সংশিষ্টদের ভুলে অনিয়মিতদের সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য তাদের খাতা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। একইসঙ্গে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এর আগে চুন্নু তার সম্পূরক প্রশ্নে শরিবার (২ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি পরীক্ষায় ১৮টি কেন্দ্র অনিয়মিতদের সিলেবাসে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে জানতে চান, ১৮টি কেন্দ্রের কয়েকশ’ নিয়মিত ছাত্রকে অনিয়মিত ছাত্রদের সিলেবাসের প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। ওই সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি নেয়নি। ঘটনায় কয়েকজন কেন্দ্র সচিবকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এতগুলো জায়গায় এই ভুলটা কেন হলো, এ জন্য কে দায়ী আর এই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে? সারাদেশের মানুষ এটি জানার জন্য অপেক্ষায় আছেন।
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নটি অত্যন্ত যৌক্তিক। গতকাল (শনিবার) থেকে সারাদেশে যে এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তাতে কিছু জেলার কয়েকটি কেন্দ্রে এই সমস্যাটি হয়েছে। যেটি হয়, পরীক্ষায় অনিয়মিত কিছু পরীক্ষার্থী থাকে। তাদের প্রশ্নপত্র তাদের সময়কার সিলেবাসে করা হয়। যারা নিয়মিত তাদের নতুন সিলেবাস অনুযায়ী হয়। নিয়মিত ও অনিয়মিতদের প্রশ্নপত্র আলাদাই যায়। নির্দেশনা থাকে নিয়মিত ও অনিমিত শিক্ষার্থীরা ভিন্ন জায়গায় বসবে। যাতে সহজে তাদের মাঝে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা যায়। যেখানের কেন্দ্রগুলোতে এই সমস্যাটা হয়েছে সেখানকার কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই সব কেন্দ্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের যারা অনিয়মিতদের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের খাতা ভিন্নভাবেই দেখা হবে। যাতে কোনোভাবেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর যাদের ভুলের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে ইতোমধ্যে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ফখরুল ইমামের সম্পূরক এক প্রশ্নের জবাবে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘অনিয়মিতদের সিলেবাসটি পুরোটাই কিন্তু ভিন্ন নয়। সিলেবাসে খানিক জায়গায় ভিন্নতা আছে। পরীক্ষায় যে প্রশ্ন এসেছে তার সব কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিলেবাসের বাইরে ছিল না। খুবই অল্প জায়গায় ভিন্নতা আছে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষার ব্যবস্থা নিলে তো অন্য যারা পরীক্ষা দিয়েছে সেই একই প্রশ্নে তারা পরীক্ষা দিতে পারলো না। কারণ, সেই প্রশ্নে তো ইতোমধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কাজেই নতুন পরীক্ষা হলেও ভিন্ন প্রশ্নে তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। সেখানেও কিন্তু সমান মানদণ্ড দেওয়া যাবে না। ঘটনার বাস্তবতায় সব থেকে ভালো সমাধানটিই আমরা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এর থেকে ভালো, যুক্তিযুক্ত ও একই মানদণ্ডে বজায় রেখে অন্য কিছু করার পরামর্শ থাকলে সেটা আমাদের দেওয়া হলে বিবেচনা করা হবে।’
ভোলা-২ আসনের সরকারি দলের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামো প্রণয়নের বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।