনাল কল সেন্টার ও আইসিটি প্রযুক্তি, ইমিগ্রেশন জিআইসিটি ইত্যাদির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

সূত্র জানায়- বাংলাদেশ পুলিশ একটি ক্রমবর্ধমান মোবাইল, অনলাইন এবং সাইবার পরিবেশে প্রবেশ করেছে এবং এসব ক্রমবর্ধমান তথ্য নিরাপদভাবে পরিচালনা এবং সংরক্ষণ করা পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান ডাটা সেন্টারে জরুরি পুলিশি সেবা প্রদানের জন্য পুলিশ ওয়েবসাইটসহ ৩৬টি অ্যাপ্লিকেশন চালু আছে। বিদ্যমান ডাটা সেন্টারে কোনও অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা সিস্টেম নেই এবং সিঙ্গেল ডিস্ট্রিবিউশন পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম থাকায় অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকলে অনলাইন পুলিশি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বর্তমানে ডাটা সেন্টার শুধুমাত্র সাধারণ স্টোরেজ সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সাইবার অ্যাটাক প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের কাজে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান ডাটা সেন্টারের ধারণক্ষমতা এবং ডাটা নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করে জননিরাপত্তা বিভাগ।

সূত্র আরও জানায়, বিশ্বব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো সাইবার ক্রাইম। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, ক্রাইম প্যাটার্ন অ্যানালাইসিস ও সিসিটিভি নজরদারি প্রভৃতি ই-পুলিশিং সেবা দেওয়া এবং সেবাগুলোর পরস্পরের সঙ্গে  সম্পর্কযুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের আইসিটি মাস্টার প্ল্যান ২০২০-এর বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সরকারের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানায়, সে অনুযায়ী ই-পুলিশিং নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশনগুলো আপগ্রেড করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পিত সব অ্যাপ্লিকেশনকেব হোস্ট করার জন্যই বাংলাদেশ পুলিশ তাদের বিদ্যমান তথ্য কেন্দ্রকে একটি ‘স্টেট-অব-দি-আর্ট’ ডাটা সেন্টারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিংয়ের জন্যও এবং একইসাথে কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটা স্টোরেজের জন্য ব্যবহার করা হবে। এতে ডাটা স্টোরেজ অধিকতর দক্ষতা এবং নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ‘বাংলাদেশ পুলিশের ডাটা সেন্টারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে পুরো ব্যয় জোগান দেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পটি সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার অবস্থিত পুলিশ সদর দফতরে প্রকল্পটির সরঞ্জামাদি বসানো হবে এবং ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। 

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, অপরাধ এবং অপরাধবিষয়ক তথ্যসহ অন্যান্য পুলিশি তথ্য এবং আইটি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য হোস্টিং সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বাংলাদেশ পুলিশের আইসিটি কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৫-২০২০ বাস্তবায়নের অপরিহার্য অংশ ‘কার্যকর আইসিটি অবকাঠামো’ নিশ্চিতকরণ, আইসিটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তথ্য এবং অ্যাপ্লিকেশন নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কেন্দ্রীয় এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, পুলিশি সেবার সংবেদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এবং নির্ভরযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, যে কোনও ডিভাইস (ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইল, পিডিএ, মোবাইল ডাটা টার্মিনাল ইত্যাদি) থেকে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনে নিরাপদ প্রবেশ বা ব্যবহার নিশ্চিত করা,  বিভিন্ন পুলিশি অ্যাপ্লিকেশনে সাইবার হামলা বা হুমকি রোধ এবং তা কমানো; বিভিন্ন ধরনের আইসিটি অবকাঠামো এবং অ্যাপ্লিকেশন যেমন- ইআরপি, সিএমডিএস এবং ডায়াল-১০০ ইত্যাদির অধিকতর কার্যকারিতা এবং সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চাহিদামাফিক আইটি উদ্যোগের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটিং এবং স্টোরেজ সুবিধা দিতেই এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।  

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৪২ সেট কম্পিউটার ও এক্সেসরিজ সংগ্রহ করা হবে।  সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করা হবে ১১টি। এছাড়াও প্রকল্পের অধীনে অফিস সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র সংগ্রহ করা হবে। উন্নয়ন করা হবে ভবন ও অবকাঠামো (পূর্ত ও ইলেকট্রিক্যাল কাজ)।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশকে আরও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে অভিজ্ঞ করতেই এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে পুলিশের তথ্যভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে। এতে পুলিশের দক্ষতা বাড়বে।’

 

/এসআই/ এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ব্যাংক ডাকাতি রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
ব্যাংক ডাকাতি রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে
কাতারের আমিরের সফররাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে
পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট