X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেন শুরু হলো না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন?

শেখ শাহরিয়ার জামান, কক্সবাজার থেকে
১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:৩৭আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:০৬





রোহিঙ্গা (ছবি: ফোকাস বাংলা) দশকের পর দশক বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গারা। বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগসুবিধা; শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ কোনও ধরনের মৌলিক অধিকার তারা ভোগ করতে পারে না। এমনকি বিয়ে করতে গেলেও অনুমতি নিতে হয় মিয়ানমার সরকারের। এরপরও মাটি কামড়ে পড়ে ছিল বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভূমি রাখাইনে। কিন্তু যখন গণহত্যা, ধর্ষণসহ ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু হলো, তখন আর পালিয়ে আসা ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় থাকলো না।


বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পরে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে ঢাকা। অবশেষে ১৫ নভেম্বর তাদের ফেরত যাওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়। গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ সংস্থা আপ্রাণ চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি করাতে পারেনি।
গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার (১৩ থেকে ১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত মোট ৬৭টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা। একটি পরিবারও ফেরত যাওয়ার পক্ষে মত দেয়নি।
রোহিঙ্গাদের যেসব উদ্বেগ সবচেয়ে প্রকট তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, জাতীয় ভেরিফিকেশন কার্ড, জীবনযাপনের ব্যবস্থা, চলাচলে স্বাধীনতা, সেটেলমেন্ট পরিকল্পনা এবং নাগরিকত্ব। এর কোনও ক্ষেত্রেই মিয়ানমার তাদের সুস্পষ্ট কোনও আশ্বাস দেয়নি।
নিরাপত্তা ও সুরক্ষা
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। শুধু তা-ই নয়, তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণকে ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে করে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এর মধ্যে দুই দফা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আলোচনা হয়েছে এবং উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা তাদের দেওয়া হয়নি।
জাতীয় ভেরিফিকেশন কার্ড
এই কার্ডের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের ঘোরতর আপত্তি আছে। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাথমিকভাবে এটি গ্রহণ করতে হবে, সেটি জানিয়ে দিয়েছে। এই কার্ড গ্রহণ করলে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব না পেলেও অনেক ধরনের সুবিধা পাবে— এ ধরনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় রোহিঙ্গারা।
জীবনযাপনের ব্যবস্থা
বেঁচে থাকার জন্য রাখাইনে অনেক ধরনের কাজ করার ওপর বিধিনিষেধ ছিল রোহিঙ্গাদের। তারা ফেরত গেলে বেঁচে থাকার জন্য কী কী করতে পারবে— এ বিষয়ে তাদের সম্পূর্ণভাবে অবহিত করেনি মিয়ানমার।
চলাচলে স্বাধীনতা
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের চলাচলে স্বাধীনতা ছিল না। অনেক সময়ে তাদের বলা হয়েছে তারা তাদের গ্রামের বাইরে যেতে পারবে না। আবার অনেক সময়ে বলা হয়েছে বৃহত্তর জেলার বাইরে যেতে পারবে না। তারা চলাচলে স্বাধীনতার বিষয়ে সন্দিহান।
সেটেলমেন্ট পরিকল্পনা
গত আগস্টের পর প্রায় চার শ’র মতো গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। ফলে অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের থাকার কোনও জায়গা নেই। ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়া রোহিঙ্গারা কোথায় থাকবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ঠ কোনও পরিকল্পনা রোহিঙ্গাদের কখনও বলেনি মিয়ানমার সরকার।
নাগরিকত্ব
রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে নাগরিকত্ব সমস্যা এবং এই সমস্যা কীভাবে মিয়ানমার দূর করবে সেটি তারা কখনও রোহিঙ্গাদের জানায়নি। এর ফলে মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছে না রোহিঙ্গারা।
গত বছরের ২৫ আগস্ট তাদের ওপর সামরিক বাহিনীর নির্মম নিপীড়ন শুরু হলে তারা দলে দলে বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে আসে। গত এক বছরে সাত লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুই দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত একটি সমঝোতায় সই করে। এরপর বিভিন্ন পরিসরে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না।
রোহিঙ্গাদের ভয় তারা ফেরত গেলে আবার তাদের ওপর নির্যাতন করা হবে।
গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার আগে থেকেও আরও চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।

/এইচআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা