X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছবি দেখে ছাঁটাই!

উদিসা ইসলাম
২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৬আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৬

পোশাক শ্রমিক

মজুরি কাঠামো পুনর্বিবেচনার দাবিতে করা আন্দোলনের পর পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এখনও কাজে ফিরতে পারেননি। অজ্ঞাতনামা মামলার ভয়, কারখানার গেট থেকে ছবি দেখে বিদায় করে দেওয়া থেকে শুরু করে আচমকা কিছু কারখানা বন্ধের ঘোষণায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। গত ডিসেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কেবল একটি সংগঠনের হিসেব বলছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার, এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১১জন, জামিন পেয়েছেন ১জন।

শ্রমিকরা বলছেন, ছবি দেখে দেখে তাদেরকে কাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যেসব ফ্যাক্টরিতে কোন ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি সেসব জায়গাতেও শ্রমিকদের জোর করে কাজ থেকে বিদায় করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকেরা। তবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, এগুলো অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত এবং এরা টাউট। আর বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) বলছে, এধরনের কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর থেকে চার হাজারের মতো শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে তিন হাজারই হয়েছে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে করা আন্দোলনের পর। তাদের তথ্য মতে, ছাঁটাইয়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে। এমনকি অজ্ঞাতনামা করে মামলা করায় অনেক শ্রমিক এলাকাতেও থাকতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন তারা। তাদের তথ্য মতে নিশ্চিন্তপুর, বাইপাইল, সাভার বাজার, জিরানিবাজার, আশুলিয়া বাসস্ট্যাণ্ড, গাজীপুর, কোনাবাড়ি, জামগড়া এলাকায় ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক সংখ্যা ৩ হাজার ৫০।

এ আর জিন্স থেকে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক সাকিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখনও রোজই আমরা ছাঁটাইয়ের খবর পাচ্ছি। আজকেও ৬ জন ছাঁটাই হয়েছে, গতকাল ১১জনকে বের করে দিয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি ২ শ’ ৪০ জন বের করে দিয়েছে। বেতন বাড়ানোর যে ধর্মঘট হয়েছিল সেখানে আমরা ভাঙচুর করি নাই। কিন্তু এখন অফিসে ছবি দিয়েছে শ্রমিকদের, সেগুলো দেখে দেখে বের করে দিচ্ছে। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ভেতরে নিয়েছে কিছু শ্রমিককে। আমাকেও ভেতরে নিয়েছিল, তারপর জোর করে আইডি রেখে বের করে দিয়েছে। মামলার ভয়ে আমরা এলাকায় থাকতে পারছি না।

কেন এলাকায় থাকা যাচ্ছে না প্রশ্নে তিনি বলেন, আন্দোলন করার জন্য পুলিশ দিয়ে হয়রানি করানো হচ্ছে। বাসায় না পেলে পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমাদের এখানে মামলায় ৬২ জনের নাম আছে বলে শুনেছি, কেউ বাসায় ঘুমাতে পারছে না। কারখানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও টেলিফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি।

আশুলিয়া এলাকার ছাঁটাই হওয়া আরেক শ্রমিক মো. আবু রায়হান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা কোনও উচ্ছৃংখলা করিনি, মালিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি। অফিসের ভেতরে যারা নেতা তাদের পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। নিলুফার আখতার নিলুফা, ফারুকসহ আরও কয়েকজন, তারা নেই। তিনি আরও বলেন, ৩ শ’ ৩০ জন শ্রমিকের ছবি ফটোকপি করে গেটে টাঙায়ে দিছে। আমরা আর কোথায় চাকরি পাবো?

কোনাবাড়ির রেজাউল অ্যাপারেলস এর ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক ইসমাইল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ফ্যাক্টরিতে তালা লাগিয়েছে সপ্তাহখানেক হয়ে গেল। গেজেট হলে আমরা দেখি কোনও সিনিয়র জুনিয়র নাই। শ্রমিকরা এই বেতন মানে নাই, তাতে করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, মালিক এখন কোনও কথা বলে না। কারখানা অনির্দিষ্টকালীন বন্ধ লিখে দিয়েছে শুধু।

কবে নাগাদ খুলবে জানেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, খুলবে কিনা জানি না, সমস্যা হলো, রেজাউল সাহেবের নামে ডাইরেক্ট অর্ডারে কোনও কাজ নাই। গোল্ড স্টার গ্রুপের সুমী ম্যাডামের নামে যে কাজ আসে সেটা এখানে করা হয়।

এ ব্যাপারে টেলিফোনে রেজাউল অ্যাপারেলস এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউ ফোন ধরেননি।

গার্মেন্টস শ্রমিক আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই ঘটনায় মোট সাতটি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলা থাকায় শ্রমিকরা এলাকায় থাকতে পারছে না দাবি করেছে জানানো হলে তিনি বলেন, এগুলো কল্পনাপ্রসূত কথা। ওরা চাকুরিচ্যুত টাউট। ওরা সবাই পলাতক।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটি ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না। রোজই আমাদের কাছে এমন ছাঁটাই সংবাদ আসছে, শ্রমিকরা আসছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, অজ্ঞাতনামা নাম দিয়ে মামলা হওয়ায় শ্রমিকরা এলাকাছাড়া।  অনেকেই কারখানায় যোগ দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ন্যায্য অধিকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার কারণে ছবি ধরে খুঁজে খুঁজে চাকরি হারাতে হলে এই শ্রমিক তার দাবি কোথায় জানাবে?

আন্দোলনের আগে বা পরে যতবার মিটিং এ বসা হয়েছে ততবারই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে মালিকেরা, দাবি করে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি লীমা ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  আমরা নির্দোষ শ্রমিকের কিছু যেন না হয় সে শর্ত জুড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন নির্দোষ অনেকের হয়রানি করার অভিযোগ পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এমনকি মালিকের লোক বাসায় বাসায় গিয়ে হুমকি দিচ্ছে এমন অভিযোগও আমাদের কাছে এসেছে। এখন আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তালিকা করছি, সংবাদ সম্মেলন করবো।

এদিকে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এধরনের কোনও অভিযোগ কোনও শ্রমিক সংগঠন আমাদের জানায়নি। এমন হওয়ার কথা না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কোনও ঘটনা আমাদের জানা নেই। যদি এমন ঘটেই থাকে শ্রমিক সংগঠনগুলো কেন জানাবে না।

 

 

/ইউআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
ফটোকপি দোকানের কর্মচারী, জেলে, রাজমিস্ত্রি তৈরি করতো জাল টাকা
ফটোকপি দোকানের কর্মচারী, জেলে, রাজমিস্ত্রি তৈরি করতো জাল টাকা
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করছে কিয়েভ
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করছে কিয়েভ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি