X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ অক্টোবর ২০১৮, ২২:০১আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৮, ২২:০৩

জাতীয় সংসদ (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সোমবার (২২ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১৮’ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। এতে ইয়াবা (অ্যামফিটামিন), সিসাসহ সব ধরনের মাদককে নতুন বিলে যুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বিলটি উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুই দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

এর আগে ৮ অক্টোবর প্রস্তাবিত আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রস্তাবিত আইনে ইয়াবা ৫ গ্রামের কম হলে এক থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ইয়াবার পরিমাণ ৫ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বিলে মাদককে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সব ধরনের মাদককে প্রস্তাবিত নতুন আইনে কভার করবে না। যেকোনও ধরনের মাদক কোনও না কোনোভাবে তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

খসড়ায় মাদকাসক্তের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শারীরিক বা মানসিকভাবে মাদকদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি অভ্যাসবশে মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা সেবনকারী ব্যক্তি।

মাদকের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, স্থানান্তর, আমদানি, রফতানি, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলামকরণ, ধারণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, সেবন, প্রয়োগ, ব্যবহারকে এ আইনে অপরাধ গণ্য করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনে সিসার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের ভেষজ নির্যাস সহযোগে দশমিক ২ শতাংশের ঊর্ধ্বে নিকোটিন এবং এসএস ক্যানেল মিশ্রিত উপাদান।

প্রস্তাবিত আইনের ৯ ধারায় বলা আছে, অ্যালকোহল ছাড়া অন্যান্য মাদকদ্রব্যের উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহার হয় এমন কোনও দ্রব্য বা উদ্ভিদের চাষাবাদ, উৎপাদন, বহন, পরিবহন বা আমদানি–রফতানি, সরবরাহ, বিপণন, গুদামজাত, সেবন বা ব্যবহার, অর্থ বিনিয়োগ বা পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না।

বিলের ৩৬ ধারায় বলা আছে, কোনও ব্যক্তি আইনের এই বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, পারমিট ছাড়া কোনও ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করতে পারবেন না। চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন বা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনও মুসলমানকে অ্যালকোহল পানের পারমিট দেওয়া যাবে না।

তবে মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর তাড়ি ও পঁচুই এবং পার্বত্য জেলা বা অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি করা মদ পান করার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।

২৪ ধারায় বলা আছে, তদন্ত কর্মকর্তার যদি এই মর্মে সন্দেহ হয় যে, কোনও ব্যক্তি শরীরের অঙ্গ–প্রত্যঙ্গে মাদকদ্রব্য লুকিয়ে রেখেছেন, তাহলে ওই কর্মকর্তা সন্দেহজনক ব্যক্তির শরীরে এক্স–রে, আলট্রাসনোগ্রাম, অ্যান্ডোসকপি এবং রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

৩৩ ধারায় বলা আছে, কোনও ব্যক্তি কোনও মাদকদ্রব্যের  সঙ্গে জড়িত থেকে অবৈধ অর্থ ও সম্পদ  সংগ্রহে লিপ্ত রয়েছেন; মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার এমন সন্দেহ হলে তার ব্যাংক হিসাব বা আয়কর পরীক্ষার প্রয়োজনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

প্রস্তাবিত আইনে কোনও ব্যক্তি কোনও অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে, সাহায্য করলে বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে তারও সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ, সরবরাহ, মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও একই ধরনের শাস্তি পেতে হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য ও মাদকদ্রব্যের উপজাত ব্যাপকভাবে অবব্যবহৃত হচ্ছে। এসব দ্রব্য কোনও কোনোটি জীবন বিধ্বংসী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিসরূপ। ইয়াবার আগ্রাসন ভয়াবহরূপে বেড়েছে। কর্মক্ষম যুব সমাজের বড় একটি অংশ ইয়াবা নামক মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। ইয়াবা ব্যবসার জন্য শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন। ‘সিসা বার’-এর অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম নৈতিক অবক্ষয়সহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া মাদক সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার আরও সম্প্রসারণ প্রয়োজন। মাদক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি এই ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক ও অর্থলগ্নকারীদেরও আইনের আওতায় আনা সময়ের দাবি। তাই মাদকের ভয়াবহ আগ্রসন থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতেই এই বিলটি আনা হয়েছে।

 

/ইএইচএস/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা