সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পরে এবারের নির্বাচন। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি। তাই উত্তেজনা একেবারেই নেই, তা বলবো না। কিছুটা উত্তেজনা অবশ্যই আছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়—‘নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা হচ্ছে, নানা ঘটনা ঘটছে’—এগুলো কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা।
নির্বাচনি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আছে বলে আমি মনে করি না। প্রার্থী, সমর্থকসহ সবার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা সংযতভাবে প্রচারণা বা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন, যেন নির্বাচনি পরিবেশ বজায় থাকে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।’
নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘একই দিনে সারা দেশের ৩০০ আসনে নির্বাচন পরিচালনা করাটাই একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমরা আশা করছি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবো। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এবার বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে কেন্দ্রভিত্তিক নিয়ন্ত্রণটা কেন্দ্রীয়ভাবে করছি।’
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে এই কমিশনার বলেন, ‘কন্ট্রোল রুম ইতোমধ্যে স্থাপন করেছি। সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীর সদস্যরা এখানে কাজ করতে শুরু করেছেন। এখান থেকেই আমরা সব আসনের রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে এফএম রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সার্বিক দিক থেকে আমাদের প্রস্তুতি ভালো। আমরা অলরেডি প্রস্তুত। এই মুহূর্তে যতটুকু প্রস্তুতির দরকার, তা সম্পন্ন হয়েছে। আদালতের আদেশে শেষমুহূর্তে যদি কোথাও ব্যালট পেপার পাঠানোর দরকার হয়, সেটার লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য সশস্ত্র বাহিনী থেকে হেলিকপ্টার স্ট্যান্ডবাই আছে, সময়মতো ওই নির্বাচনি এলাকায় ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়ার জন্য।’
সেনাবাহিনী নিয়োগ প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিআরপিসির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারার বিধান অনুসারে সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে। এর বাইরে তাদের কাজ করার কোনও সুযোগ নেই। এবার সেনাবাহিনী মোতায়েনে বাড়তি কোনও নির্দেশনা নেই। আমরা কখনোই বলিনি সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। আমরা যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছি, সেখানে সশস্ত্র বাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স নয়। অন্যরা কেন্দ্রের বাইরেও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। তারা নির্বাচনে মোতায়েন আছে। কোনও পরিস্থিতি যদি অন্যান্য বাহিনী সামাল দিতে না পারে, তখন সশস্ত্র বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে গিয়ে কাজ করবে।’ তিনি বলেন, ‘কোস্টাল এরিয়াগুলোতে নেভি কাজ করবে। একেবারে সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা কখনও কাজ করে না। সীমান্তের ন্যূনতম দূরে তারা কাজ করবে। সীমান্তের এই অঞ্চল বাদে সারাদেশে তারা কাজ করবে। যেসব জায়গায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি ব্যর্থ হবে, সেসব স্থানে সেনাবাহিনী কাজ করবে। পুলিশিং কাজ কখনোই সশস্ত্র বাহিনী করবে না।’
বিভিন্ন স্থানে হামলার তদন্ত বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘এসব ঘটনায় নির্বাচনি তদন্ত কমিটি তদন্ত করে পাঠাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সত্যতা পেয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সত্যতা পায়নি। যেসব ক্ষেত্রে সত্যতা পেয়েছে, সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগের সত্যতা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘অনেক অভিযোগের ক্ষেত্রে সত্যতা পাওয়া যায়নি। যেগুলোর ক্ষেত্রে সত্যতা পাওয়া গেছে, দৈনিক ভিত্তিতে তার রিপোর্ট পাচ্ছি।’ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।