X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশ ফেরত মানসিক ভারসাম্যহীন ও অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিকদের দায় কার?

সাদ্দিফ অভি
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৬আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:০১

বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরত এক নারী কর্মী

সৌদি ফেরত নারী শ্রমিক শেফালী আক্তারের (ছদ্মনাম) প্রায় একবছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সৌদি আরব। প্রথম দিকে ঘরের কাজ করলেও পরবর্তীতে কফিলের (নিয়োগকর্তার) আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান তিনি। শেফালী অভিযোগ করেন— বাসায় কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝেই কফিল  ‘খারাপ’ কাজে বাধ্য করতো তাকে। রাজি না হলে শারীরিক নির্যাতন করতো। এরইমধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কফিল তার গর্ভপাত করায় বলে দাবি করেন শেফালী।

কফিলের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দেন শেফালী। পুলিশ তাকে প্রথমে ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে এবং সেখান থেকে পরে দেশে পাঠিয়ে দেয়।  

শেফালী আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কী যে খারাপ খারাপ কাজ করতো তারা। রাজি না হইলে ইচ্ছামতো মারতো। একবার অসুস্থ হইয়া পরায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে জানতে পারি, আমার প্যাটে তিন মাসের বাচ্চা। পরে কফিল ওষুধ খাওয়ায়ে বাচ্চা ফ্যালায় দেয়। এরপরও অত্যাচার করতো আমারে। এক মাস আগে আমি কফিলের বাড়ির থেইকা পালায়ে পুলিশের কাছে ধরা দেই। পুলিশ আমারে প্রায় সপ্তাহখানেক জেলে রাখে। এরপর সফর জেলে (ডিপোর্ট সেন্টারে) দিয়া দেয়। সেখান থেকে আমারে দেশে পাঠাইসে।’ 

অন্যদিকে, জর্ডান থেকে অসহায় অবস্থায় গত ১৯ অক্টোবর দেশে ফিরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে এক কিশোরী। এই কিশোরীর বয়স ১৫ বছর হলেও পাসপোর্টে তার বয়স লেখা ছিল ২৭ বছর। ২০১৭ সালের ১২ জুন কাজের উদ্দেশে জর্ডান পাঠায় তার দূর সম্পর্কের এক চাচা। কিন্তু দেশে ফিরে এসেই সেই চাচার কাছে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে।

খোঁজ নিয়ে আরও  জানা যায়, আর্মড পুলিশ তাৎক্ষণিক বিষয়টি বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ককে জানায়। সেখান থেকে বিষয়টি জানতে পেরে ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন ওই কিশোরীকে নিয়ে যায় আশকোনায় অবস্থিত ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের সেফ হোমে।

আল আমিন নয়ন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মেয়েটিকে আমরা এখানে নিয়ে আসি, কিন্তু সেদিনই সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। প্রথমে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, সেখানেও মেয়েটি দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরদিন ২১ অক্টোবর তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করি। তখন থেকে গত ৩০ দিন মেয়েটি ব্র্যাক অভিবাসন প্রোগ্রামের তত্ত্বাবাধায়নে ছিল।    

আত্মহত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া ওই কিশোরীর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভর্তির পর দিন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে কর্তৃপক্ষ। বিদেশে থাকা অবস্থায় সে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিদেশে থাকা অবস্থায় চাচার কাছে টাকা পাঠিয়েছিল। কিন্তু দেশে ফেরত আসার পর চাচা তাকে নিতে চান নাই। তিনি টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকৃতি জানান। এটাও ওই মেয়েটির জন্য বড় ধাক্কা। সবকিছু মিলিয়ে সে এসব ধাক্কা সামলাতে পারেনি। এখন ধীরে ধীরে কিছুটা সুস্থ হয়েছে সে। সুস্থ হওয়ার পর তার ঠাঁই হয় সেই চাচার কাছেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু এবছরেই বিদেশ থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ১৭ জন, এর মধ্যে একজন পুরুষ এবং ১৬ জন নারী কর্মী। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য মতে, বিদেশ থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফিরে আসা নারীদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া, বিদেশে যৌন নির্যাতনের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে দেশে ফিরেছেন পাঁচ জন নারী। তাদের মধ্যে তিন জন এসেছেন সৌদি আরব থেকে। এসব নারীকে সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে আসছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় দেখতে হবে যে, আমরা তো জানি আমাদের মেয়েরা বিদেশে কাজে যাচ্ছে। কালকে যদি আবারও একটি মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ফিরে আসে, তার জন্য আমাদের মেকানিজমটা কী? আমাদের কৌশলটা কী হবে তার জন্য? আমাদের কী তা আছে? আমাদের তো তা নাই। কালকেও যদি কোনও মেয়ে এভাবে ফিরে আসে, তাকে একইভাবে আমাদের হাসপাতালে নিতে হবে। এভাবে আমরা কতদিন করবো? আমি মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্থায়ী কৌশল অবলম্বন করা উচিত। একটা মেয়ে নিপীড়িত হয়ে দেশে ফিরে আসলে সে কোথায় যাবে, কোথায় চিকিৎসা করাবে, খরচ কে দেবে— এটার একটা স্থায়ী মেকানিজম থাকা উচিত। এটা ঠিক করতে না পারলে ভবিষ্যতে বিপদ বাড়বে। কারণ, আমাদের টাকায় কতজনের ব্যবস্থা জন্য করবো। আমরা এপর্যন্ত ১৭ জন পেয়েছি, যারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।এই উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে,সরকার যদি চায় এক্ষেত্রে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করবো।’  

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহান অভিবাসী দিবস উপলক্ষে মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন— বিদেশ ফেরত অসুস্থ, আহত ও অসহায় নারীসহ সব অভিবাসী কর্মীদের উন্নয়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘আমি মনে করি, একসঙ্গে কাজ করার যে প্রস্তাব, সেটা খুবই চমৎকার। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে ফেরত আসাদের সংকটটা অনেকভাবে দূর করা সম্ভব।’

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা