X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে সেটা বলেন: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪২আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৮

সংসদে প্রধানমন্ত্রী (ছবি: ফোকাস বাংলা) নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পরও দুর্ঘটনা এড়াতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিছুটা আপেক্ষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। এ রকম একটা আন্দোলন হলো তারপরও আমরা দেখি মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই। যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে।’ সবাইকে ট্রাফিক আইন মানার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘ড্রাইভারের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু ট্রাফিক রুল না মেনে যত্রযত্র রাস্তা পার হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে সেটা বলেন। এভাবে যদি যেখানে সেখানে রাস্তা পার হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই এটা থামবে। না হলে থামবে না।’

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নূর ই হাসনা চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সংসদ অধিবেসনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।

ট্রাফিন আইন না মানার কিছু নমুনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় ছবি উঠেছে, এক বাবা বাচ্চাকে বুকে নিয়ে এমনভাবে সুচালো ফেন্সের (বেড়া) ওপর দিয়ে পার হচ্ছে, কোনোভাবে যদি পা স্লিপ করে তাহলে ওই বাচ্চা ওই ফেন্সের সরু মাথায় একেবারে গেঁথে যাবে, সেখানেই মৃত্যু হবে। বাবার কি এই সচেতনতা থাকা উচিত ছিল না? এত বড় একটা ঘটনার পরও দেখবেন বাচ্চার হাত ধরে দ্রুত রাস্তা পার হচ্ছে। একটা মিনিট সময় নেবে না। ওভারপাস বা আন্ডারপাস দিয়ে যাবে না। এই বিষয়টা সবার দেখা দরকার। যারা রাস্তা পার হবেন, তাদের জন্য ইতোমধ্যে জেব্রা ক্রসিং করা, আন্ডারপাস করার যেখানে জায়গা আছে করে দেওয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা- সব করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের একটু সচেতন হওয়া উচিত। এই যে হঠাৎ দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হতে যাওয়া, ছোট শিশুকে নিয়ে পার হতে যাওয়া বা দুটি বাস দাঁড়িয়ে আছে যেকোনও সময় বাস ছাড়তে পারে, দেখা গেলো ফাঁক দিয়ে বেরুতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলো। বাস ড্রাইভারের পক্ষে তো দেখা সম্ভব না। যখন গাড়ি চলে গেলো সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকসিডেন্ট হয়ে গেল। অথবা গাড়িতে বসার সময় জানালায় হাত ঝুলিয়ে রাখলে বা মাথা বের করে রাখলে আরেকটা গাড়ি ধাক্কা মারতেই পারে। যেকোনও সমস্যা হতে পারে, তখন ড্রাইভারকে দোষ দেবেন কী করে।’

মানুষের অসচেতনতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা অদ্ভুত মানসিকতার মানুষের আছে। দেখি ছোট্ট শিশুর হাত ধরে মা রাস্তায় চলে যাচ্ছে, অথবা বাবা বাচ্চাদের নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, রাস্তায় অনবরত গাড়ি আসছে। অথচ খুব কাছেই ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাস। এমনকি যুবক ছেলেমেয়েরা, তাদেরও দেখেছি কাছেই ওভারপাস রয়েছে, যেতে পারে, সেখানে না গিয়ে ফট করে দৌড় মেরে পার হতে চায়। তার ফলে অ্যাকসিডেন্ট হয়। অ্যাকসিডেন্ট হলে এটাও বিবেচ্য বিষয়। যারা রাস্তা পারাপার করছে তাদের দোষ কতটুকু দেওয়া যায় সেটাও দেখা দরকার। আরেকটা বিষয় হয়, সেটা হলো কোনও একটা অ্যাকসিডেন্ট হলো বা গাড়িতে ধাক্কা লাগলো, ড্রাইভার তখন জীবন বাঁচাতে দ্রুত চলে যেতে চেষ্টা করে, ফলে যার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল সে বাঁচে না। কেন যাওয়ার চেষ্টা করে, তার কারণ হলো আমাদের মানুষের অবস্থাটা এরকম, যে ধাক্কা খেল তাকে বাঁচানোর থেকেও বেশি আগ্রহ হয়ে যায় ড্রাইভারকে টেনে নামিয়ে মারধর করা এবং মারতে মারতে এমনও ঘটনা ঘটে যে মেরেই ফেলে। আইন কারও হাতে তুলে নেওয়া উচিত না। ধরে পুলিশে দিয়ে দেবে। কেউ মারধর করতে পারবে না। মারধর যদি বন্ধ হয় তাহলে অনেক অ্যাকসিডেন্ট কমে যাবে।’

এর আগে লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের মৌখিক উত্তরে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত ৯ দফা দাবির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানান। নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার পরপরই তার কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত ও কষ্ট পেয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ওই ঘটনায় ঘাতক বাস দুটির চালক, হেলপার ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলাসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নিরাপদ সড়ক আইন প্রণয়ন কার্যক্রম গ্রহণ, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ৫টি বাস প্রদান, কলেজের সামনে জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ ও আন্ডারপাস নির্মাণকাজ উদ্বোধন, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ও সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দুটি আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশনা, কাওরানবাজার ও গুলিস্তান আন্ডারপাসে লাইটিং ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে স্পিডব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, ছাত্রছাত্রীদের রাস্তা পারাপারে স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশ মোতায়েনসহ নানা উদ্যোগের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে চার বছর মেয়াদি ন্যাশনাল রোড সেফটি অ্যাকশন প্লান (২০১৭-২০২০) প্রণয়ন, একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানোর নির্দেশনা প্রদান, দূরপাল্লার বাসে দুইজন চালক রাখা, হাইওয়ের পাশে বিশ্রামাগার স্থাপনসহ আরও কিছু উদ্যোগের কথা জানান।

সংরক্ষিত আসনের অপর সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানান। এর অংশ হিসেবে ৩৭৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪ বা এর বেশি লেনে উন্নীতকরণ, ৩৯৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের উভয় দিকে সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ১২১টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ, অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অ্যাক্সল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ, ২২টি সড়কে নছিমন, করিমনসহ ত্রি-হুইলার নিষিদ্ধ, মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসে সর্বোচ্চ ৮০ কিমি ও ট্রাকের ৬ কিমি গতিসীমা নির্ধারণসহ বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানান।

ঢাকা-১১ আসনের একেএম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শহরে এলিভেটেড রিং রোড করার পরিকল্পনার কথা জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ নদীতে নৌপথ ও এর পাড় ধরে ভবিষ্যতে রিং রোড করে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড রিংরোড তৈরির জন্য তিনি সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথাও বলেন।

ঢাকা শহরের যানজটের ব্যাপারে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার লন্ডনে বসবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘পৃথিবীর বড় বড় শহরে এই সমস্যা আছে। সব দেশের রাজধানীতেই যানজটের সমস্যা রয়েছে। ‘৬৯ সালে যখন লন্ডনে ছিলাম তখন এই যানজটের সমস্যা। ‘৮০-তে যখন ছিলাম তখনও এই সমস্যা। এখনও গেলে সমস্যা। কোনও অনুষ্ঠান করতে যেতে ৩ ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হতে হতো। ঢাকায় এটাকে নিরসনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

ঢাকার যানজট সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি যত হচ্ছে তারা ততবেশি গাড়ি ব্যবহার করছেন। আর যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আগে যে পরিবারের একটিও গাড়ি ছিল না, এখন তাদের মধ্যে কোনও কোনও পরিবার দুটোও গাড়ি চালাচ্ছে। যার একখানা গাড়ি ছিল তার এখন তিনখানা গাড়ি। আর আমাদের দেশে গাড়ি চালায় কিন্তু চালকেরা। কেউ সেলফ ড্রাইভিং না। ফলে গাড়ি রাস্তায় অনবরত ঘুরতে থাকে। আর যানজট লেগেই থাকে। যানজট যেমন সমস্যা, তেমনি যানজটে কিন্তু এটাও বোঝায় যে বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত হচ্ছে। তাদের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে এবং তারা গাড়ি ব্যবহার করতে পারছে।’

সরকার ঢাকার যানজট নিরসনে ত্বরিত ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই ঢাকা শহরে যতগুলো ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি- এত দ্রুত কেউ এটা পারেনি। আমরা যানজট কমানোর জন্যই এটা করে দিয়েছি। আমরা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছি। আরও কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ হচ্ছে।’

নির্মাণকাজে দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা শহর খুবই ঘনবসতি। এখানে কোনও কাজ করতে গেলে নানা ধরনের সমস্যা থাকে। মানুষের বসত থাকে, মসজিদ থাকে, হাসপাতাল থাকে, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে। সেগুলোকে অন্যত্র স্থানান্তর করা, পুনর্বাসন করা সময়ের ব্যাপার। এজন্যই সময়টা বেশি লেগে যায়। আমাদের যে সমস্যাটা আছে বিদেশের তা নেই। আর একেবারে শুরুতে ঢাকা শহরে ঠিকভাবে তৈরি করা হলে এই সমস্যা হতো না। আমাদের উত্তর দক্ষিণে যত রাস্তা, পূর্ব পশ্চিমে কোনও রাস্তাই ছিল না। হাতিরঝিল প্রকল্পসহ অনেক প্রকল্প নিয়ে পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ স্থাপন করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সবাই পরিকল্পিতভাবে বের হলে যানজট কম হয়। কিন্তু তা করে না। যার যখন ইচ্ছা বেরুলো। আমাদের রাস্তায় তো অতিরিক্ত গাড়ি চলে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন- সংসদে সড়ক পরিবহন বিল উঠছে বৃহস্পতিবার

/ইএইচএস/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রখর রোদে নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল, বৃষ্টি পেতে নামাজে মুসল্লিরা
প্রখর রোদে নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল, বৃষ্টি পেতে নামাজে মুসল্লিরা
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
অলিম্পিকের আগে জার্মানিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শায়েরা-রবিউলদের
অলিম্পিকের আগে জার্মানিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শায়েরা-রবিউলদের
জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ডাক পেলেন সাইফউদ্দিন
জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ডাক পেলেন সাইফউদ্দিন
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা