প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেগম রোকেয়া পথ দেখিয়েছিলেন বলেই আমরা নারী সমাজ এগিয়ে যেতে পেরেছি। নারীরা সাহস পেয়েছি। তার দেখানো পথ বেয়েই আজ আমরা এগিয়ে চলছি।’
রবিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ উদযাপন এবং ‘রোকেয়া পদক-২০১৮’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বেগম রোকেয়ার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যতটুকু আমরা এগুতে পেরেছি— তার পথ দেখিয়েছেন বেগম রোকেয়া। কারণ, তিনি নারী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন। একটা যুগ ছিল, যখন মেয়েদের লেখাপড়া নিষিদ্ধ ছিল। ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। আর মুসলমান মেয়েদের জন্য আরও কঠিন ছিল। কিন্তু এটা খুব অবাক কাণ্ড। তার কারণ হচ্ছে, আমরা যদি ইসলাম ধর্মটা দেখি, আমাদের ইসলাম ধর্মে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন একজন নারী। নবী (সা.) যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে যান, তখন বিবি খাদিজাই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সবাইকে তিনি পথ দেখান। নারী-পুরুষ সকলে তাকে অনুসরণ করেন। আর ইসলাম ধর্মই এমন ধর্ম যেখানে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা আছে, যেটা অন্য কোনও ধর্মে নেই। একমাত্র ইসলাম ধর্মেই আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমাজে নারীদের প্রতিবন্ধকতা ছিল। নারী সমাজ পড়াশোনা করতে পারবে না। স্কুলে যেতে পারবে না। লেখাপড়া শেখা খুবই অন্যায় বলে মানা হতো। কিন্তু সেই অচলায়তন ভেদ করেছিলেন বেগম রোকেয়া। তিনি নিজে লেখাপড়া শিখেছিলেন। তার স্বামী তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। তার কাছ থেকেই আমরা শিখেছি এবং তার যে স্বপ্ন ছিল—তিনি স্বপ্ন দেখতেন মেয়েরা একদিন জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারী সম্রাজ্ঞী হবে। কাজেই তিনি শুধু নিজেই নিজেকে তৈরি করেননি, তিনি বলতে গেলে আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন এবং পথ দেখিয়ে গেছেন বলেই আজকে আমরা নারী সমাজ এগিয়ে যেতে পেরেছি, সাহস পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বৃথা যেতে দেইনি, দেবো না। আজ তার স্বপ্নের পথ ধরেই দেশের মেয়েরা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সচিব, মেজর জেনারেল সবই হচ্ছে। আমরা বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি। অধিকার কেউ দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। মেয়েদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘‘২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা দেশে নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা ‘নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করছি।’ তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নির্মূলের জন্য ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী শিক্ষার প্রসারে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। উপবৃত্তি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ এবং জেন্ডার সমতায় সরকার প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে। এর ফলে নারীরা আজ কর্মমুখী, বেড়েছে নারীদের কর্মসংস্থান। নারীরা হয়েছে সাবলম্বী।’’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েরা আজ সব স্তরে সুযোগ পাচ্ছে। নারীরা আজ পুলিশ, বিজিবি, এসপি, ডিসি, সচিব, বিচারপতি, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নিয়োজিত আছেন, শান্তি রক্ষা মিশনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। আজ প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী, উপনেতা সবাই নারী।’
অনুষ্ঠানে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নারীদের চিরস্মরণীয় অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
