X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দুই কিডনিবিহীন রোগীকে নিয়ে কী করবে বিএসএমএমইউ?

তাসকিনা ইয়াসমিন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:০৫আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৪৫

রওশন আরা বাম পাশের কিডনিতে অস্ত্রোপচারের পর সিটিস্ক্যানে দুটো কিডনিই আর দেখা যায়নি। এই ‘দুই কিডনি হারানো’ রওশন আরা (৫৫) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইউরোলজি বিভাগে ভর্তি আছেন। একদিন পরপর তার ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। পরিবারকে প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকা। রোগী নিয়ে ভীষণ চিন্তিত স্বজনরা। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে এমন অভিযোগ আসার পর সুচিকিৎসা নিশ্চিতের ব্যাপারে ঠিক কী করবে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ?

গত বুধবার দুপুরে বিএসএমএমইউয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেডে বসে আছেন রওশন আরা। দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগে ক্লান্ত, জীর্ণ-শীর্ণ তিনি। দুই পা ফুলে গেছে। ২২ দিন ধরে তার কোনও প্রস্রাব হয়নি।

রওশন আরার বোন জাহেদা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সুস্থ মানুষ নিয়ে আসলাম। আমরা আশা করেছিলাম যে সাত দিন থেকে রোগী সুস্থ করে নিয়ে বাড়ি যাবো। একটা কিডনি তো ভালো ছিল। কিডনিটা কোথায় গেলো এটাই প্রশ্ন? সে এখন দিনে এক লিটার পানি খায়। একটু পানি খেলেই গলায় পানি জমে থাকে। পানি নামে না। আমার বোনের খুব কষ্ট হচ্ছে। যেদিন অস্ত্রোপচার করেছে সেদিন সাড়ে ১১টার সময় মেজ ছেলে প্রস্রাব করাতে বাথরুমে নিয়ে গেল। সেই শেষ। আজ এতদিন কোনও প্রস্রাব হয় না।’

রোগীর ছোট ছেলে শরীফ শিকদার বলেন, ‘ডায়ালাইসিস করতে খরচ হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকা। শুধু আমাদের বেড ভাড়াটা দিতে হয় না। ওষুধ কিনতে হচ্ছে। পানিও কিনে খেতে হয়। আজ হাসপাতালে আসছি এক মাস। ২০ দিন ধরে বিছানার চাদরটা পাল্টায় না।’ স্টাফদের ব্যবহার নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘উনারা বলেছেন, আপনারা কিডনি ডোনার দেবেন আর রক্ত দেবেন। আমরা কিডনিটা বদলে দেবো। তার মানে কী দাঁড়াল? মায়ের ডান কিডনিটা গেলো কোথায়? প্রয়োজনে আমরা আইনের আশ্রয় নেবো।’

বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই রোগীর ক্ষেত্রে যে সমস্যাটা হয়েছে, এটা অবশ্যই আমাদের মেডিক্যাল সমস্যা। প্রতিদিনই আমরা বিভিন্ন দিক অ্যানালাইসিস করছি। এই রোগীর বাম দিকে ২০১৬ সালে একবার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এরপর ছয় মাস আগে তার আবার অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় তার পুঁজ হয়ে যায়। পুঁজ হয়ে পুরো পেটের এক পাশ থেকে অন্যপাশে চলে গিয়েছিল। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসররা এটাকে ড্রেন করে। এরপর রোগী চলে গেছে। এরপর ঈদের পরে এসে আবার ভর্তি হয়েছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারের আগের দিন বোর্ড মিটিং হয়। তখন বলা হয় বাম পাশের কিডনিটা ফেলে দিলে রোগীর জন্য ভালো হবে।’

তিনি বলেন, ‘৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের সময় অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বললো, স্যার জলদি আসেন। আমি গিয়ে দেখি ওরা চাপ দিয়ে রোগীকে ধরে রেখেছে। রোগীর প্রচণ্ড ব্লিডিং হচ্ছে। তখন আমার রোগীর জীবনরক্ষায় সবকিছু ঠিক করলাম। ওরা অর্ধেক কিডনি ফেলেছে। আমি বাকিটা ফেললাম। বিকালে পোস্ট অপারেটিভে থাকা অবস্থায় রোগীর ইউরিন বন্ধ হয়েছে। রক্ত সরবরাহ একেবারে কমে গেলে প্রস্রাব তৈরি হয় না। রাতে রোগীর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় আইসিইউতে পাঠানোর কথা বলেছিলাম। সকালে এসে জানতে চাইলাম রোগী কই? বলল, রোগীকে তো আইসিইউতে পাঠিয়েছে। আইসিইউতে খোঁজ নিলাম। তারা বলল, আইসিইউতে আসেনি বা তারা চলে গেছে। মনে হয় সেন্ট্রালে গেছে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল রোগী সেখানে নেই। এরপর রবিবার রোগী আমাদের এখানে ফিরে আসে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। বাইরের হাসপাতাল এক লাখ ৪৪ হাজার টাকা রোগীকে আইসিইউতে রাখার কারণে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কিডনি না থাকার ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্টে যাই। ওরা কখনও বলেনি যে হর্স (দুই কিডনি জোড়া লাগানো) কিডনি। সিটিস্ক্যানে একটা শব্দ ছিল ম্যাল রোটেটেড অর্থাৎ প্যাঁচানো। এখন আমরা ধারণা করছি এটা খুবই বিরল জন্মগত সমস্যা। এতে একই রক্তনালী থাকে। একটা অস্ত্রোপচার হলে অন্যটা ফিউজড হতে পারে। এখন আমাদের ধারণা হচ্ছে এটা হর্স কিডনি ছিল, ফিউজড কিডনি ছিল এবং রক্তনালী আলাদা ছিল। বাম দিক কেটে দুইটা কিডনি নিতে গেলে দুইটার রক্ত সরবরাহ এক থাকতে হবে। কিন্তু সিটিস্ক্যানে সেটা বলেনি। আর আমরা বুঝতেও পারিনি। যদি এমন ঘটনা বুঝতে পারতাম আমরা অবশ্যই রোগীর লোককে সঙ্গে সঙ্গে জানাতাম। আমাদের দেশে এমন ঘটনা এর আগে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হয়েছিল। তখনও ভীষণ হইচই হয়েছিল।’

চিকিৎসক বলেন, ‘রোগীর জন্য আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। আমি তার ছেলেকে কোনও দোষ দিই না। ওর মায়ের দুইটা কিডনি নাই, ও তো খুবই বিভ্রান্ত। সে বিভিন্ন স্থানে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু কেউ তো সঠিক সমাধান তাকে দিচ্ছে না। এটা আমাদের ভুল হয়েছে। এটা অজান্তে এবং অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে।’

রওশন আরার আরেক ছেলে রফিক শিকদার বলেন, ‘মায়ের অস্ত্রোপচারের আগের রিপোর্টে কিডনি দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু পরের রিপোর্টগুলোতে কিডনি দৃশ্যমান নেই। প্রথমে প্রফেসর হাবিবুর রহমান সাহেব দেখান যে মায়ের কিডনি ছিল কিন্তু সেটা নন-ফাংশনাল হওয়ার কারণে দৃশ্যমান নয়। দ্বিতীয় দফায় তিনি যুক্তি দেখান, কিডনি দুইটাই জোড়া লাগানো ছিল, কাটতে গিয়ে দুইটা কাটা হয়ে গেছে। তার কথার প্রেক্ষিতে বলছি, আমার মায়ের দুটি কিডনি জোড়া লাগানো ছিল না। জোড়া লাগানো কিডনি থাকলে সেটা রিপোর্টে চলে আসে। তাহলে লেফট অ্যান্ড রাইট কিডনি বলে কিছু আসতো না। দুটো কিডনির দুটো পজিশন ফ্রি। সিটিস্ক্যান ফিল্ম ও এক্সরে ফিল্মে আলাদা আলাদা কিডনি আছে সেটা দেখা যাচ্ছে।’

বিএসএমএমইউর উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২২ সেপ্টেম্বর দুটি কমিটি করে দিয়েছি। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দিতে বলেছি। রোগী যতদিন আমাদের হাসপাতালে থাকবে ততদিন আমরা চিকিৎসা করবো। আমি তো ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডও করে দিয়েছি যেন কোনও ভুলভ্রান্তি না হয়।’

দুই কিডনি না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের মেডিক্যাল সায়েন্সে অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করা যায় না। এরকম ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে ঘটে। নিউরোসার্জারির ক্ষেত্রে, ব্রেইনের ক্ষেত্রেও অনেক কিছু হয়।’

আরও পড়ুন- 

বাম কিডনি ফেলা হলো, ডানেরটা কোথায়!

রোগীর শরীর থেকে কিডনি গায়েবের ঘটনায় দুটি কমিটি

 

/এইচআই/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৬ মে, ২০২৪)
রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন
রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন
ছয় মিনিটের অভিবাদন, নিয়ম ভাঙলেন এই নায়ক
কান উৎসব ২০২৪ছয় মিনিটের অভিবাদন, নিয়ম ভাঙলেন এই নায়ক
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ দল
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ দল
সর্বাধিক পঠিত
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা