X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনা করেই ভোটে নিরাপত্তার পরিকল্পনা

এমরান হোসাইন শেখ
০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৪০আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৪১

ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনা করেই ভোটে নিরাপত্তার পরিকল্পনা এবারের সংসদ নির্বাচনে ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনা করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র, নির্বাচনি কর্মকর্তা ও ভোটার নিরাপত্তায় এই বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কমিশন। দেশের ৩০০টি নির্বাচনি এলাকাকে সাধারণ এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকা এবং উপকূলীয়, দুর্গম ও পার্বত্য—এই তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ভোটকেন্দ্রের পাহারায় সাধারণ এলাকার একজন পুলিশসহ ১৪ জন সদস্য, মেট্রোপলিটন এলাকায় তিনজন পুলিশসহ ১৫জন এবং দুর্গম, উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকায় দুই জন পুলিশ সদস্যসহ ১৪জন সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে ইসি। এছাড়া, এবার প্রথমবারের মতো গ্রামপুলিশ সদস্যদের ভোটকেন্দ্রের পাহারায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে, ভোটকেন্দ্রের এই নিরাপত্তা ছাড়াও কেন্দ্রের বাইরে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন।

এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আচরণবিধি প্রতিপালনে দেড় হাজারের বেশি জুডিসিয়াল ও নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয় লাখের বেশি সদস্য মাঠে নামছেন।

সূত্র জানায়, ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আগামী ১৩ ডিসেম্বর বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যেমে ভোটের আইনশৃঙ্খলা পরিকল্পনা জানিয়ে দেবে।

এরআগে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আদলে এবারে নির্বাচনের ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে, সেনা ও অন্যান্য বাহিনী মোতায়েনে সময়ের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আসছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেওয়ায় ভোটগ্রহণ চরম প্রতিযোগিতামূলক হবে। কিন্তু ভোট বর্জনে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় সহিংসতার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হবে ধরে নিয়েই নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ধারাবাহিকতায় বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এবার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ভোটের আগে-পরে ১০দিন দায়িত্ব পালন করবেন।  সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আগামী ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নামবেন এবং ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা নির্বাচনি এলাকায় থাকবেন। এদিকে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান সদস্যরা ২৬ ডিসেম্বর মাঠে নেমে ভোটের পরদিন ১ জানুয়ারি থাকবেন।

ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট এবং সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান করবেন। নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য প্রয়োগকারী সংস্থা সহায়তা দেওয়া দেবে। রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং অফিসার না চাইলে তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোটগননা কক্ষে যাবে না।

এরবাইরে ভোটের আগের দিন (২৯ ডিসেম্বর) দেশের তিনশত সংসদীয় আসনে ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামবেন। তারা ভোটের পরও দুই দিনসহ সবমিলিয়ে চারদিন মাঠে থাকবেন।

ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত ভোটকেন্দ্রের পাহারায় থাকবেন ১৬জন সদস্য। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য তিনজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২জন ও একজন গ্রাম পুলিশ। এসব এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রেগুলোয় পুলিশের সদস্য সংখ্যা দুই জন বাড়িয়ে ১৮জন রাখা হবে। অন্যদিকে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অবস্থিত ভোটকেন্দ্রগুলোয় একজন পুলিশ সদস্যসহ ১৪জন ও ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ ১৫জন সদস্য রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দুর্গম ও দ্বীপাঞ্চল এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোয় দুই জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্যসহ ১৫জন ও ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ সদস্য একজন বাড়িয়ে ১৬জন মোতায়েন করা হবে।

ভোটারদের নিরাপত্তায় আরও যা থাকবে

ভোটের দিনে ভোটারদের যাতায়াতের পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটারদের যাতায়াতের পথ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহল দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। ঝুকিপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হতে পারে। ভোটকেন্দ্রে ফল প্রকাশের পর তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিরাপদে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি মালামাল ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের যাতায়াতে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হবে। ভোটের দিন যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

প্রথমবারের মতো কেন্দ্রে থাকবে গ্রামপুলিশ

 ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রথমবারের মতো নির্বাচনে গ্রামপুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার) সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ৪৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ১০ জন করে মোট ৪৫ লাখ গ্রামপুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাদের ভোট গ্রহণের আগের দিন ও ভোটের দিন কেন্দ্রের পাহারায় রাখা হবে।

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ম্যাককিনি‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
তৃতীয় ওয়ানডেশ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার