X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘এখন খেজুরগাছ নেই, কিন্তু জামায়াত আছে’

এস এম আববাস
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৫০আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৫০





রমিজ উদ্দিন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কত না আয়োজন থাকে দেশজুড়ে। তবে ষাটোর্ধ্ব রমিজ উদ্দিনের শ্রদ্ধা জানানোর পন্থা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। এই ভিন্নতা তার বাড়তি আয়েরও একটা উৎস বটে। তবে আয়টা গৌন, জাতীয় পতাকা বিক্রি করে খুঁজে পান আনন্দ। প্রতিবছর ডিসেম্বরে ঢাকায় জাতীয় পতাকা ফেরি করে বিক্রি করেন রমিজ উদ্দিন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের গেটে কথা হয় রমিজ উদ্দিন সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘শুধু আয়ের জন্য নয়, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালবাসার জন্যও পতাকা বিক্রি করি। ৪০ বছর ধরে বিজয় দিবসের সময় বিক্রি করি জাতীয় পতাকা।’
আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে রমিজ উদ্দিন জানান, তার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বহেরাতলা গ্রামে। দেশ স্বাধীনের পর পরই চলে আসেন ঢাকায়। বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের মার্কেটের সামনে পানের দোকানদারি করেন। প্রতি বছরের মতো এবারও এসেছেন রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে। প্রতি বছর প্রায় ১০ দিন জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এবার বেচা-বিক্রি ভালো না। অন্যবার প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার পতাকা বিক্রি হলেও এবার অর্ধেকও হচ্ছে না। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কারণে এই অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন রমিজ উদ্দিন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পরদিন শনিবার থেকে শাহবাগে পতাকা বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।
জাতীয় পতাকা ফেরি করে বিক্রি করেন রমিজ উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিনা জানতে চাইলে রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করিনি। তখন বয়স ১৫/১৬ বছর হবে। মিলিটারি আসার কথা শুনলেই সবাই পালাতাম। পালিয়ে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দুধ খাইয়ে আসতাম। দাঁড়িয়ে দুধ খেয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও আবার চলে যেতেন।’
পাকিস্তানিদের তাণ্ডবের উল্লেখ করে রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে প্রতিদিনই একবার/দুইবার পালিয়ে থাকতাম। একবার পানির মধ্যে ডুব দিয়ে নাক-মুখ বের করে চুপ করে জীবন বাঁচিয়েছি। দীর্ঘ সময় পর যখন মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে, তারপরও পানির মধ্যে ডুব দিয়ে ছিলাম অনেক ক্ষণ। পরে পানি থেকে উঠে বাড়িতে যাই।’
জাতীয় পতাকা বিক্রির আগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর ঢাকা এসে সবার সঙ্গে স্বাধীনতার আনন্দ করতে পতাকা বিক্রি শুরু করি। আনন্দ পাওয়ার জন্যই বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা বিক্রি করা শুরু করি। জাতীয় পতাকা সবাই কিনতো তখন থেকেই। সবাই ভালোবাসতো। আমারও ভালো লাগতো জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে। অর্থ কষ্টে ঢাকায় কতকিছু করেছি, কিন্তু পতাকা বিক্রি করা ছাড়িনি। আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি, তাই এখন পতাকা বিক্রি করে আনন্দ পাই।’
নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রমিজ উদ্দিন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্বাচনে আমরা ছিলাম নৌকার পক্ষে। আর রাজাকার-জামায়াতরা ছিল খেজুরগাছের পক্ষে। পরে তো কত পার্টি হয়েছে।’ আক্ষেপ করে রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘শুধু খেজুরগাছ নেই, কিন্তু জামায়াত ঠিকই আছে।’

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা