X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যা থাকছে বিএসএমএমইউ’র স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্টে

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৪৫আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:২৯

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে তৈরি হতে যাচ্ছে এক হাজার শয্যার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। বিএসএমএমইউ’র উত্তর পাশে ১২ বিঘা জমির ওপর এই হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে। এর নির্মাণকাজ শেষ করার সম্ভাব্য সময়সীমা ২০২১ সাল। এই বিশেষায়িত হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান ও গবেষণার সুবিধা থাকবে।


বিএসএমএমইউয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী, ছবি- ফোকাস বাংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বিএসএমএমইউয়ে এক হাজার শয্যার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন ভবনগুলো উদ্বোধন করেন।

এছাড়া, একই দিনে সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রকল্পের অধীনে মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার, ডায়াগনোস্টিক সুবিধাসহ ১৩ তলা ভবনের ফাউন্ডেশন, ডক্টরস ডরমেটরিসহ ১০ তলা ভবনের ফাউন্ডেশন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক হাজার তিনশ’ ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় বিএসএমএমইউ’র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। এরপর বিএসএমএমইউ’র সঙ্গে ইউলজি ইউনিভার্সিটির একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভবনটির নকশা প্রকাশ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতাল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণে কোরিয়া সরকারের পক্ষে ব্যাংকটি বাংলাদেশ সরকারকে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ দেবে। শতকরা দশমিক শূন্য এক শতাংশ হার সুদে ৪০ বছরে তা পরিশোধ করা যাবে। হাসপাতালের আয় ও সরকারের তহবিল থেকে যৌথভাবে এই ঋণ শোধ করতে হবে।’

প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে দুটি বেজমেন্টসহ ১১ তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। পরবর্তী দুই তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘এই ভবনে থাকবে স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো সেন্টার, কিডনি সেন্টার। দ্বিতীয় ধাপে থাকবে রেসপিরেটরি, জেনারেল সার্জারি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন সেন্টার।’

উপাচার্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এটি হবে একটি সবুজ হাসপাতাল। এতে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও অন্যান্য পরিবেশবান্ধব সুযোগ সুবিধা থাকবে। এখানে জনগণ সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা পাবে। এই হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ৮০ জন চিকিৎসক ও ৩০ জন নার্স, ১০ জন কর্মকর্তাকে কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা গ্রহণ করবেন দুই হাজার থেকে চার হাজার রোগী। আন্তঃবিভাগে সেবা পাবেন ২২ হাজার রোগী। এর মাধ্যমে বিদেশে চলে যাওয়া ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, স্পেশালাইজড হাসপাতালটির মাধ্যমে বিদেশে নয়, দেশেই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হবে।’

অন্যদিকে, সেন্টার অব এক্সিলেন্ট প্রকল্পের আওতায় বিএসএমএমইউতে পাঁচতলা মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার চালু হচ্ছে। এতে প্রধান অডিটরিয়ামে ৭৮০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ৯টি ছোট ও মাঝারি সাইজের কনফারেন্স রুম থাকছে। আরও থাকছে বিদেশি অতিথি থাকার মতো ছয়টি গেস্ট রুম। পোস্টার প্রেজেন্টেশন ও স্টলের জন্য একটি বড় ফ্লোর থাকবে। ২৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। ভবনটিতে মোট ১৩ তলা ফাউন্ডেশনসহ দুটি বেজমেন্ট থাকছে। ২০১১ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে এটি শেষ হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রেডিওথেরাপি, অনকোলজি বিভাগসহ ১৩ তলা ফাউন্ডেশনের ফ্লোর তৈরিতে খরচ হয়েছে ৭৯ কোটি ৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। এতে ডায়াগনোস্টিক সুবিধাসহ রেডিওথেরাপি, অনকোলজি বিভাগগুলো থাকছে। একটি সাইটে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের পেট-স্ক্যান ও সাইক্লোট্রোন মেশিন স্থাপনের ব্যবস্থা আছে। রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের অধীনে ২টি এমআরআই, ২টি সিটি স্ক্যান, ১০টি এক্সরে মেশিন, ১০টি আল্ট্রাসনোলজি মেশিন বসানোর ব্যবস্থা আছে। অনকোলজি বিভাগের অধীনে ৬০ শয্যাবিশিষ্ট ওয়ার্ড ও ২টি রেডিওথেরাপি মেশিন বসানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আছে বোন ম্যারো ট্র্রান্সপ্লান্ট ইউনিট। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে, শেষ হয় ২০১৭ সালে।

ডক্টরস ডরমেটরিতে মোট ৪৩টি কক্ষ, একটি রিডিং রুম, একটি ডাইনিং রুম, একটি কমন রুম, একটি নামাজ ঘর ও বেজমেন্টে ৪০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা আছে। এটি ২০১৪ সালের মার্চে নির্মাণ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।

বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, বিশেষায়িত হাসপাতালটি হবে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্র। এখানে সব ধরনের গবেষণা উপযোগী আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। বর্তমানে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিদেশে যেতে হয়—এটি তৈরি হলে দেশেই সেগুলো করা সম্ভব হবে। দেশে উন্নততর চিকিৎসাবিদ্যা নিশ্চিত করতে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ এই হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য চিকিৎসকদের জন্য অত্যাধুনিক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা এবং বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ও জনগণের জন্য উচ্চমানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

হাসপাতালটি চালু হলে বিএসএমএমইউ’র শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণা কার্যক্রম আরও গতিশীল ও উন্নত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে বিদেশে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে। সব মিলিয়ে তুলনামূলক সাশ্রয়ী খরচে বা স্বল্পব্যয়ে দেশেই তাদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

/এমএএ/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী