X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, শেষ হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর

জামাল উদ্দিন
২১ আগস্ট ২০১৮, ০৩:৪২আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৮, ১১:০৩

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা



দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে। ঘটনার ১৪ বছর পর আগামী সেপ্টেম্বরেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই অক্টোবর মাসে এ মামলার রায় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে চলছে এ মামলার শেষ আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক। আর কয়েকটি কার্যদিবস তার পক্ষে যুক্তিতর্ক চলবে। তারপরই রাষ্ট্রপক্ষ তাদের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষে এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।



















সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জমান বাবরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম চার কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। আগামি ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্টেও তিনি বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। গত ১৪ আগস্ট আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে ওই তিন কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-১ এর বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া। জবাবে বাবরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন তিনি চেষ্টা করবেন। 
বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করতে আর কতদিন সময় লাগতে পারে, জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা সঠিক করে বলা যাবে না। তার যুক্তিতর্ক শেষ হলে সিনিয়র একজন আইনজীবী বাবরের পক্ষে আইনগত  দিকগুলো তুলে ধরবেন আদালতের কাছে। এছাড়া, বাবর নিজেও আদালতের কাছে কিছু কথা বলার সুযোগ চাইবেন। আদালত অনুমতি দিলে তিনিও তার বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করবেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। এরপরই আদালত রায়ের দিন ধার্য করবেন।
এ মামলার কার্যক্রম কবে নাগাদ শেষ হচ্ছে এবং রায় কবে দেওয়া হবে, জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই আগস্ট মাসেই মামলার কার্যক্রম শেষ করা। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ চাইলেই তো আর হয়না। কারণ, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও এখানে আরেকটি পক্ষ রয়েছে। তারা হচ্ছে আসামিপক্ষ। তাদেরও আন্তরিকতা থাকতে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হচ্ছে না।’  সময় উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘শিগগির এ মামলার রায় হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এ মামলায় ১০৯ কার্যদিবস চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৪ কার্যদিবসই আসামিপক্ষ নিয়েছে।’ সৈয়দ রেজাউর রহমান আরও বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে ২১ আগস্টের ঘটনা একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। আশা করি, এ মামলার রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পাবো। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলার পরদিন ২২ আগস্ট দন্ডবিধির ১২০/বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ৩৩০, ২১৮, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় মতিঝিল থানার এসআই  শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-৯৭) দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দু’টি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। ওই বছরই মামলা দু’টির কার্যক্রম দ্রুত বিচার আদালত-১ এ স্থানাস্তর করা হয়। এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা),ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পুরনো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে পিডব্লিউডির একটি পুরনো সরকারি ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করে এ মামলার বিচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
ভয়াবহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার তদন্ত নিয়েও নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। সাজানো হয়েছিল জজ মিয়া নাটক। ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর ২০০৯ সালের ২৫ জুন আদালতের কাছে এ মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ওই বছরের ৩ আগস্ট আদালত অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন। অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দকে।  তদন্ত শেষে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আবদুস সালাম পিন্টু ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ আরও ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১১ সালের ২ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন আবদুল কাহার আকন্দ।
এরপর ৫২ জন আসামির বিরুদ্ধে এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে থাকে। এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম  বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামিদের তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়। এ মামলায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯। এসব আসামির মধ্যে পলাতক রয়েছেন ১৮ জন। জামিনে রয়েছেন আটজন। আর কারাগারে আছেন ২৩ জন।

আরও পড়ুন: কলঙ্কময় ২১ আগস্ট আজ 

 

 

/জেইউ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন