X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন করতে চান যেসব সাবেক আমলা

শফিকুল ইসলাম
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:২৯আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৫





নির্বাচনে আমলারা আসন্ন জাতীয় সংসদের ১১তম সাধারণ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। তারা বিভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে বিভিন্ন দলের হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী আমলাদের সংখ্যাই বেশি। এরপরই রয়েছে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করতে আগ্রহী আমলারা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, কমিশনের বিদ্যমান ‘দ্য রিপ্রেজেনটেশন অব পিপলস অর্ডার’ বা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে কেউ কোনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য হবেন না। কাজেই আরপিও অনুযায়ী, সরকারি চাকরি থেকে কমপক্ষে তিন বছর আগে অবসর নিয়েছেন, এমন আমলারাই এ বছরের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নির্বাচনে যেসব আমলা অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, আমলা না হলেও জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি একেএ মোমেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, সাবেক সচিব ও বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, সাবেক সচিব ও নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, সাবেক কেবিনেট সচিব আবদুল হালিম, সাবেক সচিব হুমায়ুন কবীর, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, সাবেক সচিব সুজা উদ দৌলা এবং সাবেক সচিব এনএম নিয়াজ উদ্দিন মিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে এই তালিকা আরও লম্বা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে পরিচিত ড. ফরাস উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও আস্থাভাজন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী চান তিনি তার নির্বাচনি এলাকা হবিগঞ্জের একটি আসন থেকে নির্বাচন করুন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সময় হোক, সব জানবেন।’
বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই এএমএ মোমেন। সরাসরি আমলা নন তিনি, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীর আসন (সিলেট-১) থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী তিনি। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি এবার নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তার আসন থেকেই যেন এএমএ মোমেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান, সেজন্য চেষ্টা করবেন তিনি। এজন্য ইতোমধ্যেই এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন মোমেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন একসময় ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব। জানা গেছে, তিনি তার জন্মস্থান চাঁদপুরের কচুয়া আসন থেকে নির্বাচনে আগ্রহী। ইতোমধ্যেই তিনি নিজ এলাকায় স্কুল-কলেজসহ নানা ধরনের উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে গোলাম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি নৌকা প্রতীকে ইলেকশন করতে আগ্রহী। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর থেকেই এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমার এলাকায় কলেজ ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নিচ্ছি। সমস্যা থাকলে তা সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করছি আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলে এলাকার সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো।’

নির্বাচনে অংশ নিতে চান যেসব সাবেক আমলা

পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ আওয়ামী লীগের টিকিটে নিজ এলাকা কিশোরঞ্জ থেকে প্রার্থী হতে চান। সে লক্ষ্যে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি শোডাউনও করছেন। দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ব্যাংককে অবস্থান করছেন। সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পর তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কতটা যুক্ত হতে পারবেন, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তিনি অনাগ্রহী হলে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান নূর মোহাম্মদ।

সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন নিজ জেলা ফরিদপুরের একটি আসন থেকে নির্বচন করতে আগ্রহী। তিনিও নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে চান। মনজুর হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলে জয়ী হবো। সরকারি চাকরির সময় থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে আছি। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী এই সাবেক আমলা।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত কুমিল্লার চান্দিনা আসন থেকে নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী। ইতোমধ্যেই নিজ এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে একজন চিকিৎসক হিসেবে এলাকার বহু মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকর্মীও তার রোগী, যারা তাকে সমর্থন দেবে বলে আশাবাদী প্রখ্যাত এই চিকিৎক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আগ্রহী বলে জানা গেছে। তিনি কিছু সময়ের জন্য দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
একইভাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন সিলেটের একটি আসন থেকে, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান রংপুর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে আগ্রহী বলে জানা গেছে। ছহুল হোসাইন নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালনের আগে সরকারের সচিব ছিলেন।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হলেন সাবেক কেবিনেট সচিব আবদুল হালিম। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলে আগামী সংসদ নির্বাচনে জামালপুরে ধানের শীষের প্রার্থী হতে চান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুল হালিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকার মানুষের সঙ্গে আছি। দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রেখেছি। বিএনপির মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।’
সাবেক সচিব সুজা উদ দৌলা, হুমায়ুন কবীর, এনএম নিয়াজউদ্দিন মিয়াও আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। তবে তারা কোন দলের হয়ে নির্বাচনে আগ্রহী তা জানা যায়নি। সূত্র জানায়, তারা কেউই এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশিত দল থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাননি। কিন্তু নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন কৌশলে। কেউ কেউ আওয়াজ দিয়েই জনসংযোগ করছেন। কেউ কেউ মসজিদ মাদ্রাসায় দান-খয়রাত দিচ্ছেন। নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন। কেউ কেউ নিজে থেকে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন। আবার কেউবা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশেই এলাকায় যোগাযোগ করছেন। তৈরি করছেন নির্বাচনি মাঠ।
জানা গেছে, এসব আমলার কেউ কেউ নির্বাচনকে মাথায় রেখে আগে থেকেই এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আবার অনেকে এখনও এলাকায়ই যাননি। তবে তারা যে দল থেকে মনোনয়ন পেতে প্রত্যাশী, সেই দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পরপরই এলাকায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।

/এসআই/এএইচ/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি