মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন ও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য প্রস্তুত মিয়ানমার। আগামী ১৫ নভেম্বর ( বৃহস্পতিবার) থেকে তাদের প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হবে। আজ সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা নিশ্চিত করেন।
এর আগে বিকালে আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে সম্মত হয়ে সম্মতিপত্র পাঠায় মিয়ানমার। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে একটি নোট ভার্বালের মাধ্যমে এ সম্মতি জানানো হয়।
এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করছে মিয়ানমার। উভয় দেশের পদক্ষেপ ও মিয়ানমারের চূড়ান্ত সম্মতি অনুযায়ী প্রথম ব্যাচে ৪৮৫টি পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা ফেরত যাবেন।
এ ব্যাপারে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত বলেন, ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা প্রথম দলে ফেরত যাবে। প্রতিদিন দেড়শ করে ১৫ দিনে এসব রোহিঙ্গা দেশে ফিরবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চলতে থাকবে।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখন পর্যন্ত ভারত রাখাইনে ২৮৫টি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে এবং চীন এক হাজার বাড়ি তৈরির সরঞ্জাম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে গণহত্যা, নিপীড়ন, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে আসছে দেশটির সেনাবাহিনী ও তাদের মদতপুষ্ট বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কয়েকটি গোষ্ঠী। ফলে ধারাবাহিকভাবে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিলেও ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে আহ্বান জানায়। সারা বিশ্বে নিন্দিত এ ঘটনায় চরম সমালোচিত হয়ে চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আলোচনায় সম্মত হয় মিয়ানমার। পরে তালিকা সরবরাহ ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে দেশটির সামরিকবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট সরকার। সরকার তাতেও রাজি হলে রোহিঙ্গাদের তালিকা সরবরাহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠকে মিলিত হন।
সর্বশেষ গত ৩০ অক্টোবর মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট শ ঢাকায় এসে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেন। এরপর সাংবাদিকদের মিন্ট শ বলেন, ‘আমাদের দুইপক্ষেরই রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে এবং আমরা দুই পক্ষই দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই।’ সেদিন ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখটি নির্ধারণ করে মিয়ানমারের এই কর্মকর্তা। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা রাখাইনে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এরমধ্যে রয়েছে সেখানকার পুলিশ এবং জনগণকে সচেতন করা, যাতে রোহিঙ্গারা বৈষম্যের শিকার না হয়।’
এই সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা ছাড়াও আগে থেকেই আরও তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে আসছে। বর্তমানে সাড়ে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর চাপ সইতে হচ্ছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বাংলাদেশকে।
আরও পড়ুন: পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গারা!