X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড, হত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৪০আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৫৭

 

জাতীয় সংসদ (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) সংসদে বহুল আলোচিত ‘সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮’ পাস হয়েছে। এতে বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলটির জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাব নিষ্পত্তি হয়।

জনমত যাচাইয়ের দাবির জবাবে দেওয়া বক্তব্যে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেছেন তাদের বলবো, ২৫ বছর অপেক্ষার পর আর কত অপেক্ষা করবো? আপনারাই বলছেন দুর্ঘটনা ঘটছে, যানজট হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের ফলে এই বিল এসেছে। এটা ঠিক নয়। এই বিলটি দেড় বছর আগে তৈরি করা। অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার সোনালি ফসল এই সংসদে এসেছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারে তাদের শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুতরাং শাস্তি কোনোভাবেই কম নয়।’  

এ সময় গণপূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, মাঝে মাঝে দেখি তিনজন আরোহী নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মোটরসাইকেল ছুটে চলে। এরা বেশিরভাগই রাজনৈতিক কর্মী। সুতরাং আমাদের দলগুলোকে সতর্ক হতে হবে।’

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলা হলে তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন বিলটি প্রণয়নে সরকারের আগে থেকে উদ্যোগ থাকলেও গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আইনটি প্রণয়নে গতি পায়। যার ফলে গত ৬ অগাস্ট মন্ত্রিসভা আইনটির প্রস্তাব অনুমোদন করে।

পাস হওয়া বিলে বলা আছে, এই আইনে যাই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনাজনিত কোনও দুর্ঘটনায় কোনও ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে এ সংক্রান্ত পেনাল কোড ১৮৬০-এর এ সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দণ্ডবিধির ৩০৪বি ধারাতে যাই থাকুক না কেন, কোনও ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনও দুর্ঘটনায় কোনও ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

বিলের ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) প্রযোজ্য হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী হত্যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে যেকোনও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও পাস হওয়া বিলে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনও কোম্পানি এই ধরনের অপরাধ করলে ওই কোম্পানির মালিক, পরিচালক, নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, সচিব বা অন্য কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। 

বিলের ৪ ধারায় বলা আছে, কোনও ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে পাবলিক প্লেসে গাড়ি চালাতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না।

৫ ধারায় বলা আছে, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র ছাড়া কেউ গণপরিবহন চালাতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না।

কোনও ব্যক্তি আইনের ৪ ও ৫ ধারা লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ এবং পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ২১ হতে হবে। আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। আরও বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর করা যাবে না। এই ধারা কেউ লঙ্ঘন করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

কোনও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট চালক, কন্ডাক্টটর বা তাদের প্রতিনিধি নিকটস্থ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে না গেলে এবং নিকটস্থ থানা, ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালকে অবহিত না করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলে বিধান রাখা হয়েছে।

এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে চালকের এ পয়েন্ট কাটা যাবে।

বিলে বলা হয়েছে, ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ সনদ ব্যবহার অথবা ইকোনোমিক লাইফ অতিক্রান্ত হওয়া মোটরযান চালালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

এতে বলা আছে, কোনও ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বা লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল হয়ে গেলে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই ব্যক্তিকে চালক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দিতে পারবে না। শ্রম আইন অনুযায়ী লিখিত চুক্তি ছাড়া কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনও ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে না।

সরকার বা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবং প্রয়োজনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র বা নির্দিষ্ট কোনও এলাকা, সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার বা টানেলে যেকোনও মেয়াদের জন্য সব বা যেকোনও মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

সরকার বা সরকারের অনুমতি নিয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে সারা দেশে বা যেকোনও এলাকার জন্য যেকোনও মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারিত করতে পারবে। কোনও এলাকায় মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারিত সংখ্যা বেশি হলে অতিরিক্ত মোটনযানকে চাহিদা অনুযায়ী অন্য এলাকায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া যাবে।

মোটরযানের দুর্ঘটনার কারণে কোনও ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল নামের একটি তহবিল থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তাদের উত্তরাধিকারীদের এই তহবিল হতে ক্ষতিপূরণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ দেওয়া হবে।

বিলে বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। কেউ এই আইনের অধীন অপরাধ করলে পয়েন্ট কাটা যাবে।

কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হারে ও পদ্ধতিতে মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য বাৎসরিক বা এককালীন চাঁদা আদায় করবে। মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান এই তহবিলের জন্য চাঁদা দিতে বাধ্য থাকবে। তহবিলের টাকা তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

আর্থিক সহায়তা তহবিল পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টিবোর্ড থাকবে। বোর্ড আঘাতপ্রাপ্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বা মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ ও মঞ্জুর করবে।

/ইএইচএস/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি