X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে শিশু হৃদরোগীদের জন্য কার্ডিয়াক সার্জন মাত্র ১০ জন!

তাসকিনা ইয়াসমিন
২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:৪৬আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৩

 

হার্ট দেশে শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসার সুযোগ এখনও অপ্রতুল। রাজধানী কেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় প্রান্তিক অঞ্চলের শিশু রোগীদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে বড় কথা দেশের শিশু রোগীদের জন্য কার্ডিয়াক সার্জন রয়েছেন মাত্র ১০ জন। আর শিশু কার্ডিওলজিস্ট রয়েছেন মাত্র ২০ জন। এই ৩০ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে দেশের শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এর তথ্যমতে, হৃদরোগজনিত রোগে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১৬ সালে ১৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বে হৃদরোগে মৃত্যুর দুই ভাগ হচ্ছে বাত জ্বরজনিত হৃদরোগের কারণে। বাংলাদেশে হৃদরোগে শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১০ ভাগই শিশু। দেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে ভুগছে।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে শিশুরা জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্রসহ বিভিন্ন হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। তবে এই শিশুদের চিকিৎসা এখনও পুরোপুরি ঢাকা কেন্দ্রিক। আবার ঢাকায়ও সব হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসা নেই। ২০০৭ সাল থেকে বিএসএমএমইউ আলাদাভাবে একটি ইউনিট করে এই শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছে। সেখানে রয়েছে মাত্র ১৫টি বেড।

অন্যদিকে শিশু হৃদরোগীদের বেশিরভাগেরই মা-বাবা দরিদ্র। এই দরিদ্র শিশুদের আর্থিক সহায়তায় গতবছর আট কোটি টাকা পেয়েছে বিএসএমএমইউ। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় চার হাজার শিশুর চিকিৎসা করছে এই ইউনিট।

এ অবস্থায় শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধিতে গতবছর দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে বিএসএমএমইউ ও বিভাগীয় শহরের মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ও পরিচালককে শিশুদের হৃদরোগ চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘দেশে শিশু হৃদরোগীদের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। এ অবস্থার উন্নয়নে তরুণ চিকিৎসকরা যেন আরও বেশি সংখ্যায় শিশু কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার সুযোগ পান সে লক্ষ্যে কাজ করছে বিএসএমএমইউ। ভবিষ্যতে আলাদা ইনস্টিটিউট তৈরির লক্ষ্যেও কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।’

বিএসএমএমইউ’র শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগে শিশু হৃদরোগীদের তিন উপায়ে মেডিসিনের মাধ্যমে, বিনা অস্ত্রোপচারে ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২০০৫-এর সাত এপ্রিল আমরা শিশুদের জন্য কার্ডিয়াক ক্যাথেল্যাব চালু করি। এরপর থেকে নিয়মিত শিশুদের এনজিওগ্রাম হচ্ছে। ২০০৯ সালে শিশু কার্ডিওলজি ওয়ার্ড চালু হয়। ২০১১ সাল থেকে ইকো মেশিন চালু হয়েছে। এখন আমরা রোগ নির্ণয়ের জন্য যা যা দরকার (ইসিজি, কালার ডপলার, থ্রিডি- ফোর ডি ইকো, গলার ভেতরে টিউব দিয়ে পরীক্ষা) পরীক্ষা করছি। গত বছর থেকে আমরা গর্ভকালীন শিশুর হৃদরোগ নির্ণয়ে কাজ করছি। গত ডিসেম্বরে একটা ওয়ার্কশপ করার পর থেকে আমরা এই ধরণের রোগীগুলো পাচ্ছি।’

ডা. জহিদ বলেন, ‘বর্তমানে শিশুদের এনজিওগ্রামের পাশাপাশি বিনা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর হার্টের ছিদ্র বন্ধ করার কাজ দেশেই হচ্ছে। প্রয়োজনে বেলুন দিয়ে ভাল্ব বড় করা, কোনও আর্টারি সরু হয়ে গেল বা বড় শিরা চিকন হয়ে গেল সেগুলো বড় করার কাজ এখন দেশীয় চিকিৎকরাই করছেন।’

বর্তমানে শিশু কার্ডিওলজির চিকিৎসা বিএসএমএমইউ, শিশু হাসপাতাল, বারডেম ও আর্মি হাসপাতালে খুবই স্বল্প পরিসরে চালু আছে। এখানে অ্যাডাল্ট কার্ডিয়াক সার্জনরা যে চিকিৎসা করেন সেটা একটু বড় শিশুদের জন্য প্রযোজ্যস। কিন্তু একটি শিশু জন্মের পরই বা এক মাসের মধ্যেই যে অস্ত্রোপচার করতে হয় সেই সুযোগ এখনও দেশে তৈরি হয়নি। এ অবস্থার উন্নয়নে কাজ চলছে বলে জানান ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, শিশু রোগীদের কার্ডিয়াক সার্জারি শুরু করার সুযোগ তৈরিতে সম্প্রতি ভারতের নারায়না বিশ্ব বিদ্যালয়ের সার্জন, শিশু কার্ডিওলজিস্ট, এনেসথিয়লজিস্ট ও নার্সদেরকে এনে একটি সেমিনার করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে আমাদের ধারণা ও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।

বিএসএমএমইউ’র শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে বাতজ্বর জনিত হৃদরোগ বেশি ছিল, এখন সেটা কমে এসেছে। এখন জন্মগত হৃদরোগের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সচেতনতা বাড়ছে বলে মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছে। চিকিৎসকরা আল্টাসনোগ্রামের মাধ্যমে যখন সন্দেহ করে শিশুর হার্টের সমস্যা আছে, তখন তারা ফিটাল ইকোর মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করে এবং তা সমাধানের জন্য আমাদের কাছে পাঠায়।’

তার মতে, ‘চিকিৎসার মাধ্যমে একজন বয়স্ক হৃদরোগীর সাময়িক উপশম হয়। হয়তো তিনি আরও ১০-২০ বছর বাঁচেন। তবে একটি শিশুকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা হলে সে সারাজীবন সুস্থ হয়ে বাঁচতে পারে। দুটো বিষয়ে বড় ধরণের তফাত আছে।’

বিএসএমএমইউতে ২০১৪ সাল থেকে এমডি পেডিয়াট্রিক কোর্স চালু হয়েছে। এটার উদ্দেশ্য জনবল তৈরি করা। তবে, কোর্স করছেন মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক। বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এক হাজার শয্যার নতুন হাসপাতালে শিশু কার্ডিওলজির জন্য আলাদা জায়গা থাকবে। এ ছাড়া বেতার ভবনের জায়গায় বহুতল ভবন করা হবে, সেখানে আমরা তাদের জায়গা দেওয়ার কথা ভাবছি। সেখানে শিশু কার্ডিয়াক ইনস্টিটিউট হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা বেশি সংখ্যায় শিশু কার্ডিওলজিস্ট গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। এর জন্য সামরিক হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা তরুণ চিকিৎসকদের উচ্চতর শিক্ষা দিয়ে শিশু কার্ডিলজিস্ট বা সার্জনের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে আন্তরিক।’

 

 

/টিটি/আপ-এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী