X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখলেই হবে না: সাংবাদিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:০০আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:০৪

বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  তিনি বলেন, ‘জানি না, আমাদের সাংবাদিকেরা এত বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠছেন কেন। তারা কী কারণে ‍উদ্বীগ্ন হয়ে উঠছেন? এর কোনও যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। এখানে শুধু গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখলেই হবে না।’ বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনটি করেছি দেশ ও জাতির কল্যাণে। মানুষের নিরাপত্তা আমাকে দিতে হবে। সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সংসার বাঁচাতে হবে। মানুষের চরিত্র বাঁচাতে হবে। দেশের সব মানুষের স্বার্থেই এই আইনটি করা হয়েছে। এখানে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘সবার নিরাপত্তা  প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। আমরা চাই, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সবাই ভোগ করুক। কুফল থেকে দূরে থাকুক। সেই লক্ষ্য নিয়ে এই আইন পাস হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে অভিমত দিয়েছেন। কেউ কেউ শুধু ব্যক্তি আর নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সৃষ্টিভঙ্গি থেকে অভিমত দিয়েছেন। কিন্তু পুরো সমাজ ও দেশের স্বার্থে এই বিলটি যে কত গুরুত্বপূর্ণে, এটা তারা দেখেন না।’

কয়েকজন স্বনামধন্য সম্পাদক ও ব্যক্তি আইনটি নিয়ে অভিমত দিয়েছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কেবল তাদের কণ্ঠরোধ হলো কিনা, সেটাই দেখেন। তাদের কণ্ঠ তো রোধ হয়নি। কণ্ঠ আছে বলেই তারা অভিমত দিতে পারছেন। রোধ করলে তো মত দেওয়ার মতো ক্ষমতা থাকতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এদেশে মার্শাল ল‘ ছিল, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ছিল, যারা তাদের পদলেহন করেছে, তোষামোদি করেছে। তাদের অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যারা তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে তাদের অসুবিধা হয়েছে। ২০০১-৬ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের সময় কী পরিমাণ সাংবাদিক নির্যাতন হয়েছে, তারা সেটাও ভুলে গেছেন। এখন ডিজিটাল আইন করার পর তারা তাদের কণ্ঠরোধের কথা বলছেন। কণ্ঠটা রোধ কোথায়? এই দেশে একটি টেলিভিশন ছিল। কোন সরকার পেরেছে টেলিভিশনকে বেসরকারি খাতে তুলে দিতে? কোন সরকার সাহস পেয়েছে রেডিও বেসরকারি খাতে ‍তুলে দিতে? কেউ তো দেয়নি। দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আজকাল টেলিভিশনে তো মধ্যরাত পর্যন্ত টক শো, কত রকমের আলোচনা, যা যাচ্ছে সেই আলোচনা করতে পারছে। কই কেউ গিয়ে তো তাদের গলা চেপে ধরছে না। কেউ তো তাদের বাধা দেয়নি।’

ডিজিটাল আইন ইস্যুতে গণমাধ্যমের অবস্থানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা শুধু তাদের সাংবাদিকতার বিষয়টি দেখলেন। সাংবাদিকতা হবে গঠনমুলক। সাংবাদিকতা সমাজের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য থাকবে দায়িত্বশীল। নিশ্চয়ই সাংবাদিতা সংঘাত বাড়ানোর জন্য হবে না। দেশের অকল্যাণে হবে না। দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য হবে না। এমন সাংবাদিকতা থাকবে, যা দেশকে এগিয়ে নেবে। মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনবে। মানুষের ভেতরে সন্দেহ সৃষ্টি করবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে উসকে দেবে না। সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালনার করার দিকেই তো তারা থাকবে। আমরা সেটাই চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো জায়গায় ডেইলি পত্রিকাই তো হাজারের কাছাকাছি। সর্বসাকুল্যে হাজার তিনেকের মতো পত্রিকা আছে। এত পত্রিকা পৃথিবীর কোন দেশে রয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন অনলাইন পত্রিকা। এগুলো কে যে করছে, কখন কীভাবে করছে, নাম ঠিকানারও তো ঠিক নেই। পত্রিকার নাম দিয়ে নানা ধরনের তথ্য প্রচার করছে।’

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানা ধরনের অ্যাপস ব্যবহার হয়। এর ভালো দিকটাও আছে, খারাপ দিকটাও আছে। এই খরাপদিকটা ভয়াবহ। মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাপ—এই স্মার্ট ডিভাইসে যেমন বিশ্বটা হাতের মুঠোয় তেমনি এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অসামাজিক বিষয়গুলো চলে আসে। এখানে নানা ধরনের গেমস আছে। অনেক সময় ছোট ছেলে-মেয়ে বা যুবক শ্রেণি এমন বিষয় দেখে, যা সমাজে অশুভ বার্তা বয়ে আনে। এতে কুশিক্ষার দিকটাও থাকে। সেটা অশ্লীল বা একেবারেই অসামাজিক। কুরুচিপূর্ণ। যাতে ছেলেমেয়েরা আসক্ত হয়ে পড়ে। দিনের পর দিন রাতের পর রাত লেখাপড়া নেই। এরসঙ্গে এমন ভাবে জড়িয়ে হয়ে যায়, যা সমাজে পরিবারে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। এখানে এমনভাবে অপপ্রচার হয় যাতে পারিবারিক কোন্দল সৃষ্টি হয়। নানা রকমের অঘটনও ঘটে। শিশু থেকে যুবক পর্যন্ত এডিকটেড হয়ে পড়ে। এতে এমনভাবে জড়িতে যায় তারা মানুসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলে বিপথে চলে যায়। আত্মহত্যা করে। অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। যা সমাজ ও সংসারের জন্য বিরাজ বোঝা হয়ে যায়। নানা ধরনের চরিত্র হনন করা হয়।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা এটা নিয়ে বলছেন, তাদের বলবো, অতীতের কথাগুলো চিন্তা করেন না? এখন তো সবাই উন্মুক্ত। যে যার মতো লিখে যাচ্ছেন। এত উন্নয়ন দেশে, বিশ্বব্যাপী দেখে বাংলাদেশের উন্নতি। সারা বিশ্ব সমাদৃত করে বাংলাদেশের। কিন্তু আমাদের দেশে এমনও পত্রিকা আছে খুললেই মনে হবে বাংলাদেশে কিছুই হয়নি। দেশ যেন শেষই হয়ে গেছে। কিছু পেলেই সমালোচনা। গঠনমূলক সমালোচনায় আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু এমনভাবে সমালোচনা করে যে এই সরকার খুবই খারাপ কাজ করছে। কী খারাপ কাজটা করলাম সেটাই আমার প্রশ্ন।তবে, এটা ঠিক যারা কোনও ভালো দেখতে পান না তারা তো খারাপই দেখবেন। আমি বিষয়টিকে সেভাবেই নিয়ে থাকি। যে কিছু কিছু মানুষের চরিত্র হচ্ছে কিছুই ভালো লাগে না। এটা তাদের মানসিক অসুস্থতা। এই মানসিক অসুস্থতায় যারা ভোগের তাদের ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই। আমি কী করতে পারি বড় জোর, ওগুলো পড়লাম না। আমি সঠিক পথে আছি কিনা, মানুষের জন্য কিছু করছি কিনা, সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। কারও লেখা পত্রিকা পড়ে আমাতে শিখতে হবে না। আমি নিজেই জানি কী করতে হবে। কীভাবে করতে হবে। আমি পত্রিকা পড়ে তথ্য নেই। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেই। কিন্তু যাদের কোনও কিছু ভালো লাগে না, এই ভালো না লাগার যে গোষ্ঠী, তাদেরটা পড়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না, পড়িও না।’

সংসদ অধিবেশন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অধিবেশনটা এমন সময় হলো যে, আমাদের ৫ বছর সংসদ বা সরকার তার সময়ও শেষ বেলা, পড়ন্ত বেলা। সময় শেষ, নতুন নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারা ক্ষমতায় আসবে, সংসদে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের ভিত্তিটা শক্তিশালী ও মজবুত করেছি। যারা গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী দেখেন না, নড়বড়ে দেখেন, আসলে তাদেরই নড়বড়ে অবস্থা। তারা কখনও গণতন্ত্র চান না। তারা সবসময় একটি দিকে তাকিয়ে থাকেন,  কখন কিছু ছিঁড়ে পড়বে। কিন্তু দেশের জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। সাধারণ মানুষ ঠিকই বোঝে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের বলবো,  যদি জনগণ ভোট দেয়, আবার যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে তাদের জন্য আরও কী কাজ করতে পারি সেই পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। প্রত্যেকটি গ্রামকে আমরা শহরে পরিণত করবো। গ্রামের মানুষ নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা জনগণের আত্মসামাজিক উন্নয়ন করতে পেরেছি। পরিকল্পিতভাবে চলছি বলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছি। মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এডিপির ৯৩ ভাগের বেশি অর্জন করতে পেরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দেওয়ার মনমানসিকতা নিয়ে আমরা রাষ্ট্রপরিচালনা করছি।প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করে আমরা তার সমাধান করছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে।’

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অবহেলিত ছিল। তারা মেধাবী। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নিজেরা পড়াশুনা করে। তারা প্রথম দিকে স্বীকৃতি চায়নি। পরে চেয়েও পায়নি। এই স্বীকৃতিটা বর্তমান সরকার তাদের দিয়েছে, যেন তারা একটা সনদ পায়। সুন্দরভাবে জীবনটা গড়তে পারে। প্রায় নয় বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করে আইনটি তৈরি করা হয়েছে। কাজেই যারা বলেন, হঠাৎ করে এটা করা হয়েছে তাদের কথা ঠিক নয়।’

/ইএইচএস/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলেছে ২৭ বস্তা টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলেছে ২৭ বস্তা টাকা
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি